শতকের পর শতক ধরে আমাদের দেশের শিকড়ের গভীরে যেন প্রথিত হয়ে গিয়েছে লিঙ্গ বৈষম্যের বিষ। দেশের বহু জায়গায় অবৈধভাবে চলে ভ্রুণের লিঙ্গ নির্ধারণ, যেখানে কন্যা সন্তানকে আজও বাবার বোঝা হিসাবে বিবেচনা করা হয়, সেখানেই দেশের দুই মেয়ে দশম এবং দ্বাদশ শ্রেণীতে নজরকাড়া সাফল্য হাসিল করে বাবা-মায়ের মুখ উজ্জ্বল করেছে। আজ এই প্রতিবেদনে ঝাড়খন্ডে বসবাসকারী দুই অগ্নি কন্যার কথা বলবো যারা অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখিয়েছে।
দেশের প্রকাশ্যে এসেছে দেশের বিভিন্ন রাজ্যের বোর্ড পরীক্ষার ফলাফল। কোভিড 19 এর অতিমারিতে সমস্ত স্কুল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার পরেও বহু ছাত্রছাত্রী দূর্দান্ত নম্বর নিয়ে পাশ করেছে। একই সাথে এমনও কিছু শিক্ষার্থী রয়েছে যারা শুধু পাশই করেনি বরং রাজ্য তথা জেলায় শীর্ষস্থান অর্জন করে তাদের পিতামাতা এবং পরিবারের গৌরব বাড়িয়েছে। আর এই তালিকাতেই নাম রয়েছে ঝাড়খন্ডের চক্রধরপুর জেলার কারমেল স্কুলে অধ্যয়নরত তানিয়া শাহ এবং নিশু কুমারীর নাম। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য, তারা দশম শ্রেণীর বোর্ড পরীক্ষায় ৫০০ নম্বরের মধ্যে ৪৯০ হাসিল করে পুরো রাজ্যে শীর্ষস্থান দখল করেছে।
জানিয়ে রাখি এই রেকর্ড তৈরি করা দুই কিশোরীর কেউই সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মায়নি। তানিয়া শাহ তার পরিবারের সাথে চক্রধরপুরের পটকায় অবস্থিত ইচিন্দাসাই এলাকায় থাকেন। তার বাবা সতীশ শাহ চা সমোসা বিক্রি করে কোনোরকমে পরিবারের সদস্যদের ক্ষুদা নিবারণ করেন। অন্যদিকে, নিশু কুমারীর বাবা দীনেশ কুমার যাদবের একটি গরুর দুধের ব্যবসা রয়েছে। তিনি প্রতিদিন চক্রধরপুরের কলোনির ঘরে ঘরে দুধ পৌঁছে দেন। এমতাবস্থায় এই দুই কিশোরীর এহেন সাফল্যর আনন্দের বন্যা বইয়ে দিয়েছে তাদের পরিবারে মায় পুরো এলাকায়।
একদিকে তানিয়ার বাবার যেমন মেয়েকে নিয়ে গর্বের শেষ নেই অন্যদিকে নিশুর বাবা জানিয়েছেন যে, মেয়ের কারণে তিনি রাজ্যে একটি নতুন পরিচয় পেয়েছেন। তানিয়ার মা নীলু দেবীর ইচ্ছা তিনি মেয়েকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করবেন। তানিয়াকে এই প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, তার এই সাফল্যের সমস্ত কৃতিত্ব তার বাবা-মা এবং তার স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা যারা তাকে প্রতিটি পদক্ষেপে সাহস জুগিয়েছেন। সাংবাদিকদের নিজের ইচ্ছের কথাও জানিয়েছেন তানিয়া। পরবর্তীকালে সায়েন্স নিয়ে পড়তে চায় সে।
অপরদিকে নিশুর বক্তব্য সে কঠোর পরিশ্রম করেছিলো এই জায়গায় পৌঁছানোর জন্য। আর তার ফলস্বরূপ আজ সে বোর্ড পরীক্ষায় রাজ্যের শীর্ষস্থানে জায়গা করে নিয়েছে। নিলুর কথায় তার এই সাফল্যের পেছনে সবচেয়ে বড়ো অবদান তার বাবা মা এবং তার শিক্ষক শিক্ষিকার। তাদের আশীষ এবং সাপোর্টের কারণেই আজ সে এই জায়গায় পৌঁছেছে।