দেশে এমন অনেক অলৌকিক মন্দির ও ধাম রয়েছে যা দর্শন করতে দেশ দেশান্ত থেকে লোক জমায়েত হয়। মানুষের বিশ্বাস এইসব মন্দির একবার দর্শন করলেই সমস্ত দুঃখ কষ্ট থেকে মিলবে মুক্তি। এমতাবস্থায় শ্রাবণ মাসকে বিশেষ পবিত্র মানা হয়। দেশের প্রায় সমস্ত শিব মন্দিরে ভক্তদের ভিড় দেখা যায়, যেখানে ভক্তরা শিবের কাছে প্রার্থনা করেন এবং মানত চান। ভগবান শিবের নিছক দর্শনে ভক্তদের কষ্ট দূর হয়, ভোলে বাবাও তাদের মনস্কামনা পূরণ করেন।
প্রসঙ্গত ভারতে আদিদেব শিবের অনেক বিখ্যাত মন্দির আছে, কিন্তু আজ আমরা যে মন্দিরের কথা বলতে যাচ্ছি তা খুবই অদ্ভুত। এই প্রাচীন মন্দিরে ভক্তরা সিঁড়ি বেয়ে উঠলে তারা সঙ্গীতের সুমধুর সুর শুনতে পান, যার কারণে এই মন্দিরটিকে অন্যান্য মন্দির থেকে সম্পূর্ণ আলাদা বলে মনে করা হয়।
আমরা যে অলৌকিক মন্দিরের কথা বলছি সেটি ঐরাবতেশ্বর মন্দির নামে পরিচিত। আশ্চর্য্য এই মন্দিরটি তামিলনাড়ুর কুম্বাকোনাম থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এরাবতেশ্বর মন্দিরটি দ্বাদশ শতকে রাজা দ্বিতীয় চোল দ্বারা নির্মিত বলে বলা হয়। মন্দিরটি প্রাচীন স্থাপত্যের একটি চমৎকার উদাহরণ।
মন্দিরটির নামকরণ করা হয়েছে ঐরাবতা হাতির নামানুসারে। সাধারণত ঐরাবতকে ভগবান ইন্দ্রের সওয়ারী বলেই আমরা জানি। কথিত আছে যে ঐরাবত হাতিটি এই স্থানে ভগবান শিবের উপাসনা করেছিল, এতে প্রসন্ন হয়ে ভগবান শিব তাঁর কাছে আবির্ভূত হয়েছিলেন এবং এইভাবে মন্দিরটির নাম হয় ঐরাবতেশ্বর। বিশেষজ্ঞদের মতে মন্দিরটির স্থাপত্যকলা প্রাচীন দ্রাবিড় শৈলী অনুসরণে তৈরি। বহু পুরোনো হওয়ায় এখন অনেক মন্দিরের অনেকাংশেই ভাঙন দেখা দিলেও ভক্তদের কাছে এর গুরুত্ব আজও একই আছে।
উল্লেখযোগ্য বিষয় এই যে, এই মন্দিরের সিঁড়িতে পা রাখার সময় সঙ্গীতের সুমধুর সুর শোনা যায়, যা ভক্তদেরকে এর দিকে আকৃষ্ট করে। আসলে, এই মন্দিরের প্রবেশদ্বারের কাছে তৈরি সিঁড়িগুলি একটি বিশেষ ধরণের পাথর দিয়ে তৈরি, যার উপর পা রাখলেই একটি অপূর্ব শব্দ তৈরি হয়।
শুধু তাই নয়, আপনি এই সিঁড়িতে মোট সাতটি সুর শুনতে পারবেন, তবে এর জন্য কাঠের সাহায্যে সিঁড়ির পাথরকে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত ঘষতে হবে। এই সিঁড়ির সঙ্গে সামান্য কিছু ধাক্কা লাগলেও তা থেকেও সুর বের হতে থাকে। এই সব কিছুর কারণেই সারা বছর ভক্তদের ভিড় লেগে থাকা ঐরাবতেশ্বর মন্দিরটি দেশজুড়ে বিখ্যাত।
আপনিও যদি এই অলৌকিক মন্দিরটি দেখতে চান তবে জানিয়ে রাখি, ত্রিচি, মাদুরাই এবং চেন্নাইয়ের মতো শহরগুলি থেকে বাসের সুব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়াও, আপনি কুম্বাকোনামে পৌঁছানোর জন্য ত্রিচি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ট্যাক্সি নিয়ে যেতে পারেন, যেখান থেকে মন্দিরের দূরত্ব মাত্র ৩ থেকে ৫ কিলোমিটার।