ললিতা পাটিল,মহারাষ্ট্র,ব্যবসা,সফলতার জার্নি,ঘরচি আথবন,Lalita Patil,Maharashtra,Buisness,Journey of Success,Gharachi Athaban

Moumita

একজন সাধারণ গৃহবধূ থেকে আজ সফল ব্যবসায়ী, টিফিনের ব্যবসা করেই বছরে কোটি টাকা কামাচ্ছেন ললিতা

মহারাষ্ট্রের থানে নিবাসী ললিতা পাটিল ছিলেন একজন সাধারণ গৃহবধু, তবে এখন গৃহবধূ থেকে হয়ে উঠেছেন পুরোদস্তুর ব্যবসায়ী। তিনি বিশ্বাস করেন বাড়িতে থেকে কোনো মহিলা যতই পরিশ্রম করুক না কেন, সমাজ ঠিক তার নামের পাশে ‘গৃহবধূ’র তকমা এঁটেই দেয়। নারীরা ঘরের বাইরে পা না রাখলে কেউ তাদের পরিশ্রমের মূল্য দেয়না। সাধারণ গৃহবধু থেকে ব্যবসায়ী ললিতার জীবন যেন এক আস্ত সিনেমা।

   

ললিতার কথায় জানা যায়, প্রথম থেকেই আর্থিকভাবে স্বনির্ভর হতে চেয়েছিলেন তিনি। প্রাথমিক পর্যায়ে বাচ্চাদের টিউশন পড়ান, পরে একটি ফার্মেসিতে ওষুধ বিক্রির কাজও করেন তিনি। কিন্তু এই কাজে সন্তুষ্ট হতে পারছিলেননা ললিতা। তিনি উপলব্ধি করেন যে একমাত্র নিজস্ব ব্যবসাই তাকে আত্মতুষ্টি দিতে পারে। এরপর ২০১৬ সালে ললিতা তার ব্যবসার জন্য প্রথম পদক্ষেপ নেন। ২০০০ টাকার বিনিময়ে কিছু টিফিন বক্স এবং ৫০০ টাকা খরচ করে কিছু লিফলেট কিনে আনেন। ২৫০০ টাকা লগ্নি করে বাড়িতেই শুরু করে‌ দেন টিফিনের ব্যবসা।

ধীরে ধীরে ব্যবসার উন্নতি শুরু হলে ব্যবসার লাইসেন্সও পেয়ে যান ললিতা। নিজের টিফিন পরিষেবার নাম দেন ‘ঘরচি আথবন’ অর্থাৎ ‘বাড়ির স্মৃতি’। বাড়িতে রান্না করে তা বিক্রি করতেন তিনি। কিন্তু তার পরই তিনি উপলব্ধি করলেন যে তার ব্যবসা ভালো চললেও আজও মানুষ তাকে এই ‘গৃহবধু’র নজরেই দেখে। তিনি বুঝতে পারলেন যে, এতো পরিশ্রমের পরও তিনি তার প্রাপ্ত সম্মান থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ললিতা জানতেন তার অধিকারের সম্মান পেতে হলে তাকে সবার আগে বাড়ির বাইরে পা রাখতে হবে‌। পরিশ্রম করার মানসিকতা থাকলেও বাধ সাধলো পুঁজি। না ছিলো কোনো সঞ্চয় না ছিলো লোন নেওয়ার মতো পরিস্থিতি‌। কিন্তু কথায় আছে আপনি যদি নিষ্ঠাভরে কোনও কিছু প্রার্থনা করেন ভগবান ঠিক সেটা এনে হাজির করে দেন আপনার সামনে।

সাল তখন ২০১৯, তার চোখে পড়ে ব্রিটানিয়া মারি গোল্ড মাই স্টার্টাপ প্রতিযোগিতার বিজ্ঞাপন। বিজ্ঞাপনে বলা ছিলো প্রতিযোগিতার দশ জন বিজয়ীর প্রত্যেকের হাতে তুলে দেওয়া হবে ১০ লক্ষ টাকা। সুযোগের সদ্ব্যবহার করে ললিতাও নেমে পড়েন মাঠে। নিজের অবিচল লক্ষ এবং নিষ্ঠার সৌজন্যে জিতেও যান তিনি। সমস্ত কিছু বাদ দিয়ে পুরস্কার বাবদ তার হাতে আসে মোট ৭ লক্ষ টাকা। তাই দিয়ে আরো এক পা এগিয়ে গেলেন নিজের স্বপ্নের দিকে।

ব্যবসার প্রথম দিকে ললিতার লক্ষ ছিলো হোস্টেল নিবাসী বিভিন্ন ছাত্র বা কর্মসূত্রে ভিনরাজ্য থেকে এসে যারা বাড়ির তৈরি খাবার থেকে বঞ্চিত থাকে তাদের ক্ষুধা নিবারণ করা। সেখান থেকে শুরু করে আজ তার ব্যবসার বার্ষিক টার্ন ওভার প্রায় ১ কোটি টাকা। জেনে অবাক হবেন এই ব্যবসা থেকে ললিতা প্রতি মাসে কমপক্ষে ৬-৭ লক্ষ টাকা উপার্জন করেন ললিতা।

যদিও এরপর মারাত্মক কোভিডের কারনে তার ব্যাবসার বহু ক্ষতি হয়। তবে তিনি নিজের ওপর ভরসা হারাননি। তিনি বলেন যে,“আমরা জুলাই মাস থেকে আবারো ব্যবসা শুরু করি, এবং ডিসেম্বর মাসের মধ্যে আবারো মহামারীটি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। তখন আমরা গ্রাহকদের বাড়িতে বাড়িতে খাবার পৌঁছে দিয়েছি কিন্তু বসে খাওয়ার সুবিধা বন্ধ করে দিয়েছি।” তার এই ব্যবসা শুধুমাত্র তার স্বপ্নকেই সত্যি করেনি, বাড়িয়ে দিয়েছে তার আত্মবিশ্বাসও। তার মতে, “আমার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা আগের চেয়ে অনেক পরিণত হয়েছে এবং আমি ব্যবসার সুবিধা এবং অসুবিধাগুলিও বুঝতে পারি এখন, ফলে আমার সিদ্ধান্ত নিতে আর কোনো ভুল হয়না।