কিছু মানুষ ফিল্মি লাইফ যাপন করে এবং কিছু লোক তাদের জীবনের উপর ফিল্ম বানায়। উভয়ের মধ্যে পার্থক্য হল একজন আবেগ নিয়ে বাঁচে এবং অন্যজন আবেগকে হত্যা করে। এইধরনের মানুষরা বলিউডের নজর থেকে বাদ যায়না। বলিউড পরিচালকরা খুঁজে নিয়ে আসেন এই মানুষগুলোর বাস্তব কাহিনীকে। তারপর সেই গল্প আঁকেন পর্দায়। এযাবৎ দেশের অনেক কুখ্যাত গ্যাংস্টারকে নিয়ে ছবি তৈরি হয়েছে বলিউডে। তার মধ্যে রয়েছে মান্য সুরভে থেকে অরুণ গাওলি, হাজি মাস্তান এবং মায়া দোলাসের মতো বিপজ্জনক নাম। আপনি নিশ্চয়ই বড় বড় অভিনেতাদের এই গুন্ডাদের চরিত্রে অভিনয় করতে দেখেছেন, কিন্তু বাস্তব জীবনে কি এই মানুষগুলোর ছবি দেখেছেন?
1. ‘শুটআউট অ্যাট লোখান্ডওয়ালা’ সিনেমার ‘মায়া ডোলস’ : জানা গেছে, ১৯৯১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘শুটআউট অ্যাট লোখান্ডওয়ালা’ ছবিটি আসলে বাস্তব ঘটনা থেকে অনুপ্রাণিত। মুম্বইয়ের ভয়ঙ্কর গ্যাংস্টার ‘মায়া ডোলস’ ও তার সহযোগীদের সঙ্গে পুলিশের এনকাউন্টার হয়। ছবিতে মায়ার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন বিবেক ওবেরয়। জানিয়ে রাখি, মায়া ডোলাসের পুরো নাম ছিল মহেন্দ্র ডোলাস । কিন্তু লোকে তাকে মায়া বলে ডাকতো।
2. ‘ওয়ান্স আপুন আ টাইম ইন মুম্বাই’ ছবির ‘সুলতান মির্জা’ : এই ছবিতে, অজয় দেবগন সুলতান মির্জার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন, যেটা বাস্তব জীবনের গ্যাংস্টার সুলতান হাজি দ্বারা অনুপ্রাণিত। হাজি মাস্তান ছিলেন মুম্বাইয়ের সবচেয়ে বড়ো গ্যাংস্টার। তিনি চোরাচালান, ফিল্ম ফাইন্যান্স ও রিয়েল এস্টেটের ব্যবসাও করতেন। কথিত আছে, দাউদ ইব্রাহিম, ছোট শাকিল, ছোট রাজন এবং অরুণ গাওলিকে প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন হাজি।
3. ‘হাসিনা পার্কার’ ছবির ‘হাসিনা’ : মুম্বাই আন্ডারওয়ার্ল্ডের রানী হিসেবে পরিচিত ছিলেন হাসিনা পারকার । তিনি ছিলেন দাউদের বোন। কথিত আছে যে হাসিনার স্বামী ইব্রাহিম পার্কারকে ১৯৯১ সালে মারাঠি গ্যাংস্টার অরুণ গাওলি খুন করেছিলেন। এরপর থেকে সেও সরাসরি অপরাধে সক্রিয় হয়ে ওঠে। একটা সময় ছিল যখন দক্ষিণ মুম্বইয়ে হাসিনার অনুমতি ছাড়া একটা পাতাও নড়তে পারত না। ‘হাসিনা পারকার’ ছবিতে এই চরিত্রে অভিনয় করেছেন শ্রদ্ধা কাপুর ।
4. ‘রইস’ ছবির ‘ডন’ : ‘রইস’ ছবিতে গুজরাটের মদ মাফিয়া আবদুল লতিফ শেখের চরিত্রে অভিনয় করেছেন শাহরুখ খান । সে গুজরাটে মদ পাচারের পাশাপাশি খুন, চুক্তি কিলিং, চাঁদাবাজি, অপহরণ ও চোরাচালানের মতো অপরাধে জড়িত ছিলো সে। শুধু তাই নয়, ১৯৯৩ সালের মুম্বাই বিস্ফোরণ মামলাতেও তার যোগসূত্র খুঁজে পেয়েছিলো পুলিশ। তার বিরুদ্ধে বোমা বিস্ফোরণের জন্য আরডিএক্স সরবরাহের গুরুতর অভিযোগ ছিল। তিনি ১৯৯৫ সালে দিল্লি থেকে গ্রেপ্তার হন এবং ২ বছর পর ১৯৯৭ সালে আহমেদাবাদে একজন পুলিশ সদস্য তাকে গুলি করে হত্যা করে।
5. ‘ড্যাডি’ সিনেমার ‘গাওলি’ : বিখ্যাত মারাঠি গ্যাংস্টার থেকে রাজনীতিবিদ অরুণ গাওলির জীবন নিয়ে নির্মিত হয়েছে ‘ড্যাডি’ ছবিটি । ছবিতে এই চরিত্রে অভিনয় করেছেন অর্জুন রামপাল । দাউদের সাথে শত্রুতার জন্য পরিচিত গাওলি একসময় মুম্বাই পুলিশের মাথাব্যথা ছিল। দাউদের বোনের স্বামী খুনের ঘটনায়ও তার নাম উঠে আসে। গাওলিকে টাডা আইনে গ্রেফতার করা হয়। তিনি ৯ বছর জেলে ছিলেন। জেল থেকে বেরিয়ে তিনি দাগদি চাউল এলাকা থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিধায়ক হন। বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন অরুণ গাওলি।
6. ‘দয়াবান’ সিনেমার ‘শক্তি’ : প্রয়াত অভিনেতা বিনোদ খান্না অভিনীত ‘দয়াবান’ ছবিতে শক্তি ভেলহু চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন, যা বাস্তব জীবনের ডন ভারদারাজন মুদালিয়ারের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছিল। ভারদারাজন, হাজি মাস্তান এবং করিম লালার ত্রয়ী দীর্ঘকাল মুম্বাই শাসন করেছিলেন। একভাবে তিনি মুম্বাইয়ে বসবাসরত দক্ষিণ ভারতীয়দের মসিহা হয়ে উঠেছিলেন। তবে পুলিশের তাড়া খেয়ে তাকে তামিলনাড়ুতে পালিয়ে যেতে হয় এবং সেখানে বহু কষ্ট পেয়ে মারা যায়। এরপর একটি প্রাইভেট প্লেনে করে তামিলনাড়ু থেকে মুম্বাইয়ে তার মরদেহ নিয়ে এসে শেষকৃত্য করেন হাজি মাস্তান।
7. ‘শুটআউট অ্যাট ওয়াদালা’ সিনেমার মান্য সুরভে : শুটআউট অ্যাট ওয়াডালা’ ছবিতে মান্য সুরভে নামে একজন কুখ্যাত গ্যাংস্টারের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন জন আব্রাহাম । মান্য শিক্ষিত গ্যাংস্টার ছিল। তিনি স্নাতক ছিলেন। জানা যায় মিথ্যা মামলায় তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু জেল থেকে পালিয়ে এসে যোগ দেন অপরাধ জগতে। এতোটাই কুখ্যাত হয়ে উঠেছিলো যে সে সময় তাকে দাউদের সাথে তুলনা করা হয়েছিল। যদিও পরে ওয়াদালায় পুলিশের এনকাউন্টারে মারা যায়।
8. ‘রংবাজ’ ওয়েব সিরিজের ‘শিব প্রকাশ’ : রংবাজ’ ওয়েব সিরিজটিতে শিব প্রকাশের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন অভিনেতা সাকিব সেলিম । এই চরিত্রটি উত্তরপ্রদেশের সবচেয়ে বিখ্যাত অপরাধী শ্রীপ্রকাশ শুক্লার উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছিল । শ্রীপ্রকাশ ছিলেন কুখ্যাত অপরাধী। তার অবৈধ কাজ ইউপি, বিহার, দিল্লি, পশ্চিমবঙ্গ ও নেপালে ছড়িয়ে পড়ে। তার নাম শুনলেই মানুষ কেঁপে উঠত। সাধারণ মানুষ হোক আর রাজনীতিবিদ, কাউকেই তিনি রেহাই দেননি। AK-47 দিয়ে সবাইকে ছেঁকে ফেলতেন শিব প্রকাশ। যাইহোক, ইউপি সিএম কল্যাণ সিংয়ের সুপারি নেওয়ার সাথে সাথে তারও শেষ সময় ঘনিয়ে আসে। মাত্র ২৫ বছর বয়সে তিনি পুলিশ এনকাউন্টারে নিহত হন।
9. ‘গাঙ্গুবাই কাঠিয়াওয়াড়ি’ সিনেমার ‘করিম লালা’ : গাঙ্গুবাই কাঠিয়াওয়াড়ি ছবিতে করিম লালার ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন অজয় দেবগন। করিম লালাকে মুম্বাইয়ের প্রথম মাফিয়া ডন বলে মনে করা হয়, যাকে আন্ডারওয়ার্ল্ড ডন হাজি মাস্তানও আসল ডন বলে মনে করতেন। কথিত আছে মুম্বাইতে করিম লালার নাম উচ্চারিত হলেই, মানুষ ভয়ে কাঁপতো। মুম্বাইয়ের ডন থাকাকালীন অনেক অবৈধ কাজের সাথে তার নাম যুক্ত হয়েছিলো।