বিচিত্র এই দুনিয়ায় আমাদের চারপাশে ঘটে যায় কত অদ্ভুত সব ঘটনা। এমনই অদ্ভুত সব রহস্যে ঘেরা আমাদের ভারতীয় মন্দিরগুলি। কোনও মন্দির ইতিহাস তো আবার কোনও মন্দির অতিপ্রাকৃতিক ইতিহাসের সাক্ষী। এই রকমই রহস্যময় একটি মন্দির হলো “বাথু কি লড়ি” মন্দির। জানলে অবাক হবেন বছরের আট মাস জলের তলায় নিমগ্ন থাকে এই মন্দির। এছাড়াও এই মন্দির ঘিরে রয়েছে নানান সব রহস্যময় ঘটনা যা সত্যিই অবাক করার মতো।
পাঠানকোট থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে পং ড্যামের হ্রদে অবস্থিত’বাথু কি লড়ি’ মন্দির। মূলত হিমাচল প্রদেশের কাংড়া উপত্যকার ধামেতা শহর থেকে মাত্র তিন কিলোমিটারের ব্যবধানে রয়েছে এই মন্দিরটি। এর বিশেষত্ব হলো বছরের এপ্রিল থেকে জুন এই আট মাস সম্পূর্ণ জলে নিমজ্জিত থাকে মন্দিরটি। কথিত আছে সত্তরের দশকে একটি হ্রদ তৈরির কারণে মন্দিরটি প্লাবিত হয়ে যায়। তারপর থেকেই বৃষ্টির সময় সম্পূর্ণ জলের তলায় চলে যায় “বাথু কি লড়ি”। বছরে প্রায় আট মাস আর দেখা মেলেনা মন্দিরটির। তাই এপ্রিল থেকে জুন মাসে যখন জলের স্তর হ্রাস পায় তখন মন্দিরটি পুনরায় আবির্ভূত হয়।
আশ্চর্যজনকভাবে এতো দীর্ঘকাল জলের তলায় নিমগ্ন থাকা সত্ত্বেও কোনও ক্ষয় ক্ষতি হয়না মন্দিরটির। কারণ মন্দির তৈরি হয়েছে বাথু নামে অত্যন্ত শক্ত পাথর দিয়ে। মন্দিরের পাথরের গায়ে খোদাই করা আছে কালী ও গণেশের মূর্তি। অভ্যন্তরে রয়েছে ভগবান বিষ্ণু ও তার শেষনাগ। কথিত আছে এই মন্দিরের সাথে যোগসূত্র রয়েছে মহাভারতের।
লোকমুখে শোনা যায় রহস্যে ঘেরা এই মন্দিরটি তৈরি করেছিলেন পান্ডবরা। ছোটো ছোটো ১১ টি মন্দির নিয়ে তৈরি বাথু কি লড়ি। স্থানীয়দের বিশ্বাস এই মন্দির থেকেই স্বর্গের সিঁড়ি তৈরি করেছিলেন পান্ডবরা। তাই এখানে থাকা ৪০ টি সিঁড়িকে আগত দর্শনার্থীরা অত্যন্ত বিশ্বাসের সাথে পূজা করেন।
জনমানব থেকে কিছু দূরে হলেও এই মন্দিরে প্রচুর দর্শনার্থী আসেন এবং এত বছর জলে ডুবে থাকা সত্ত্বেও মহাভারত আমলের এই মন্দিরটি এখনও বহাল তবিয়তে টিকে আছে। তবে এই মন্দিরে পৌঁছাতে হলে একটু কসরৎ করতে হবে আপনাকে। পাঠানকোট থেকে কাংড়া এরপর সেখান থেকে জাসুর হয়ে জাওয়ালি যেতে হয়। সেখানেই এই মন্দিরটি অবস্থিত। দীর্ঘ দ্বীপের মাঝখানে নির্মিত ‘বাথু কি লড়ি’ মন্দির এবং লেকের জলে ঘুরতে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসে এখানে। কিন্তু এই মন্দিরে পৌঁছানোর একমাত্র উপায় নৌকা। এই নৌকা করেই মানুষ পৌঁছায় ‘বাথু কি লড়ি’ মন্দিরে।