এ যেন ঠিক সুকুমার রায়ের ‘হ য ব র ল’, ছিলো রুমাল হয়ে গেলো বেড়াল। এভাবেই উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা রামবীর সাংবাদিক থেকে হয়ে গেলেন চাষি। বর্তমানে নিজের ছাদ থেকে ঝুলবারান্দা জুড়ে গোটাটাই শুধু গাছ গাছালি। আর এই থেকেই বছরে প্রায় ৭০ লক্ষ টাকা আয় করেন তিনি। প্রসঙ্গত, তথাকথিত চাষাবাদের নিয়ম থেকে বেরিয়ে হাইড্রোপনিকস পদ্ধতিতে ফসল ফলিয়ে এহেন নজরকাড়া ফসল উৎপাদন করেছেন ঐ ব্যক্তি।
উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা রামবীর পেশায় একজন সাংবাদিক। কিন্তু তার জীবনে দেখা এক দূর্ঘটনার পর বদলে যায় তার জীবন। তার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর কাকা দূরারোগ্য ব্যাধি ক্যান্সার আক্রান্ত হন। চিকিৎসকরা পরীক্ষা নিরিক্ষার পর জানান, শাকসব্জি থেকে খাবারে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক মেশার ফলেই ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছেন ওই ব্যক্তি। এই ঘটনার পরেই আমূল পরিবর্তন আসে তার জীবনে।
ঠিক করেন রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ছাড়াই ফসল ফলাবেন তিনি। চাষাবাদের জন্য প্রথমে নিজের পৈতৃক জমিকে বেছে নেন। কিন্তু বাড়ি থেকে জমির দূরত্ব ৪০ কিঃমিঃ হওয়ায় না চাষের কাজ ভালো হচ্ছিলো আর না ঠিকঠাক হচ্ছিল তার সাংবাদিকতা। তাই শেষমেষ সাংবাদিকতা ছেড়ে চাষের কাজেই পুরোপুরি মনোনিবেশ করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
এরপর ২০১৭-১৮ সালে কৃষি সংক্রান্ত একটি সম্মেলনে যাওয়ার জন্য ডাক আসে দুবাই থেকে। সেই সম্মেলনেই হাইড্রোপনিকস পদ্ধতিতে চাষ করার কথা শোনেন তিনি। জানতে পারেন এই পদ্ধতির বিশেষত্ব হলো এতে মাটি ও কীটনাশক ছাড়াই দূর্দান্ত ফলন ফলানো যায়। শুধু তাই নয় এতে প্রায় ৮০ শতাংশ জলের খরচও কমে যায়। সম্মেলন থেকে ফেরার সময়ই সিদ্ধান্ত নেন তিনিও এবার হাইড্রোপনিকস পদ্ধতিতেই চাষ করবেন।
প্রসঙ্গত, হাইড্রোপনিক একটি অত্যাধুনিক কৃষি পদ্ধতি। অতি লাভজনক ফসলের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতিতে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে মাটির পরিবর্তে জলে গাছের প্রয়োজনীয় খাবার সরবরাহ করে ফসল উৎপাদন করা হয়। এটি পরিবেশবান্ধব এবং এই পদ্ধতির চাষে কীটপতঙ্গের আক্রমণ কম বলে ফসলে কোনো পেস্টিসাইড বা কীটনাশক ব্যবহারের প্রয়োজন হয় না। ফলত, এই পদ্ধতিতে চাষ করে সম্পূর্ণ বিষমুক্ত সবজি-ফল উৎপাদন সম্ভব।
দুবাই থেকে ফিরে নিজের বাড়ি এবং ঝুল বারান্দাকে বেছে নেন চাষের জন্য। এই মুহূর্তে করলা, লঙ্কা, পটল, পালংশাক, ফুলকপি, টোম্যাটো ও ক্যাপসিকামের মতো প্রায় দশ হাজারেরও বেশি উদ্ভিদ রয়েছে তার বাড়িতে। শুধু ফসল উৎপাদনই নয় বর্তমানে পুরোদমে ফসল বিক্রি করার দিকেও নজর দিয়েছেন তিনি। রামবীর নিজেই জানিয়েছেন বর্তমানে শুধুমাত্র ফসল বিক্রি করে বার্ষিক প্রায় ৭০ লক্ষ টাকা উপার্জন করছেন তিনি।