গত দুই বছরে করোনার কোপে কাজ হারিয়ে না চাইতেও নিঃস্ব হয়ে পড়েছে দেশের একদল মানুষ। যেখানে কিছু মানুষ অনলাইন শিক্ষায় গা ভাসিয়েছে, সেখানেই কিছু মানুষ সেই সব সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে একা নিজের লড়াই লড়ে গেছে। হাজার বাধা অতিক্রম করে পৌঁছে গেছে সাফল্যের শিখরে। দারিদ্র্য এবং কষ্টকে নিজের হাতিয়ার বানিয়ে তৈরি করেছে নজীরবিহীন উদাহরণ। এমনই এক জ্বলজ্যান্ত উদাহরণ হলো সুহানী। এখন প্রশ্ন আসতে পারে কে এই সুহানী?
সুহানী হলো সেই, যে আজ গর্বের সঙ্গে বলতে পারে, ‘সফলতা আমার কাছে আসেনি আমি সফলতাকে নিজের কাছে এনেছি’। বছর ১৫-এর সুহানী শেখড়ওয়াল এবছর রাজস্থানের মাধ্যমিক পরীক্ষায় নজরকাড়া ফলাফল করেছে। যেখানে রাজস্থানে এমনিই শিঘ্রই বৈষম্য চরমে সেখানে একজন অটোচালকের মেয়ে হয়ে ৯৬ শতাংশ নম্বর নিয়ে মাধ্যমিক পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে সে। শুধু বাবার নামই উজ্বল করেনি সুহানী, উজ্জ্বল করেছে তার স্কুল তথা গোটা রাজস্থানের নাম। এর পাশাপাশি দারিদ্র্য এবং বঞ্চনার মধ্যে থাকা অন্যান্য শিশুদের জন্যও উদাহরণ হয়ে উঠেছে সে।
সুহানীর বাবা পেশায় একজন অটো চালক, নুন আনতে পান্তা ফুরায় তার সংসারে। করোনাকালে অটো বন্ধ হয়ে গেলে বাড়িতেও বন্ধ হয়ে যায় নুন পান্তা টুকুও। তবুও মেয়ের পড়াশোনায় আপোষ করেননি তিনি। এমতাবস্থায় সুহানির মা অন্যের বাড়িতে কাপড়-চোপড় ধুয়ে ঘরের খরচ চালানো শুরু করেন। বড্ডো কঠিন সময়ের মধ্যে গেলেও সাহস হারায়নি পরিবারটি। এই কঠিন সময়ে সুহানী তার মাকে ঘরের কাজে সাহায্য করার পাশাপাশি নিয়মিত পড়াশোনা চালিয়ে যায়। করোনার সময় স্কুল বন্ধ হয়ে গেলে, সুহানী তার মায়ের মোবাইল ব্যবহার করত অনলাইনে পড়াশোনার জন্য।
প্রসঙ্গত, সুহানী জয়পুরের সি-স্কিমে অবস্থিত কাশিবাই ছাগনলাল ধাভেরি স্কুলে পাঠরত। স্কুলের অধ্যক্ষ দেবেন্দ্র কুমার ওয়াজা মুগ্ধ সুহানীর প্রতিভা দেখে। জানা গেছে, মেধাবী হওয়ার কারণে সুহানীর স্কুল ফি আগেই মকুব করে দিয়েছিলেন তিনি। সুহানীর কথায় পরবর্তী কালে কমার্স নিয়ে পড়তে চায় সে। দেশের নামকরা সি এ হওয়ার ইচ্ছে রয়েছে তার।