শ্রী ভট্টাচার্য, কলকাতা: ভারত তার পরিবহন ব্যবস্থায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে, এবং সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ উন্নয়নগুলির মধ্যে একটি হল আসন্ন হাই-স্পিডের বুলেট ট্রেন। ভারত শীঘ্রই এই পরবর্তী প্রজন্মের বুলেট ট্রেন চালু করবে যা ৪০০ কিমি/ঘন্টা গতিতে দৌড়োবে। ভ্রমণের সময় উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দেবে। উদাহরণস্বরূপ, কলকাতা থেকে দিল্লি ভ্রমণ, যা সাধারণত ট্রেনে ১৭ ঘন্টারও বেশি সময় নেয়, এই নতুন বুলেট ট্রেনে মাত্র ৪ ঘন্টা সময় লাগবে।
ই১০ বুলেট ট্রেন: দ্রুত এবং আরও উন্নত
প্রাথমিকভাবে, ভারত জাপানি ই৫ শিনকানসেন মডেলের বুলেট ট্রেন আনার পরিকল্পনা করেছিল, যা ৩২০ কিমি/ঘন্টা গতিতে পৌঁছতে পারে। তবে, পরিকল্পনা পরিবর্তন করা হয়েছে, এবং এখন ভারত আরও উন্নত ই১০ মডেল আনবে। ই১০ বুলেট ট্রেনের সর্বোচ্চ গতি হবে ৪০০ কিমি/ঘন্টা, যা এটিকে বিশ্বের দ্রুততম ট্রেনগুলির মধ্যে একটি করে তুলবে। এই আপগ্রেড প্রযুক্তি এবং গতিতে একটি বড় ধরনের উন্নতি আনবে, যা যাত্রীদের জন্য ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আরও সহজ এবং দ্রুততর করবে।
ভারত ও জাপানের যৌথ উদ্বোধন
ই১০ বুলেট ট্রেন কেবল ভারতেই চালু হবে না, জাপান ঘোষণা করেছে যে তারা একই সময়ে তাদের দেশে একই মডেল চালু করবে। এটি রেল ভ্রমণের ক্ষেত্রে একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত হিসেবে চিহ্নিত হবে এবং ভারত ও জাপানের মধ্যে সম্পর্ক আরও জোরদার করবে। জাপান একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ভারতে দু’ টি ই১০ বুলেট ট্রেন পাঠাবে, যা উচ্চ-গতির রেলের ক্ষেত্রে একটি নতুন যুগের সূচনা করবে।
ভারতের নিজস্ব উচ্চ-গতির ট্রেন
ভারত কেবল আমদানি করা ট্রেনের উপর নির্ভর করছে না। ই১০ বুলেট ট্রেন ছাড়াও, ভারতীয় রেল নিজস্ব উচ্চ-গতির ট্রেন তৈরিতে কাজ করছে। ইন্টিগ্রাল কোচ ফ্যাক্টরি এবং ভারত আর্থ মুভার্স লিমিটেডের মধ্যে সহযোগিতায় ইতিমধ্যেই দু’ টি আধা-উচ্চ-গতির ট্রেন তৈরি করা হয়েছে, যার জন্য ব্যয় করা হয়েছে ৮৬৭ কোটি টাকা। এই ট্রেনগুলি ঘন্টায় ২৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত গতিতে ছুটতে সক্ষম হবে এবং ২০২৬ সালের মধ্যে এগুলো প্রস্তুত হওয়ার কথা রয়েছে।
মুম্বাই-আহমেদাবাদ করিডোর: একটি যৌথ প্রচেষ্টা
উচ্চ-গতির ট্রেনের এই অগ্রগতির পাশাপাশি, ভারত ও জাপান মুম্বাই ও আহমেদাবাদের মধ্যে একটি উচ্চ-গতির রেল করিডোর তৈরিতেও একসাথে কাজ করছে। এই প্রকল্পের লক্ষ্য দু’ টি শহরের মধ্যে ভ্রমণের সময় কমানো। মূলত জাপান এ ক্ষেত্রে টাকা দিয়ে সাহায্য করছে ভারতকে। ৫০ বছরের একটি লোন পেয়েছে ভারত। জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির এই লোনের টাকা দিয়েই হাইস্পিড রেল করিডোর তৈরির জন্য ৮০% খরচ করা হবে। আর মাত্র ০.১% সুদে ভারত এই টাকা ফেরত দেবে জাপানকে।
প্রসঙ্গত, ২০৩০ সালে ৪০০ কিলোমিটার/ঘন্টা গতির ই১০ বুলেট ট্রেন চালু হওয়ার মাধ্যমে ভারতের ট্রেন ব্যবস্থা বিশ্বের দ্রুততম ট্রেনগুলির মধ্যে একটি হওয়ার পথে। ভারত ও জাপানের মধ্যে সহযোগিতার মাধ্যমে, দেশীয়ভাবে নির্মিত আধা-উচ্চ-গতির ট্রেনগুলির উন্নয়নের সাথে সাথে, দেশের রেল ভ্রমণ মানুষের যাতায়াতের পদ্ধতি পরিবর্তন করতে প্রস্তুত। এটি কেবল ভ্রমণের অভিজ্ঞতা বৃদ্ধি করবে না বরং আন্তর্জাতিক সম্পর্ককেও শক্তিশালী করবে।