ভারতীয় রেলওয়ে, এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং পৃথিবীর চতুর্থ রেলওয়ে নেটওয়ার্ক। দশকের পর দশক ধরে মানুষকে পরিষেবা দিয়ে আসছে ভারতীয় রেল। দূরে হোক কী কাছে, যে কোনো গন্তব্যের জন্য ভারতীয় রেল আদর্শ উপায়। দেশের প্রায় ১৪০ কোটি মানুষের লাইফলাইন বললেও ভুল বলা হবেনা।
এমতাবস্থায়, রেলওয়ে দ্বারা প্রতিদিন শত শত ট্রেন চলাচল করে, যার মধ্যে কিছু ট্রেন দুর্ঘটনারও শিকার হয়েছে বা লাইনচ্যুত হয়েছে। কিন্তু কখনো কি ভেবে দেখেছেন যে, ট্রেন চালানো চালক যদি হঠাৎ ঘুমিয়ে পড়েন, তাহলে সেই অবস্থায় ট্রেন এবং তাতে যাতায়াতকারী মানুষদের কী অবস্থা হবে।
হ্যাঁ, সফর যদি লম্বা হয় তাহলে চোখ বুজে আসা খুব একটা অস্বাভাবিক নয়। সর্বোপরি ট্রেন চালকরাও একজন মানুষ। তবে আপনি যদি মনে করেন যে ট্রেন চালানোর দায়িত্ব শুধুমাত্র একজন চালকের কাঁধে থাকে তাহলে আপনি একেবারেই ভুল। আসলে ট্রেনের রুট অনেক লম্বা এবং ক্লান্তিকর, এমন পরিস্থিতিতে হাজার হাজার যাত্রীর জীবনের দায়ভার একজন চালকের কাঁধে চাপাতে পারে না রেল।
এই কারণেই প্রতিটি ট্রেনে কমপক্ষে দুইজন চালক উপস্থিত থাকে, যাদের একজন পাবলিক পাইলট এবং অন্যজন সহকারী চালকের ভূমিকা পালন করেন। এমতাবস্থায় প্রধান চালক ঘুমিয়ে পড়লে বা অজ্ঞান হয়ে গেলে সেক্ষেত্রে সহকারী চালক ট্রেনের কমান্ড নেন। যদি কোনো কারণে লোকো পাইলট বা সহকারী পাইলটের একজন প্রচন্ড অসুস্থ হয়ে পড়েন সেক্ষেত্রে অবিলম্বে রেলওয়েকে খবর দেওয়া হয় এবং পরবর্তী স্টেশনে তাকে প্রতিস্থাপন করা হয়।
এমতাবস্থায়, এখন অনেকের মনেই প্রশ্ন আসতে পারে যে, দুই ট্রেনের চালক একসঙ্গে ঘুমালে বা অসুস্থ হয়ে পড়লে কী হবে? যদিও এমন পরিস্থিতি সচরাচর তৈরি হয় না, কিন্তু কোনো কারণে ট্রেনের চালক দুজনেই যদি ঘুমিয়ে পড়েন বা অসুস্থ হয়ে পড়েন, তাহলে সেই পরিস্থিতিতে একটি বিশেষ যন্ত্র কাজ করে। রেলওয়ের প্রতিটি ট্রেনের ইঞ্জিনে একটি ভিজিল্যান্স কন্ট্রোল ডিভাইস স্থাপন করা আছে। ট্রেনের চালক যদি ১ মিনিটের জন্য কোনো ধরনের সাড়া না দেন, সে ক্ষেত্রে এই ডিভাইসটি সক্রিয় হয়ে যায় এবং ট্রেনকে কন্ট্রোল করে।
আসলে, ট্রেন চালানোর সময় চালক সারাক্ষণ কিছু না কিছু করতে থাকেন, কখনও তিনি ট্রেনের গতি বাড়ান আবার কখনও কমিয়ে দেন, ট্রেনে হর্ন বাজান বা ইঞ্জিন বন্ধ করেন। এই বিভাগটি এই সমস্ত কাজকর্ম নজরে রাখে। এমতাবস্থায়, ভিজিল্যান্স কন্ট্রোল ডিভাইস একটি অডিও ভিজ্যুয়াল ইঙ্গিত দেয়, যার অধীনে ড্রাইভারকে ১৭ সেকেন্ডের মধ্যে বোতাম টিপে তার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হয়। অন্যদিকে, চালক যদি ১৭ সেকেন্ডের মধ্যে বোতামটি না চাপেন, তবে সেক্ষেত্রে ট্রেনের ইঞ্জিন স্বয়ংক্রিয় ব্রেক প্রয়োগ করা শুরু করে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এই স্বয়ংক্রিয় ব্রেক সিস্টেমের সাহায্যে, ট্রেনটি ১ কিলোমিটারের মধ্যে অটোমেটিক থেমে যায়। এরপরেই রেল কর্মকর্তারা চালকের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন। এভাবে রেলে প্রতিদিন শত শত দুর্ঘটনা রোধ করা হয়।