শক্তিগড়,ল্যাংচা,বর্ধমান,অজানা তথ্য,ইতিহাস,Shaktigar,Langcha,Burdwan,West Bengal Unknown Facts,History,পশ্চিম বঙ্গ

Moumita

শক্তিগড়ের ল্যাংচা তো খেয়েছেন? কিন্তু এর পেছনের ইতিহাস জানলে খাওয়ার লোভ আরো বাড়বে আপনার

শক্তিগড়ের ল্যাংচা পছন্দ করেননা এমন মানুষ এই বাংলায় আছে কি না সন্দেহ। আগে তো বর্ধমান আর রাঢ়বঙ্গেই এই মিষ্টির নাম প্রসিদ্ধ ছিল। তবে এখন তো শক্তিগড়ের ল্যাংচার স্বাদে মজেছেন কলকাতা-সহ রাজ্যবাসী। পশ্চিমবঙ্গ ছাড়িয়ে ভিন রাজ্যেও নিয়মিত পাড়ি জমাচ্ছে শক্তিগড়ের ল্যাংচা। তবে জানেন কি এই ল্যাংচা তৈরির পেছনেও রয়েছে একটি সুন্দর ইতিহাস।

   

অনেকের মনেই এই প্রশ্নটা এসে থাকতে পারে যে, এমন সুন্দর একটা মিষ্টির এমন অদ্ভুত নাম কেন? সেই ইতিহাসই জানাবো আজকের প্রতিবেদনে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ইতিহাস ঘাঁটলে জানা যায় যে, কৃষ্ণনগরের রাজকন্যা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন বর্ধমানে রাজকুমারের সঙ্গে। বিয়ের পর রাজপরিবারে আসে খুশির খবর। গর্ভবতী হলেন রাজকুমারী। কিন্তু তারসাথে শুরু হল আরেক বিপত্তি। কোনো খাবারেই আর রুচি নেই তার। কবিরাজি দিনদিন পথ্য তৈরি করে দিলেও রুচি আর ফেরেনা।

এদিকে খাবার না খেয়ে খেয়ে দিনদিন অসুস্থ হতে থাকেন রাজকুমারী। এমন সময় রাজকুমারীর মনে পড়ে যে, তিনি কৃষ্ণনগরে রসে ডোবানো এক ধরনের ভাজা কালো রংয়ের মিষ্টি খেয়েছিলেন। সেই মিষ্টি দারুন পছন্দ হয়েছিল তার। রানিমার কাছে সেই মিষ্টি খাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন তিনি। একটু আশার আলো তো দেখা গেল বটে, কিন্তু এখানে বড়ো প্রশ্ন হয়ে দাঁড়ালো, কীভাবে তৈরি সেই মিষ্টান্ন?

শক্তিগড়,ল্যাংচা,বর্ধমান,অজানা তথ্য,ইতিহাস,Shaktigar,Langcha,Burdwan,West Bengal Unknown Facts,History,পশ্চিম বঙ্গ

এমতাবস্থায় রাজকুমারী জানালেন, যে ময়রার কাছে তিনি সেই মিষ্টি খেয়েছিলেন তার একটা পা খোঁড়া তাই সে বেশ খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটে। রাজা এই কথা শোনামাত্র দিকে দিকে লোক পাঠালেন সেই ময়রার সন্ধানে। অবশেষে কৃষ্ণনগরে পৌঁছে সেই মিষ্টির খোঁজ পাওয়া গেল। আসলে কৃষ্ণনগরেও বেশ প্রসিদ্ধ ছিলেন তিনি। খুঁড়িয়ে বা লেংচে হাঁটার জন্য তাকে সবাই ডাকতো ল্যাংচা ময়রা বলে।

শক্তিগড়,ল্যাংচা,বর্ধমান,অজানা তথ্য,ইতিহাস,Shaktigar,Langcha,Burdwan,West Bengal Unknown Facts,History,পশ্চিম বঙ্গ

রাজার আদেশে তৎক্ষণাৎ তিনি পাড়ি দিলেন বর্ধমানের উদ্দেশ্যে। সেখানে গিয়ে ঘিয়ে ভাজা, লম্বাটে গড়নের কালো রঙের এক অদ্ভুত সুন্দর মিষ্টি তৈরি করে খাওয়ালেন রাজকুমারীকে। অবশেষে রাজকুমারীর মুখের অরুচি ঘুচলো এবং হাসি ফুটলো সবার মুখে। ময়রার নাম অনুসারে এই মিষ্টান্নের নাম রাখা হল ‘ল্যাংচা’। তাকেও উপঢৌকন হিসেবে দেওয়া হলো প্রচুর টাকাপয়সা এবং ভূসম্পত্তি।

শক্তিগড়,ল্যাংচা,বর্ধমান,অজানা তথ্য,ইতিহাস,Shaktigar,Langcha,Burdwan,West Bengal Unknown Facts,History,পশ্চিম বঙ্গ

পরে তিনি বর্ধমানের শক্তিগড়ে এসে শুরু করেন নিজের মিষ্টির দোকান। সেই থেকেই ব্যাপক সুনাম অর্জন করে শক্তিগড়ের এই ল্যাংচা। ছানার সঙ্গে চালগুড়ি মিশিয়ে লম্বা লম্বা আকৃতিতে গড়ে নিয়ে তাকে প্রথমে ঘিয়ে ভেজে নিতে হয়। এরপর চিনির রসে ডুবোলেই তৈরি ল্যাংচা। বর্তমানে শক্তিগড়ের ল্যাংচার এমনই সুনাম যে শুধুমাত্র ল্যাংচা খেতেই লোক আসে এখানে।