এই পৃথিবীতে কেউই সাফল্যের চামচ মুখে নিয়ে জন্মগ্রহণ করেনা। কঠোর পরিশ্রমের দ্বারাই সাফল্য অর্জন করে নিতে হয়। প্রবাদ আছে, ‘পরিশ্রম সাফল্যের চাবিকাঠি’ আর এই প্রবাদ বাক্যকেই বাস্তব করে দেখালো রাজস্থানের বাসিন্দা দীপেশ কুমারী। প্রতি বছরই UPSC পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হতেই দেশজুড়ে মানুষের সামনে আসে একাধিক লড়াইয়ের গল্প। আজ আমরা শুনবো এমনই এক লড়াকু মেয়ে দীপেশ কুমারীর গল্প।
একটি রুম, একটি রান্নাঘর এবং সাত সদস্য, এভাবেই বসবাস করে রাজস্থানের ভরতপুরের অটল বাঁধ এলাকার নুড়ি কুপের বাসিন্দা গোবিন্দের পরিবার। দুই মেয়ে, তিন ছেলে এবং স্ত্রী নিয়ে এই ছোট্ট বাড়িতে বসবাসকারী গোবিন্দ নিজে গত ২৫ বছর ধরে ঠেলা গাড়ি চালিয়ে পরিবারের সদস্যদের খাবার জোগাড় করতেন। কিন্তু দুদিন আগে UPSC প্রকাশ্যে আসার সাথে সাথেই গোবিন্দের সমস্ত কষ্ট যেন নিমেষে লাঘব হয়ে গেলো। গোবিন্দের বড়ো মেয়ে দীপেশ কুমারী ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সিভিল সার্ভিসেস পরীক্ষায় সর্বভারতীয় ৯৩ র্্যাঙ্ক করে সকলের তাক লাগিয়ে দিয়েছেন।
প্রসঙ্গত দীপেশের এই সফলতার পেছনে কেবলই তার পরিশ্রমই নয় রয়েছে তার পরিবারের আত্মত্যাগও। দীপেশের বাবা গোবিন্দ পেশায় একজন ঠেলা চালক হলেও সবসময় স্বপ্ন দেখতেন তার সন্তানরা পড়াশোনা করে দেশের নাম উজ্জ্বল করবে। আর তার সেই স্বপ্নের বীজ তিনি পুঁতে দেন নিজের সন্তানদের মধ্যে। বাবার দেখা স্বপ্নকে নিজের মধ্যে লালন করতে থাকে দীপেন, পাখির চোখ করে নেয় UPSC-কে। আর তার ফলাফল আজ সকলের সামনে। দীপেশ শুধু তার বাবা মা-এরই মাথা উঁচু করেছে তাই নয় বরং উজ্জ্বল করেছে গোটা রাজস্থানের নাম।
প্রসঙ্গত গত বুধবার ফলাফল প্রকাশ হওয়ার ভরতপুর শহরের অটলবাঁধ এলাকায় নিজের বাড়িতে পৌঁছালে দীপেশকে স্বাগত জানাতে শুধু বাবা-মা, ভাইবোনই নয়, সমগ্র এলাকাবাসী পৌঁছে যায় সেখানে। রীতিমত ফুলের মালা পরিয়ে স্বাগত জানানো হয় তাকে। এমনকি মেয়ের এই নজরকাড়া সাফল্যের পর বিন্দুমাত্র অহঙ্কার নেই গোবিন্দের মনে। রেজাল্টের পরের দিনই গোবিন্দ আবার নিজের গাড়ি নিয়ে শহরের রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন রুজি রোজগারের উদ্দেশ্যে। রাজপথে নামার সাথে সাথেই মানুষ ঘিরে ধরে তাকে অভিনন্দন জানাতে। মেয়ের জীবনসংগ্রাম সম্পর্কে গোবিন্দ জানায়, জীবনে সুখ-দুঃখ চলতেই থাকে। পরিশ্রম থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া উচিত নয়।
প্রসঙ্গত, দীপেশের পূর্বের রেজাল্ট সম্পর্কে বললে, দশম শ্রেণী পর্যন্ত রাজস্থানের ভরতপুর শহরের শিশু আদর্শ বিদ্যা মন্দির থেকে পড়াশোনা করেছেন দীপেশ। দশম এবং দ্বাদশ শ্রেণীতে যথাক্রমে ৯৮ এবং ৮৯ শতাংশ নাম্বার নিয়ে উত্তীর্ণ হন তিনি। ভরতপুর থেকে দ্বাদশ পর্যন্ত পড়ার পর দীপেশ যোধপুর থেকে বি.টেক ডিগ্রি হাসিল করেন। B.Tech শেষ করার পর, তিনি IIT মুম্বাই থেকে M.Tech ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর একটি বেসরকারি সংস্থার সাথে যুক্ত হন তিনি, কিন্তু লক্ষ ছিলো UPSC। তাই চাকরি ছেড়ে দিয়ে দিল্লি থেকে UPSC-এর জন্য প্রস্তুতি শুরু করেন। প্রথম প্রচেষ্টায় বিফল হলেও দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় মেলে সাফল্য।