মাশরুম অত্যন্ত উপাদেয় একটি উপকরন যা দিয়ে অসংখ্য ধরনের পদ রান্না করা যায়। তাই বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট থেকে শুরু করে বাড়িতেও মাশরুমের ব্যবহার বেড়েছে। তাই বর্তমানে বাজারে ভাল কদর রয়েছে মাশরুমের। সেই লাভ ঘরে তুলতে ভারতীয় কৃষকরা চাষের নতুন নতুন উপায় শিখছে। এমনই এক অভিনব পদ্ধতি হলো মাটির পাত্রে মাশরুম চাষ।
মাশরুমের ব্যপক চাহিদার জন্য ভারতে অনেক কৃষক এখন মাশরুম চাষের দিকে ঝুঁকছেন। কিন্তু এক্ষেত্রে আলাদাভাবে চাষের জমিকে চাষের উপযোগী করে তুলতে হয়, যা যথেষ্ট কষ্টসাধ্য কাজ। কৃষকদের এই সমস্যার কথা মাথায় রেখে কৃষিবিজ্ঞানীরা এমন এক উপায় বের করেছেন যাতে পরিশ্রম হবে তুলনামূলক কম অথচ বাড়বে ফলন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ভারতীয় কৃষি বিজ্ঞানীদের কঠোর পরিশ্রমের জন্য আজ মাটির পাত্রে মাশরুম চাষ করা সম্ভব হয়েছে। রাজস্থানের শ্রী গঙ্গানগরে অবস্থিত কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের (কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র শ্রী গঙ্গানগর) বিজ্ঞানীরা মাটির পাত্রে মাশরুম চাষের একটি নতুন কৌশল উদ্ভাবন করেছেন। এই নতুন প্রযুক্তির সাহায্যে, পুরানো এবং জীর্ণ পাত্রগুলি মাশরুম জন্মানোর জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে, যেখানে প্রথমে ড্রিলিং মেশিনের সাহায্যে পাত্রের চারদিকে ছোট গর্ত করতে হবে। এর পরে, খড় এবং সার সহ কম্পোস্ট তৈরি করে সেই পাত্রের ভিতরে ভর্তি করে তাতে মাশরুমের বীজগুলিকে রোপণ করে সেটিকে একটি অন্ধকার ঘরে রেখে দিতে হবে।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, আপনি মোটামুটি ২৫ শতাংশ পর্যন্ত খরচ কমাতে পারবেন এই ব্যবসার মাধ্যমে। স্বল্প খরচে অধিক লাভ থাকার কারণে অনেকেই মাশরুম চাষের প্রতি আগ্রহ দেখাতে শুরু করেছেন। আপনিও যদি বাড়িতে মাশরুম ফলাতে চান তাহলে প্রথমে কিছু মাটির পাত্র সংগ্রহ করে তার চারপাশে ছোটো ছোটো গর্ত করুন যাতে মাশরুম বড়ো হওয়ার পর চারিদিকে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
এরপর একটি বড়ো পাত্রে জল ভরে তাতে চাষের জন্য খড় এবং ছত্রাকনাশক ছড়িয়ে নিন। প্রথমে ছত্রাকনাশক জলে মিশিয়ে খড় বেশ ভালোভাবে শোধন করে নিয়ে ১২ ঘণ্টার জন্য ছেড়ে দিন। যখন খড় ভালভাবে জল শুষে নেবে, তখন সূর্যের আলো বা বাতাসের সাহায্যে শুকানোর জন্য খোলা জায়গায় রেখে দিন।
এই মাশরুম চাষের সময় বেশ কয়েকটি বিষয়ের উপর যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। খড় ভরাট করার পরে হাড়িতে যে গর্তগুলো করা হয়েছে তা তুলো বা টেপ দিয়ে দশ পনেরো দিন বন্ধ করে রাখতে হবে যাতে ভিতরে আদ্রতা থাকে। পাত্রটিকে এই অবস্থায় ১২-১৫ দিন অন্ধকার ঘরে রেখে দিতে হবে। মাশরুমের স্পান সম্পূর্ণভাবে প্রসারিত হলে পাত্রের গর্তের টেপ বা তুলো খুলে ফেলা আবশ্যক। এরপর পাত্রের মধ্যে বীজ থেকে মাশরুম তৈরি হলে তা বের করে নিতে হবে।
শ্রীগঙ্গানগরের কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে (কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র শ্রীগঙ্গানগর) এই কৌশলের মাধ্যমে কৃষকদের মাটির পাত্রে মাশরুম চাষের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, যাতে ভবিষ্যতে কৃষকরা কম খরচে ভালো মানের মাশরুম চাষ করতে পারেন। ইতিমধ্যেই অনেকে এই পদ্ধতিতে চাষাবাদ শুরু করেছেন। আগে মাশরুম তৈরি করার জন্য পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করা হতো যা নিক্ষেপনের পরে পরিবেশ দূষণ করতো। কিন্তু নতুন এই পদ্ধতিতে মাশরুম চাষ করলে ঘরে পড়ে থাকা পুরনো হাড়ি কাজেও লেগে যাবে এবং দূষণের ঝুঁকিও কমে যাবে অনেকটাই।