নিউজ শর্ট ডেস্ক: রক্তবর্ণ জিভ বার করে মহাদেবের বুকের ওপর এক পা দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন মা কালী (Ma Kali)। প্রায় গোটা বাংলা জুড়েই প্রচলিত এই কালীমূর্তি। কালো রূপেই তিনি দিগম্বরী। কিন্তু চিরাচরিত এই কালীমূর্তি থেকে একেবারে আলাদা বর্ধমানের (Burdwan) সোনার কালীবাড়ির (Sonar Kali Bari) মায়ের মূর্তি। এই প্রতিমার বিশেষত্ব হল, এখানে মায়ের জিভ বাইরে বেরিয়ে নেই। পায়ের নীচে শায়িত নেই মহাদেবও। দেবীর গলায় নেই মুণ্ডমালাও।
তাঁর চার হাতের মধ্যে উপরের দিকের বাম হাত ধারণ করে রয়েছে খড়্গ, আর উপরের ডান হাতে রয়েছে পদ্ম, নীচের ডান হাত রয়েছে অভয় মুদ্রার ভঙ্গিতে।এই মন্দিরের সাথে যোগ রয়েছে বর্ধমানের রাজপরিবারের। কথিত আছে রাজা মহতাব চাঁদের পত্নী অর্থাৎ রানি নারায়ণী দেবী স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন। তাই ১৩০৬ বঙ্গাব্দের (১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দ) ৩০ ফাল্গুন বর্ধমানের মিঠাপুকুর অঞ্চলে প্রতিষ্ঠা করা ভুবনেশ্বরী দেবীর মন্দির।
সবার কাছে সোনার কালীবাড়ি নামে পরিচিত হলেও এই মন্দিরের আসল নাম ভুবনেশ্বরী কালীবাড়ি।তবে একসময় এই মন্দিরে সোনার মূর্তিই ছিল। সেই থেকেই এমন নামকরণ। তবে সাতের দশকে সেই সোনার মূর্তি চুরি হয়ে যায়। পরে অষ্টধাতুর দেবীমূর্তি স্থাপন করা হয়। তবে সোনার কালীবাড়ি নামটি রয়ে গিয়েছে আজও। জানা যায়, মন্দির প্রতিষ্ঠার পর থেকেই প্রতি অমাবস্যায় নিয়ম করে ঘটের আম্রপল্লব এবং ডাব পরিবর্তন করা হয়।
কিন্তু জানলে অবাক হবেন প্রায় ১২৪ বছর পর আজও এই ঘটের জল শুকোয় নি। প্রত্যেক বছর দীপান্বিতা কালীপুজোতে তো বটেই , প্রতি অমাবস্যাতেও এই মন্দিরে বিশেষ পুজোর আয়োজন করা হয়।এছাড়া এই মন্দিরের অন্যতম বিশেষ আকর্ষণ হল দেবীর পায়ের কাছে রাখা থাকে বৃহৎ একটি শঙ্খ। কথিত আছে রানী বেড়াতে গিয়ে সমুদ্রের পাড়ে এই সুবিশাল শঙ্খটি পেয়েছিলেন। প্রত্যেক সান্ধ্যকালীন পুজোয় এই শঙ্খ বাজালে, মুখরিত হয়ে ওঠে গোটা এলাকা। রাজাদের আমলের দু’টি কূপও রয়েছে রয়েছে মন্দিরে।
মন্দিরের ভিতরের তিনটি ঘরের একেবারে মধ্যিখানে, গর্ভগৃহে, রুপোর সিংহাসনে স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত দেবী। তাঁর আবাহন বা বিসর্জন নেই। তাঁর ডান দিকে রয়েছেন দক্ষিণা কালী, আর বাম দিকে রয়েছেন মা মঙ্গলচণ্ডীর। গর্ভগৃহের পূর্ব দিকের ঘরের, ঈশান কোণে পঞ্চমুণ্ডির আসন রয়েছে। ভুবনেশ্বরী মূর্তির সামনেই নাটমন্দিরের উল্টো দিকে রয়েছে দু’টি শিবমন্দির। দু’টি শিবলিঙ্গই শ্বেত পাথরে তৈরি।
প্রায় ১২৪ বছরের পুরনো এই পুজোর নিয়ম রীতিও বেশ আলাদা। পুজোর ভোগেও রয়েছে বিশেষত্ব। এই মন্দিরের পুজোর ভোগে বৃহস্পতিবার ছাড়া সপ্তাহের অন্য দিনগুলিতে থাকে মাছ। কালীপুজোর সময় খিচুড়ির সঙ্গে পাতেও থাকে মাছের টক। তবে আগে পশুবলির চল থাকলেও, বর্তমানে চালকুমড়ো বলি দেওয়া হয় এই মন্দিরে।