“বয়কট বলিউড” ট্রেন্ডে নাস্তানাবুদ হয়ে পড়েছে বলিউড। এবার বলিউডের মতো বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতেও ক্রমশ মাথা চাড়া দিচ্ছে বয়কটের ভূত। আর রাজ চক্রবর্তীর সাম্প্রতিক ছবি ‘ধর্মযুদ্ধ’কেও সেই কাঠগড়ায় দাঁড় করালেন দর্শকরা। অনেক বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে ছবি রিলিজ করলেও বক্স অফিসে তা ধরাশায়ী। ছবিতে দেখানো বেশ কিছু হিন্দু বিরোধী সিন নিয়ে ছবি বয়কটের ডাক দিয়েছে কিছু হিন্দুত্ববাদী সংগঠন।
প্রসঙ্গত, ইতিমধ্যেই সনাতন ধর্মকে বিকৃত করার অভিযোগ উঠেছে বলিউডের বিরুদ্ধে, এবার বাদ গেলোনা বাংলা ইন্ডাস্ট্রিও। দর্শকদের মতে, সম্প্রীতি দেখানোর নামে লাগাতার হিন্দু সংস্কৃতিকে টার্গেট করছে পরিচালক তথা ছবির নির্মাতারা। অভিযোগ, একতরফা দর্শক টানতে সেই একই পন্থা অবলম্বন করেছে তৃণমূলের তারকা বিধায়ক তথা পরিচালক রাজ চক্রবর্তীও।
রাজ চক্রবর্তীর পরিচালিত ছবি ‘ধর্মযুদ্ধ’তে নাকি দেখানো হয়েছে শ্রীমদ্ভগবদগীতার শ্লোক পাঠ করে মানুষের গলা কাটার দৃশ্য। সোশ্যাল এমনটাই দাবি করেছিলেন এক ব্যক্তি। কিছুদিন আগেই নেটিজেনদের এই দাবিকে মিথ্যা বলে দাবি করে পরিচালক বলেন, “ধর্মযুদ্ধ’-এ কোথাও গলা কাটা তো দূরে থাক, এক ফোটা রক্তপাতও দেখানো হয় নি। আর তোমরা সিনেমাটা না দেখেই বয়কটের ডাক দিচ্ছো? তোমরা কী ছাগল না পাগল”?
তবে রাজের এই প্রতিবাদে মানুষের মন গলা তো দূরের কথা বরং আরো বেশি খাপ্পা হয়ে উঠেছে দর্শকবৃন্দ। যে বয়কট ট্রেন্ড এতোদিন শুধুমাত্র সোশ্যাল মিডিয়াতেই সীমাবদ্ধ ছিলো তাই এখন নেমে গেছে রাস্তাতেও। ফিল্ম ক্রিটিকদের থেকে প্রশংসাসূচক বার্তা পেলেও বক্স অফিস কালেকশন যেন উল্টো পায়ে দৌঁড়াচ্ছে। দর্শকহীন প্রেক্ষাগৃহ যেন জানান দিচ্ছে যে, দর্শক চটিয়ে আখেরে লাভ কিছুই হয়না। প্রথম সপ্তাহে সিনেমাটির রোজগার মোটে ২০ লক্ষ।
এবার একইরকমভাবে নেটিজেনদের একাংশের রোষানলে পড়ল ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্তের নতুন ছবি ‘বিসমিল্লা’। এক্ষেত্রে বিষয়টি শুর হয় ‘বিসমিল্লা’ ছবির অভিনেতা ঋদ্ধি সেনের একটি পোস্ট নিয়ে। যেখানে তিনি ছবির টাইটেল ট্র্যাকের দুটো লাইন লিখেছেন, “যত ভাঙন তুলে নিক এ মন, বলতেই হবে বিসমিল্লা। বিসমিল্লাহ মুক্তি পাচ্ছে কালকে।” ঋদ্ধির এই পোস্টের পর থেকেই রীতিমত শোরগোল পড়ে গিয়েছে নেটপাড়ায়। অধিকাংশেরই প্রশ্ন, ‘টলিউড কি এবার জোরপূর্বক বিসমিল্লা বলাবে নাকি’?
ছত্রপতি শিবাজী মহারাজ নামের একটি পেজ থেকে একটি পোস্ট অবদি করা হয়েছে। যেখানে লেখা হয়েছে, ‘নিজের পকেটের টাকা খসিয়ে ‘বিসমিল্লা’ আর ‘ধর্মযুদ্ধ’ – মুভি দেখার কোনো ইচ্ছাই নাই। পকেটের পয়সা খরচ করে নিজের মাথায় গোঁজা ভরে মাথাটাকে আস্ত একটা ডাস্টবিনে পরিণত করতে কে চায়’? সাথে তিনি আরও প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে বলেছেন, ‘পশ্চিমবঙ্গে দাঙ্গা হাঙ্গামা হয়নি এমন নয়, কিন্তু ‘গীতার শ্লোক আওড়ে কেউ বৃদ্ধ নারীর গলায় ছুড়ি বসাচ্ছে’ এই অভিযোগ কোনোদিন কোনো অন্য ধর্মের মানুষও করে নি, করবেও না। গোটা ভারতে এমন দৃষ্টান্ত পাবেন না। এসব দেখিয়ে কাদেরকে ছোট করতে চাইছেন?
‘একজন কৃষ্ণভক্ত নারী মুসলমান বাঁশিবাদকের মধ্যে কৃষ্ণকে দেখছে’ – এটাও দেখতে হবে? ভাই যারা কৃষ্ণভক্ত নারী, তারা মীরা-র মতো। এর তার মধ্যে তারা কৃষ্ণকে দেখে লুল লুল করে তার প্রেমে পড়ে যায় না। বন্ধ করুন এসব … পয়সা দিয়ে এইসব নোংরা উৎপাদন কেন দেখতে যাবো বলতে পারেন?’
‘যারা আপনাদের ফিল্ম দেখে, তাদেরই পয়সা নিয়ে তাদের সমাজকে, তাদের ধর্মকে অসম্মান করছেন? তারাই বা কেন দেখতে যাবে এসব জিনিস, নিজের পয়সা খরচ করে’?