আজ ১৭ সেপ্টেম্বর বিশ্বকর্মা পূজা। পুজো যেন বাঙালির শারদীয়া উত্সবের আগমনী বার্তা নিয়ে আসে। আর বিশ্বকর্মা পূজা মানেই আকাশে রঙ বেরঙের ঘুড়ির মেলা। পেটকাটি, চাঁদিয়াল, মোমবাতি, বগ্গা, ময়ূরপঙ্খী, কত ধরণের বাহারী নাম। আসলে সনাতন ধর্মে এই বিশেষ দিনটিতে আকাশে ঘুড়ি ওড়ানোর চল রয়েছে যে।
আগে যেখানে এই দিনটা ঘুড়ি ছাড়া ভাবাই যেতোনা এখন কি আর সেই ছবি দেখা যায়? ঘুড়ি ব্যবসায়ীরা বলছেন ‘না’, সিনেমার ভাষায় বলতে গেলে, ঘুড়ি নিয়ে সেই উন্মাদনা এখন অতীতের ফ্ল্যাশ ব্যাক। বছর দশেক আগেও এই দিনটা রঙিন হয়ে উঠতো ভারতের আকাশ। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে সেই রঙ আজ ভো-কাট্টা।
যাইহোক, এখন প্রশ্ন হচ্ছে যে, এই দিনে ঘুড়ি কেন ওড়ানো হয় সেটা জানেন কি? চলুন, আজ তাহলে একটু পুরাণ ঘেঁটে আসি। আসলে পুরাণ মতে, বিশ্বকর্মা হলেন দেবলোকের কারিগর। বলা হয় ব্রহ্মার আদেশে তিনিই নাকি এই ধরাধামের নির্মাণ করেছিলেন। শ্রী কৃষ্ণের দ্বারকা নগরীর নির্মাণকর্তাও নাকি তিনিই।
ঋকবেদ অনুসারে, বিশ্বকর্মা হলেন স্থাপত্য এবং যন্ত্রবিজ্ঞান বিদ্যা অথবা স্থাপত্য বিদ্যার জনক। তার হাতেই তৈরি হয়েছিলো দেবতাদের উড়ন্ত রথ। আর এই বিষয়টি স্মরণ করেই শুরু হয় ঘুড়ি ওড়ানোর চল। ইতিহাস ঘাঁটলে জানা যায়, ১৮৫০ সাল থেকে বাংলায় বিশ্বকর্মা পুজোর দিন আকাশে ঘুড়ি ওড়ানোর প্রচলন শুরু হয়।
শোনা যায় তৎকালীন প্রভাবশালী ব্যক্তিরা নাকি ঘুড়িতে টাকা বেঁধে আকাশে ছেড়ে দিতেন। কেউ কেউ তো আবার নিজের প্রভাব দেখানোর জন্য শুধুমাত্র টাকা দিয়েই বানিয়ে ফেলতো আস্ত এক একটা ঘুড়ি। ব্যতিক্রম ছিলেননা বর্ধমানের রাজবাড়ীও। কথিত আছে, রাজ আমলে বর্ধমান রাজবাড়িতেও ঘুড়ি ওড়ানোর চল ছিল। রাজা মহতাবচাঁদ নাকি নিজেই ঘুড়ি ওড়াতে ভালোবাসতেন।
আর বর্ধমানের রাজ পরিবার নাকি এসেছিলেন পাঞ্জাব থেকে। আর পাঞ্জাবে এই দিনটি ব্যাপক ধুমধাম করে পালন করা হয়। আর সেখান থেকেই নাকি বর্ধমানের ঘুড়ির উৎসব শুরু হয়। তবে আফশোষের বিষয় এই যে, কিন্তু এখনকার শিশু, কিশোর বা যুবকেরা আর কেউ লাটাই হাতে মাঠে বা বাড়ির ছাদে যায় না। সবাই এখন ভিডিও গেম আর মুঠোফোন নিয়ে ব্যস্ত।