মহালায়ার আর মাত্র ১৮ দিন বাকি। পিতৃপক্ষের অবসান এবং দেবীপক্ষের সূচনা এই দিনটির গুরুত্ব অপরিসীম। এই মহালয়া আসা মানেই যেন বাঙালির প্রাণের দুর্গোৎসবের সূচনা। ভোরের আলোর ফোটার আগে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠে সংস্কৃত স্তোত্রপাঠ ও দেবীর আগমনী বার্তা শুনে দিন শুরু করে বাঙালিরা। আকাশবাণীতে ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ শেষ হওয়ার পরেই ছোট পর্দায় শুরু হয় মহালয়ার অনুষ্ঠান।
একটা সময় ছিল মানুষের ঘরে ঘরে রেডিও থাকতো তার কদরও ছিল দারুণ। তবে এখনকার মোবাইল আর ইন্টারনেটের যুগে সেই চল অনেকটাই কমে এসেছে। এখন টেলিভিশনের চ্যানেলগুলি বিভিন্ন অভিনেতা-অভিনেত্রীদের নিয়ে মহালয়ার অনুষ্ঠান করে থাকে। সমাজের একাংশ এখনও রেডিওতে বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের আওয়াজে মজে থাকলেও একাংশ আজকাল টেলিভিশনে মত্ত।
এর মধ্যে প্রতিবছর বিশেষ জল্পনা চলে কে মহিষাসুরমর্দিনী রূপে ধরা দিচ্ছেন সেই নিয়ে। এ নিয়ে একে অপরের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমে পড়ে চ্যানেল কর্তৃপক্ষগুলিও। তবে প্রথম যখন টেলিভিশন এসেছিলো তখন এতো চ্যানেলের রমরমা ছিলোনা। ছিলোনা এতো রেষারেষি। কিন্তু তখনও কিন্তু টেলিভিশনে মহিষাসুরমর্দিনী হত। আর সেখানে মা মহাময়ার ভূমিকায় দেখা যেত সংযুক্তা বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Sanjukta Banerjee)।
সংযুক্তা বন্দ্যোপাধ্যায়, তিনিই ছিলেন দূরদর্শনের প্রথম মহিষাসুরমর্দিনী। তার অভিনয় এতোটাই সাবলীল যে কোনো ভিএফএক্স এর ধার ধারতেন না তিনি। আজও পাড়ার মা কাকিমাদের মুখে সেই পুরোনো দিনের মহালয়ার গল্প শোনা যায়। অভিনেত্রীর চোখের দীপ্তি, তেজ আর এক্সপ্রেশনের প্রশংসায় মুখর হয়ে ওঠে বাঙালির বৈঠকখানা।
১৯৯৪ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত মহিষাসুরমর্দিনী রূপে হাজির হয়েছেন তিনি। এখন তার জায়গায় নতুন মুখ এলেও তিনিই যেন সেরা। সাজপোশাকের বাহার, উন্নত গ্রাফিক্স, ক্যামেরার কারসাজি বাড়লেও তাকে ছাপিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা এখনও কারো হয়নি, এমনটাই মত বাঙালির। প্রসঙ্গত, শ্রী শিক্ষায়তন কলেজে প্রথম বর্ষে পড়ার সময়ই মহালয়ার অনুষ্ঠানে দেবী দূর্গার জন্য মনোনীত হয়ে যান সংযুক্তা। টানা দুই মাস ধরে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিলো তাকে।
ত্রিশূল, চক্র ধরা, ফাইট সিকোয়েন্স সবকিছু হাতে ধরে শেখানো হয়েছিলো তাকে। সেইসময় নির্দেশনার দায়িত্বে ছিলেন সনৎ মোহান্ত। নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ির চিত্রনাট্য আর পরিচালক প্রযোজক শর্মিষ্ঠা দাশগুপ্তের তত্ত্বাবধানে নির্মিত হয়েছিলো মহালয়ার অনুষ্ঠান। সেই মহালয়া দেখে মানুষ যেন শান্তি পেয়েছিলো মনে। তবে একথা খুব কম মানুষই জানেন যে, সেই সংযুক্তা বন্দ্যোপাধ্যায় এখন কানাডা নিবাসী। সেখানেই একটি নাচের স্কুল রয়েছে তার। তবে পুজো যেন তার রক্তে মিশে আছে। আজও দেশ বিদেশের নানা জায়গায় পুজোর অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকেন তিনি এবং তার শিক্ষার্থীরা।