বাংলার চলচ্চিত্র জগতের একজন মহীরুহ হলেন সুচিত্রা সেন। তিনি চলে গিয়েছেন বহুকাল হলো, কিন্তু তার রূপের লাবন্য আজও সমান ভাবে মুগ্ধ করে যাচ্ছে সকলকে। বাংলা সিনেমাকে শৈশব থেকে যৌবনে নিয়ে গিয়েছিলেন সুচিত্রা সেন আর উত্তমকুমার। বঙ্গ সিনে ইন্ডাস্ট্রির চিরসবুজ জুটি তারা। দুজনে একসাথে মিলে বাঙালিকে উপহার দিয়েছেন একের পর এক দুর্দান্ত ছবি।
পঞ্চাশ,ষাট ও সত্তর এর দশকে বাঙালিকে নবরূপে প্রেমের দিশেহারা নেশায় মাতিয়ে রেখেছিলেন উত্তম সুচিত্রা। প্রাপ্তবয়স্ক বাঙালি দর্শকদের কাছে তারা দুজনায় হয়ে ওঠেন প্রেমের উদাহারণ। কীভাবে ভালোবাসতে হয় থেকে কীভাবে ভালোবাসায় বেঁধে রাখতে হয়, তা যেন বাঙালিকে শিখিয়ে দিয়ে গিয়েছেন এই জুটি।
উত্তম সুচিত্রার জুটি নিয়ে তো আর কম ইতিহাস নেই, কিন্তু জানেন কি উত্তম কুমার মারা যাওয়ার পর তার নিথর দেহের সামনে দাঁড়িয়ে কি বলেছিলেন সুচিত্রা সেন? মৃত স্বর্গ পথযাত্রী তার মহানায়ককে উদ্দেশ্য করে কি বলেছিলেন তিনি? ১৯৮০ সালে শেষবারের মত নিশ্বাস ত্যাগ করেন মহানায়ক। সময়টা গভীর রাত আড়াইটা, সেসময় উত্তম কুমারের ভাতৃবধুই নাকি ফোন করেন সুচিত্রা সেন কে।
ফোন ধরার পর নির্মম সেই সংবাদ শুনে তাকে ডাকলে তিনি ব্যথা জড়িত কন্ঠে শুধু বলতে পেরেছিলেন ‘দেখছি’। এরপর মাত্র ৩০ মিনিটেই ফুলের তোড়া নিয়ে মহানায়কের বাড়িতে হাজির হয়েছিলেন মহানায়িকা সুচিত্রা। মহানায়িকা এসে কিছুক্ষণ ঠায় পাথরের মত দাঁড়িয়ে ছিলেন । শেষে শুধু বলেছিলে। ‘আমি হেরে গেলাম উত্তম।’ ব্যাস সেই শেষ কথা আর কোনো কথা বলেননি সুচিত্রা।
তবে এবার গণমাধ্যমে উত্তম সুচিত্রার যে ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে তাই দেখে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছেন নেটিজেনরা। আসলে চিরসবুজ এই জুটিকে সিনেমাতে দেখলেই বাঙ্গালির অন্তরের প্রেম পুনরুজ্জীবিত হয়ে ওঠে। প্রসঙ্গত উত্তম-সুচিত্রা জুটির প্রথম হিটছবি সাড়ে চুয়াত্তর। এরপর একেরপর এক রোম্যান্টিক ছবিতে দেখা যায় দুজনাকে। আসতে থাক পথে হলো দেরী, মরণের পর, শাপমোচন, শিল্পী, সাগরিকা, হারানো সুর, সবার উপরে, সূর্যতোরণ, চাওয়া-পাওয়া, সপ্তপদী, জীবনতৃষ্ণা, রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত, ইন্দ্রাণী, চন্দ্রনাথ, আলো আমার আলোর মতো অন্তত ৩০টির বেশি রোম্যান্টিক ছবি।
এই জুটির একে অপরকে যে কতটা সম্মান দিয়ে চলতেন তা তাদের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট দেখা যায়। উত্তম কুমার স্বয়ং এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন যে,‘‘সুচিত্রা পাশে না থাকলে আমি কখনোই উত্তম কুমার হতে পারতাম না। এ আমার বিশ্বাস। আজ আমি উত্তম কুমার হয়েছি, কেবল ওর জন্য।’’ বস্তুত পর্দার বাইরেও তাদের সম্পর্ক বেশ মধুর ছিল। মাঝখানে অনেকটা সময় পেরিয়ে গিয়েছে, সাদা কালো ছেড়ে এসেছে নিত্য নতুন প্রযুক্তির পসার, কিন্তু উত্তম সুচিত্রা জুটির সিনেমা আজও জন মানষে বিরাট বিখ্যাত।