Jyothy Krishna,Krishnakumar Kunnath,Bollywood,Entertainment,Music,Singer,Sudden Death,জ্যোতি কৃষ্ণ,কৃষ্ণকুমার কুন্নাথ,বলিউড,বিনোদন,সঙ্গীত,সঙ্গীত শিল্পী,আকষ্মিক মৃত্যু

Moumita

ছোট্ট বেলার প্রেম, জ্যোতি এবং ‘কেকে’-র মধুর প্রেমকাহিনী হার মানাবে যে কোনও সিনেমার গল্পকেও

একটা মানুষ কিছুক্ষণ আগেই স্টেজে পারফর্ম করেছিলেন, গান গাইছিলেন মঞ্চে, হঠাৎ করেই শোনা গেলো তিনি আর নেই! ঠিক এমনই ঘটনার সাক্ষী হয়ে রইলো তিলোত্তমা। গত মঙ্গলবার কলকাতার বুকে নজরুল মঞ্চে গান গাইতে গাইতেই প্রায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন “কৃষ্ণকুমার কুন্নাথ” (Krishnakumar Kunnath) ওরফে কে কে (KK)। মঞ্চ থেকেই অসুস্থতা অনুভব করেন তিনি। সেখান থেকে হোটেলে ফিরেই লুটিয়ে পড়েন, তড়িঘড়ি হাসাপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও ফেরানো যায়নি তাঁকে। কর্তব্যরত চিকিৎসক সেখানেই তাঁকে মৃত্যু বলে ঘোষণা করেন।

   

সঙ্গীত জগতের এই নক্ষত্রের অকাল প্রয়াণে স্তব্ধ গোটা দেশ। তিনি সবাইকে ছেড়ে চিরতরে হারিয়ে গেলেও দেশের মানুষের জন্য রেখে গেছেন তার অবিস্মরণীয় গান আর তার অমলিন কিছু স্মৃতি। আর এই স্মৃতির পাতা হাতড়ে উঠে এলো এমন কিছু অজানা তথ্য যা শুনে আরও একবার আবেগপ্রবণ হয়ে উঠেছে আপামর ভারতবাসী। জেনে অবাক হবেন ‘কেকে’-র গাওয়া ‘ইয়ারো দোস্তি’ গানটি তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে বন্ধুত্বের সময়কে মনে করেই গাওয়া।

প্রেমিকা জ্যোতিকে বিয়ের ৮ বছরের মাথায় ১৯৯৯ সালে কেকে-র প্রথম অ্যালবাম ‘পল’ মুক্তি পায়। এই অ্যালবামের বন্ধুত্ব হোক বা প্রেম, সবকটি গান নিজের স্ত্রী জ্যোতিকে ডেডিকেট করেই গাওয়া। পরবর্তীকালে একটি সাক্ষাৎকারে এইকথা নিজেই জানিয়েছিলেন ‘কে কে’। তাঁর কথাতেই জানা যায়, ক্লাস সিক্সে পরিচয় হওয়া ছোট্টো মেয়েটিই তাঁর স্ত্রী, বন্ধু এমনকি তাঁর দিনশেষের আশ্রয়স্থল। তবে ৩১ বছরের এই দাম্পত্য জীবনের পথ এতোটাই মসৃণ ছিলোনা। জীবনে বহু চড়াই উৎরাই একসাথে পার করেছেন দুজন। 

প্রসঙ্গত, দক্ষিণ ভারতের এই সঙ্গীত শিল্পীর বেড়ে ওঠা দিল্লিতে। দ্বিতীয় শ্রেণী থেকেই মঞ্চে গান গাওয়া শুরু করেন তিনি।  জানা যায়, কিশোর কুমার এবং রাহুল দেব বর্মনের ভক্ত ছিলেন। সেখানেই ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ার সময় পরিচয় হয় স্ত্রী জ্যোতির সঙ্গে। ষষ্ঠ শ্রেণী থেকেই শুরু হয় আবেগের আদানপ্রদান, যা সময়ের সাথে সাথে‌ নীবিড় হতে হতে প্রেমের সম্পর্কে গিয়ে পৌঁছায়। কিন্ত কাউকে শুধু ভালোবাসলেই তো হয়না, তার দায়িত্ব নেওয়ার জন্য প্রয়োজন চাকরি। জেনে অবাক হবেন নিজের এক ‘ভালোবাসা’কে কাছে পাওয়ার জন্য অন্য ভালোবাসা’কে দূরে ঠেলে দিয়েছিলেন মেলোডি সম্রাট কৃষ্ণকুমার কুন্নাথ! তখনও গানের জগতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেননি কেকে তাই জীবনের অনিশ্চিত পেশা গান ছেড়ে সেলসম্যানের চাকরি নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তিনি গান বেচতে ভালোবাসেন তিনি কি আর জিনিস বেচতে পারেন? তাই খুব অল্প সময়ের মধ্যেই সেলসম্যানের চাকরি ছেড়ে দেন তিনি। সেই সময় বট গাছের মতো স্বামীর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন জ্যোতি।

চাকরি ছেড়ে সঙ্গীতে মন দিন কৃষ্ণকুমার কুন্নাথ। খুব সহজেই কে কে-এর প্রতিভাকে চিনে ফেলেছিলেন জ্যোতি। কে কে-র সঙ্গীত জীবনে প্রবেশ এবং সেখানে প্রভূত নাম করার পিছনে বিরাট ভূমিকা রয়েছে তার। KK-এর জীবনের সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্ত ছিল মুম্বইতে এসে কেরিয়ার শুরু করা। আর শোনা যায় এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তটিও তাঁর স্ত্রী’ই নিয়েছিলেন। বি-টাউনে এসে ‘হাম দিল দে চুকে সনম’ ছবির ‘তড়প তড়প’ গানটির পর আর ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। এরপর গোটা ইন্ডাস্ট্রি তথা গোটা দেশকে উপহার দিয়েছেন একের পর এক অবিস্মরণীয় রোমান্টিক গান। নিজের কন্ঠের জাদুতে মোহিত করেছে সবাইকে। এমনকি মৃত্যুর আগে অবদি তাঁর সঙ্গী ছিলো গান, তবে এতোকিছুর মধ্যে একা করে দিয়ে গেলেন তাঁর আরেক সঙ্গী তথা বন্ধু, স্ত্রী জ্যোতিকে। বলাই বাহুল্য কে কে-এর এই আকষ্মিক মৃত্যু তার স্ত্রীর জীবনে রেখে গেলো এক অপূরণীয় শূন্যতা।