২০০২ সালে হিট টিভি শো ‘কিউ হোতা হ্যায় প্যায়ার’এর হাত ধরে চলচ্চিত্র জগতে পা রাখেন অমিত সাদ। সম্প্রতি অভিনয় জগতে দুই দশক পূর্ণ করলেন তিনি। সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে নিজের দীর্ঘ বাইশ বছরের অভিনয় জীবন সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় আমি এখনও ডেবিউ করছি, এখনও এই ইন্ডাস্ট্রিতে নবাগত বলে মনে হয় নিজেকে। টেলিভিশনে কাজ করার সময়গুলোর দিকে তাকালে আমার নিজের উপর হাসি পায়। সেই সময় একটা বখাটে ছেলে ছিলাম আমি। যদিও আমার এর জন্য কোনো অনুতাপ নেই।
‘কিউ হোতা হ্যায় প্যায়ার’এ প্রধান ভূমিকায় অভিনয় করতে দেখা গেছিলো অমিতকে। এযাবৎ ছোটো পর্দায় তার দীর্ঘ বাইশ বছরের অভিনয় জগতে ক্যায়া হাদশা ক্যায়া হকিকত, কোই দিল মে হ্যায়, গানস অ্যান্ড রোজেস এবং কোহিনূরের মতো একাধিক সফল টিভি শো দিয়ে নিজের শক্ত অবস্থানের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।
এছাড়াও তিনি নাচ বলিয়ে এবং বিগ বসের ডেবিউ সিজনেও অংশগ্রহণ করেছিলেন। বিগ বস প্রসঙ্গে তিনি জানান প্রথমে তিনি ভেবেছিলেন এটি কোনও শারিরীক শক্তি প্রদর্শনের শো হবে, কিন্তু শো’য়ে ঢুকে বুঝতে পারেন এ সম্পূর্ণ অন্য কিছু।
অমিত সাদ, যিনি নিছক ভাগ্যের ফেরে টেলিভিশনের জগতে এসে পড়েছিলেন, একটা পর্যায়ে এসে তার মনে হয়েছিলো জীবন স্থবির হয়ে পড়েছে এই টিভি ইন্ডাস্ট্রিতে। এমতাবস্থায় জীবনের খুব বড়ো সিদ্ধান্ত নেন তিনি। সমস্ত টিভি শো থেকে বিরতি নিয়ে কোনো ভালো চিত্রনাট্যের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন।
সেই পর্যায়ে মানুষ তাকে লুজার বলতে ছাড়েনি। এরপরই ২০১০ সালে ফুনক 2 এর মাধ্যমে বলিউডে পদার্পণ তার। তিন বছর পর কাই পো চে-তে নিজের পরিনত অভিনয় দক্ষতার সৌজন্যে ইন্ডাস্ট্রিতে নিজের পাকাপোক্ত জায়গা তৈরি করেন অমিত। বলা হয় এই ছবিটিই তার জীবনের টার্নিং পয়েন্ট। ছবিতে তিনি ছাড়াও ছিলেন সুশান্ত সিং রাজপুত এবং রাজকুমার রাও।
একটা সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছিলেন যে, ‘কাই পো চে’ করার পর এক বছর ছয় মাস কোনও কাজ ছিলোনা তার কাছে। ২০১৭ সালে মুক্তি পায় তার পরবর্তী ছবি ‘রানিং শাদি’, কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত ছবিটি বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ে। এরপর ২০২০ সালে মুক্তি প্রাপ্ত তিগমাংশু ধুলিয়া পরিচালিত ইয়ারা’ও সম্পূর্ণ রূপে ব্যর্থ হয় দর্শকদের হৃদয় জিততে। পরপর দুটি ছবি ফ্লপ হওয়ায় বহু মানুষের কটাক্ষ শুনতে হয়েছে তাকে। এরপর তিনি সুপার ৩০-তে ১২ মিনিটের একটি ছোট্ট ভূমিকায় অভিনয় করেন, এছাড়াও সুলতান ছবিতে সাপোর্টিং রোলে দেখা যায় তাকে। অমিতের কথায় সেই সময় তিনি একটা কথা অনুভব করেন যে এই ইন্ডাস্ট্রিতে কেউ নায়ক হয়না। এখানে শুধু সততার সাথে নিজের কাজ করে যেতে হয়।
কিন্তু কথায় আছে নিষ্ঠাভরে কিছু চাইলে আপনার সফলতা কেউ আটকাতে পারবেনা। সুলতানের পরেই অ্যামাজন প্রাইম ভিডিও সিরিজ ‘ব্রীথ’এ অভিনয় করার সুযোগ আসে। এই সিজনটিই আবার অভিনয়ের ছন্দ ফেরায় অমিতের জীবনে। দর্শকমহলে ব্যপকভাবে সাড়া ফেলে এই ওয়েব সিরিজটি। কিন্তু একের পর সিনেমাতে ইউনিফর্ম পরে অভিনয় করায় তাকে জিজ্ঞাসা করা হয় যে, তিনি কি ‘পুরুষদের মধ্যে টাইপকাস্ট হয়ে যাচ্ছেন?’এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছিলেন যে, “আমি সব ধরনের চরিত্রেই অভিনয় করতে চাই এবং সবেতেই টাইপকাস্ট হয়ে যেতে চাই। যদিও এই ঘটনা কাকতালীয় ছিল, তবে কাস্ট না করার চেয়ে টাইপকাস্ট অনেক ভাল। এছাড়াও, আমার কাছে বেছে নেওয়ার জন্য শত শত অফার নেই। আর এমন কোনো প্রযোজক নেই যিনি আমার জন্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করবে। আমি যা অফার পাই তা থেকেই বেছে নিয়ে কাজ করি।”
তবে OTT আসায় যে অভিনয়ের সুযোগ বেড়েছে সেই ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই কারোরই। এবং সেখানেই কিছুটা সফল হয়েছেন অমিত। তবে নিজের অভিনয় নিয়ে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ অমিত এরকম কোনো চরিত্রে অভিনয় করতে চাননা যেখানে তিনি কোনো নারী চরিত্রকে অপমান করেছেন। তবে তিনি যে এখন বেশ সুখে শান্তিতে আছেন সে ব্যাপারেও বলতে ভুলেননি তিনি।তিনি বিশ্বাস করেন নিজের ওপর, এছাড়া তিনি ভরসা রাখেন ভগবানের ওপর নিশ্চয় ভালো কিছুই হবে তার সাথে।