এসএসসি দূর্নীতি,শিক্ষক নিয়োগ,প্রাথমিক টেট দূর্নীতি,তৃণমূল কংগ্রেস,কেলেঙ্কারি,পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়,ইডি,পশ্চিমবঙ্গ সরকার,SSC scam,Techer recruitment,Primary TET Scam,Trinamool Congress,Scam,Partha Bandopadhyay,ED,West Bengal Govt

Moumita

নিয়োগের দুর্নীতিতে গ্রেফতার পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও তাঁর ঘনিষ্ঠজন, ED- র তদন্তের মুখে পড়েছেন এই ১৪ জনও

বহুদিন ধরেই রাজ্যে ঘটে যাওয়া একের পর এক দূর্নীতির ওপর নজর ছিল কেন্দ্রের গোয়েন্দা বিভাগের। অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারি নিয়ে তদন্তে নামে ED (Enforcement Directorate)। নেমেই একেবারে বলিউডি স্টাইলে রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষা মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠর বাড়ি থেকে উদ্ধার করে ২১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা এবং ৭৯ লক্ষ টাকার গয়না! রাজ্যে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে SSC দুর্নীতির তদন্ত চালাচ্ছে CBI। আর এদিন তদন্তের জাল ধরে এগোতেই সমস্ত রহস্য পরিষ্কার হয়ে যায়।

   

ED এর এই Raid এর সাথে অনেকে বলিউডের ২০১৮ সালে মুক্তি পাওয়া অজয় দেবগণের সিনেমা ‘RAID’ এর বহু মিল পান। একেবারে কাকভোরে প্রাক্তন শিক্ষা মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে পৌঁছে যান ED এর আধিকারিকরা। কোনো নোটিশ ছাড়াই তার নাকতলার বাড়িতে সদলবলে পৌঁছে টানা ২৭ ঘণ্টা জেরা করা হয় তাকে। আর তার পরই শনিবার শ্রীঘরে গরাদের ওপারে দেখা যায় তাকে। তবে একা পার্থের বাড়িতে নয়, রাজ্যের ১৪ জায়গায় ৭৫ জন আধিকারিকের বাড়িতে তল্লাশি চালান তারা।

রাজ্যে যে, একের পর এক কেলেঙ্কারি হয়েছে এতো আর অজানা কিছু নয়। শাসকদলের নেতা কর্মীরা কোটি কোটি টাকা নিয়ে চাকরি পাইয়ে দিয়েছেন বহু মানুষকে। আর সেই সমস্ত কেলেঙ্কারির মূল হোতাদের প্রত্যেককে জেলে পোরার জন্য তদন্তে নামে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দলগুলি। আয়ের সাথে সামঞ্জস্য রেখে সম্পত্তি রয়েছে কিনা সেই সমস্ত খতিয়ে দেখতে আসরে নেমেছে ED। তারা ১০ বছরের আয়কর রিটার্নও দেখতে চান বলে জানা যাচ্ছে।

পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের পর রাজ্যের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারীর বাড়িতেও হানা দেন ED এর আধিকারিকরা। ইতিমধ্যেই পরেশের মেয়ের চাকরি নিয়ে বিতর্কের শেষ থাকেনি। শিক্ষিকার পদ থেকে বরখাস্ত হয়েছেন তিনি। আর দুই কিস্তিতে ফেরত দিয়েছেন এতদিনের মোট বেতন। ১০ জনের একটি দল গিয়ে টানা ৯ ঘণ্টা তলাশি চলায় পরেশ অধিকারীর বাড়িতে। জেরা করা হয় সকল আত্মীয়দের। যদিও সেই সময় বাড়িতে ছিলেননা পরেশ অধিকারী। তিনি ২১ জুলাইয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গেছিলেন। সেখান থেকেই তিনি জানান যে, ‘‘বাড়িতে থাকলে নেত্রীর নির্দেশ মেনে মুড়ি দিয়ে আপ্যায়ন করতাম।’’পরেশ অধিকারীর বাড়িতে সমস্ত সম্পত্তির পরিমাণ ইত্যাদি সবকিছু খতিয়ে দেখেন তারা।

ED এর সবচেয়ে সফল হানা হয়, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিশেষ ঘনিষ্ট অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের টালিগঞ্জের বাড়িতে। সেখান থেকে ৫০০ এবং ২,০০০ এর নোটে উদ্ধার হয় একেবারে ২১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা এবং ৭৯ লক্ষ টাকার গয়না! স্বাভাবিক ভাবেই অর্পিতাকে আটক করেছে ED। এরপর তারা জেরা চালাচ্ছেন কিভাবে এত টাকা পেলেন তিনি? কীভাবে পরিচয় পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তার? সমস্ত তথ্য একেবারে খুঁড়ে বের করছেন ED এর আধিকারিকরা। আর ঠিক একই সময় ED হানা দেয় প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অপসারিত সভাপতি তথা বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্যের বাড়িতে। তাকে ঘুম থেকে তুলে জেরা করেন ED এর আধিকারিকরা। তার যাদবপুরের তালাবন্ধ দুটি বাড়িতেও টাকা খুলে হানা দেন তারা।

এছাড়াও ED হানা দেয় স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)-এর তিন প্রাক্তন উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিংহের সন্তোষপুর সার্ভে পার্কের বাড়িতে, কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়ের বেলেঘাটার বাড়িতে এবং সমরজিৎ আচার্যের বাড়িতে। পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায় শিক্ষামন্ত্রী থাকা কালীন ওএসডি (অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি) পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতেও হানা দেয় ED। পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায় ঘনিষ্ট সুকান্ত আচার্যের বাড়িতেও হানা দেন তারা, সেখানে কিছু নথিপত্র উদ্ধার হয়। ED আপাতত খতিয়ে দেখছে সেগুলির সাথে SSC দুর্নীতির কোনো যোগাযোগ রয়েছে কিনা।

রাজ্যের শিক্ষা দফতরের প্রাক্তন অধিকর্তা একে সরকারের ফ্ল্যাটেও হানা দেয় ইডি। সাথে তল্লাশি চালানো হয় এসএসসির প্রাক্তন চেয়ারম্যান সৌমিত্র সরকারের বাড়িতে। এছাড়া প্রাথমিকের সচিব রত্না চক্রবর্তী, এসএসসির প্রাক্তন উপদেষ্টা কল্যাণময়ের এক আত্মীয় সি অধিকারী, স্কুল শিক্ষা দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর অলোক সরকারের বাড়িতেও তল্লাশি চালায় ইডি। বাগদার রঞ্জন ওরফে চন্দন মণ্ডলের বাড়িতেও জানা দেয় ED এর একটি দল।

রাজ্যের সব হোমরা চোমরা নামই যুক্ত হয়ে গেছে ED এর এই তদন্তে। কিছু বছর আগে প্রাক্তন CBI কর্তা এবং প্রাক্তন বিধায়ক উপেন বিশ্বাস এক ভিডিওবার্তায় ‘রাজ্যে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি’ এর বিষয়টিকে সামনে নিয়ে আসেন। টাকা নিয়ে চাকরি পাওয়ানোর অভিযোগ ওঠে রাজ্যের সমস্ত রাঘব বোয়ালদের বিরুদ্ধে। এখন দেখার তদন্তে আর কী কী উঠে আসে। প্রাথমিক টেট থেকে SSC এর দুর্নীতিতে রাজ্যের শাসকদলের আর কোন কোন নেতাকে শ্রীঘরে দেখা যায়!