মহারাষ্ট্রের অন্তর্গত মুম্বাই শহরকে বলা হয় স্বপ্নপুরী। সবাই যেতে চায় এই মায়ানগরীতে। ছোটবেলা থেকে বলিউড ছবির সৌজন্যে মুম্বাই সারা দেশের যুবক যুবতীর প্রিয় গন্তব্যস্থল। মুম্বাই পৌঁছে কেও বলিউড সিনেমার অভিনেতা অভিনেত্রী হতে চায়, তো কেও সারাজীবন থাকতে চায় শহরের চোখ ধাঁধানো আলোর মধ্যে। অনেকের আবার মনে হয় একবার এই শহরে পা দিকে ফিরে যেতে হবেনা কাওকে, যদিও কথাটা আংশিক সত্যি। এই শহর যেমন গড়ে দিয়েছে অনেকের জীবন, তেমনই অনেকে হারিয়ে গেছেন এই ব্যস্ততার মধ্যে।
আজ তেমনই এক যুবকের গল্প বলবো যিনি তার পোশাকের ব্যবসা ছেড়ে এই স্বপ্নের নগরীতে এসে লাখ লাখ টাকার ব্যবসা করেছেন। তারপর আবার ফিরে গেছেন নিজের গ্রামে, তারপর সব ছেড়ে শুরু করেছেন নিজের কৃষিকাজ। শুনতে খুবই অবাক লাগছে তাই তো? কথাটা শুনে নিশ্চয়ই ভাবছেন স্বপ্নের শহরে এত বড় ব্যবসা করে, এত আরামদায়ক জীবনযাপন করেও কীভাবে গ্রামে ফিরে গিয়ে কৃষিকাজ করা সম্ভব? তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক পুরো গল্প।
আজ আমরা যার নিয়ে কথা বলছি তার নাম মদন সিং সোলাঙ্কি এবং তিনি বর্তমানে রাজস্থানের জালোর জেলার তাদওয়াতে থাকেন। মদন সিং ২০১৪ সালে মুম্বাই থেকে তার ব্যবসা ছেড়ে গ্রামে ফিরে কৃষিকাজ শুরু করেন এবং এখন গ্রামে থেকেই আয় করছেন লাখ লাখ টাকা। এবার নিশ্চয়ই ভাবছেন তিনি আসলে অনেক শিক্ষিত, এবং এই জন্যই এত রোজগার করতে পারছেন তিনি। তাহলে আপনাদের বলে রাখি যে, মদন সিং মাত্র দশম শ্রেণী পাস করেছেন।
তবে ছোট থেকেই চাষের প্রতি তার ছিল অদ্ভূত আকর্ষণ। সর্বক্ষণই কৃষিকার্যে নিত্যনতুন পদ্ধতি ব্যবহারের চেষ্টা করতেন তিনি। কিন্তু অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষা করেও চাষে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন করতে পারেননি তিনি। প্রায় ৫ বছর ধরে এ চাষ করেও কোনো সাফল্য পাননি তিনি। কিন্তু তিনি হাল ছেড়ে না দিয়ে নিজের চেষ্টা চালিয়ে যান। সাফল্য অর্জনের জন্য আরও কঠোর পরিশ্রমের সাথে তিনি আগের চেয়ে দ্বিগুণ উদ্যমে তার কাজে নিযুক্ত হন। আজ তার নতুন এক্সপেরিমেন্ট তার জীবন বদলে দিচ্ছে।
প্রায় ৫ বছর পর ২০১৯ সালে মদন সিং তার ক্ষেতে সবজি চাষ শুরু করেছিলেন। এ ছাড়া তিনি তার খামার বাড়িতে কাঁকরেজ ও গির গরু পালন শুরু করেন, যেখান থেকে তিনি ঘি পেতেন। এরপর তিনি গুজরাটে তার সবজি রপ্তানি শুরু করেছিলেন। এখন তিনি ডালিম এবং পেঁপে চাষ শুরু করেছেন। আজ তার এই শসা জালোর মন্ডিতে আলাদা ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে। মদন জি বলেন, ভবিষ্যতেও তিনি পেঁপে ও ডালিম চাষ করবেন। এবার তিনি তার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা রেখেছেন ১৬০০০০০ টাকা (Indian Rupee)। তবে এবার তিনি এই ডালিম শুধু ভারতে নয়, বাংলাদেশের অন্যান্য দেশেও রপ্তানি করবেন।
শুধু কৃষিকাজ নয়, মদন চাষ করার সময় জল সংরক্ষণের দিকেও মনোযোগ দেয়। মদন সিং বলেন, তার খামারে একটি নলকূপ আছে। যার মধ্যে তার খামারের পলি হাউসে জল সেচের জন্য ড্রিপ সিস্টেমও বসানো হয়েছে। এই কারণে তারা কম জলেই বেশি সেচের সুবিধা পান। এছাড়া জল বাঁচাতে তিনি ফোয়ারার কৌশলও ব্যবহার করেন। যাতে জল বেশি ব্যবহার না হয় এবং তার ক্ষেতের পুরো এলাকা ঢেকে যায়।
মদন সিং-এর মতো মানুষ সেইসব লোকদের জন্য উদাহরণ, যাদের মনে হয় কৃষিকাজ থেকে বেশি আয় করা যায় না। তার কঠোর পরিশ্রম এবং নতুন উপায়ে কৃষিকাজ করার ইচ্ছা তাকে এই পর্যায়ে নিয়ে এসেছে যে আজ তিনি চাষ থেকে লাখ লাখ টাকা আয় করতে সক্ষম হয়েছেন।