SSC Upper Primary Councelling 28 Percent candidates does not appear

SSC-র উচ্চ প্রাথমিকে নিয়োগের শুরুতেই ‘অশনি সংকেত’! এলোই না ২৮% প্রার্থী, চিন্তিত শিক্ষামহল

প্রায় এক দশক ধরে স্থগিত থাকা স্কুল সার্ভিস কমিশনের (SSC) উচ্চ প্রাথমিক নিয়োগ প্রক্রিয়া অবশেষে শুরু হয়েছে। রাজ্যের হাজার হাজার চাকরিপ্রার্থী বহুদিন ধরে এই নিয়োগের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। দীর্ঘ আন্দোলন, আদালতে মামলা ও অপেক্ষার পর অবশেষে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে শুরু হয়েছে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া। তবে এই প্রক্রিয়ার শুরুতেই চমকে দিয়েছে এক পরিসংখ্যান। প্রায় ২৮% প্রার্থীই নাকি অনুপস্থিত!

কেন এই অনুপস্থিতির হার এত বেশি?

সরকারি চাকরির জন্য যখন প্রতিযোগিতা তুঙ্গে, তখন SSC-র মতো গুরুত্বপূর্ণ নিয়োগে প্রার্থীদের অনুপস্থিতি বড় চিন্তার কারণ। অ্যাডভান্সড সোসাইটি ফর হেডমাস্টার্স অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেসের সাধারণ সম্পাদক চন্দন মাইতির মতে, শিক্ষকতার পেশার প্রতি মানুষের বিশ্বাসে ফাটল ধরেছে। দুর্নীতি, স্বজনপোষণ ও নিয়ম বহির্ভূত নিয়োগের কারণে SSC-এর বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বহু প্রার্থী এই অনিশ্চয়তার কারণে অন্য পেশা বেছে নিতে বাধ্য হয়েছেন, এমনকি রাজ্যের বাইরের বেসরকারি স্কুলেও শিক্ষকতা করছেন অনেকেই।

উচ্চ প্রাথমিক নিয়োগের দীর্ঘ লড়াই

২০১৬ সালে উচ্চ প্রাথমিকের ১৪ হাজার ৩৩৯টি শূন্যপদ পূরণের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। কিন্তু এরপর বছরের পর বছর মামলা, মেধাতালিকা প্রকাশ ও পুনর্মূল্যায়নের প্রক্রিয়া চলে। ২০২১ সালে SSC জানায়, পুনর্মূল্যায়নের পর ১,৪৬৩ জন প্রার্থীকে বাদ দেওয়া হয়েছে। যেটা ফের নতুন করে বিতর্কের সৃষ্টি করে। অবশেষে ২০২৩ সালের আগস্ট মাসে এই নিয়োগের জট কেটে যায় এবং রাজ্য সরকার পুনরায় নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করে।

বর্তমান কাউন্সিলিং পক্রিয়া ও তার ভবিষ্যৎ

২রা অক্টোবর, পুজোর আগেই কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে SSC তাদের ওয়েবসাইটে শূন্যপদের তালিকা আপলোড করেছে। ৩ ও ৪ অক্টোবর শুরু হওয়া কাউন্সেলিং চলবে ২৪, ২৫, ২৮ এবং ২৯ অক্টোবরেও। প্রার্থীদের একটি বড় অংশ এখন এই প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করছে। তবে অনেকেই মনে করছেন, এই গরহাজির প্রার্থীদের সংখ্যা রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি অনাস্থার ইঙ্গিত দিচ্ছে। দীর্ঘদিনের জটিলতার কারণে অনেকে এই চাকরিতে আর আগ্রহী নন বা বয়সের সীমা পেরিয়ে গেছেন।

শিক্ষাব্যবস্থার সংকট এবং শিক্ষামন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি

শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু আগেই জানিয়েছিলেন, পুজোর আগেই নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হবে ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এই বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থা যে সংকটের মুখে পড়েছে, তা অনস্বীকার্য। নবম-দশম বা একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির মতো আরও কোন প্যানেল বাতিলের ঘটনা ঘটবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। প্রার্থীরা সুপ্রিম কোর্টের দিকেই তাকিয়ে রয়েছেন, কখন কোন নতুন রায় আসবে।

প্রসঙ্গত, রাজ্যের সরকারি বিদ্যালয়গুলিতে যোগ্য শিক্ষকের অভাব ইতিমধ্যেই শিক্ষার মান অনেকটাই প্রভাবিত হয়েছে বা বলা ভালো কমেছে। যদি SSC তাদের পুরনো বিশ্বাসযোগ্যতা ফিরিয়ে আনতে না পারে, তবে শিক্ষাব্যবস্থায় আরও সংকট দেখা দেবে। শিক্ষকের অভাবে স্কুলগুলোতে ছাত্রসংখ্যাও ক্রমশ কমে আসছে, যা শিক্ষার ভবিষ্যতের জন্য আশঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন দেখার বিষয়, SSC কীভাবে এই সংকট কাটিয়ে ওঠে ও প্রার্থীদের মন থেকে সমস্ত সংশয় দূর করে সেটাই দেখার বিষয়।

Partha Sarathi Manna

Partha Sarathi Manna

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক, রয়েছে রামকৃষ্ণ মিশন থেকে অ্যাডভান্স মাল্টিমিডিয়া ডিগ্রি। পড়াশোনা শেষে বিগত ৪ বছরের বেশি সময় ধরে সাংবাদিকতার সাথে যুক্ত। ডিজিটাল মিডিয়াতে কর্মজীবন শুরু ২০২০ সালে। বিনোদন, লাইফস্টাইল, টেকনোলজি থেকে ভ্রমণ সম্পর্কে লিখতে দক্ষ। তবে পড়াশোনা বিষয়ক লেখালিখিতেও বেশ আগ্রহী। কাজের বাইরে সিনেমা বা ওয়েব সিরিজ দেখতে, ঘুরতে যাওয়াই নেশা মেল - [email protected]

X