এককালে বেশিরভাগ রাজপ্রাসাদ গুলি ছিলো সাধারণ মানুষের জন্য নিষিদ্ধ। রাজপরিবারের সদস্য ছাড়া সেই প্রাসাদে কেউ ঢুকতে পারতোনা। চোখ ধাঁধানো ঐশ্বর্য, সুন্দর সুন্দর সব সাজসজ্জা আজ সবই রয়ে গেছে কেবল ইতিহাসের পাতায়। এরমধ্যে সেগুলির অস্তিত্ব আজও রয়ে গেছে সেগুলি সব আজ মিউজিয়ামে পরিণত হয়েছে। সেখানে গিয়ে সৌন্দর্য চোখে তো দেখা যায় কিন্তু বিশাল লাইনের ধাক্কা খেতে খেতে ঠিক যেন উপভোগ করা যায়না।
তবে কেমন হয় যদি এরকমই রাজপ্রাসাদে দিন কয়েক থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। ভাবুন তো, এইসব রাজৈশ্বর্য উপভোগ করতে করতে জানলা দিয়ে দেখছেন দৃশ্যরা সব ছুটে ছুটে যাচ্ছে। পৃথিবীর বেশ কয়েকটি বিলাসবহুল ট্রেন রয়েছে যা আপনাকে এই স্বর্গীয় অনুভুতি এনে দিতে পারে।
১) মহারাজা এক্সপ্রেস (ভারত) : প্রথমেই বলবো ভারতের মহারাজা এক্সপ্রেসের কথা। পৃথিবীর সেরা ৫ টি বিলাসবহুল ট্রেনের মধ্যে এটি একটি। মহারাজা এক্সপ্রেসে পা রাখলেই আপনার মনে হবে কোনো ঐতিহাসিক রাজমহলে চলে এসেছেন আপনি। ট্রেনটিতে পাবেন অকল্পনীয় আতিথেয়তা। বার থেকে শুরু করে এক্সপেনসিভ সমস্তকিছুই মজুদ থাকবে আপনার হাতের কাছে। ২০১২,২০১৩ এবং ২০১৪ পরপর তিন বছর সেরা বিলাসবহুল ট্রেনের উপাধি পেয়েছিলো ভারতের এই ট্রেনটি।
২) রয়্যাল স্কটসম্যান (ইউরোপ) : ইউরোপের রয়্যাল স্কটসম্যান এই বিলাসবহুল ট্রেনটিতে একবারে মাত্র ৪০ জন লোক আসতে পারে। ব্রাস পলিশিং এবং সুন্দর ফ্যাব্রিক সহযোগে সজ্জিত করা হয়েছে এর অভ্যন্তরটি। দামী ওয়াইন, খাবার দাবারের রাজকীয় ঐশ্বর্য দেখতে পাবেন এখানে। তার সাথে থাকবে দূর্দান্ত সব প্রাকৃতিক দৃশ্য।
৩) ডেকান ওডিসি (ভারত) : ডেকান ওডিসিকে ভারতের ‘ ব্লু ট্রেন’ও বলা হয়। এটি দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় বিলাসবহুল ট্রেন। এটি এর সোনালী অভ্যন্তর দিয়ে আপনাকে অবাক করবে। ট্রেনের ভেতর পুরোটাই সোনালি রঙের মোড়কে ঢাকা। এখানে আপনি প্রাসাদের মতো সাজসজ্জার পাশাপাশি দেশ বিদেশের নানানরকম খাবার থেকে শুরু করে স্পা সবকিছুই পাবেন।
৪) রোভোস রেল (আফ্রিকা) : ১৯৮৯ সালে সূচনা হওয়ার পর থেকে, রোভোস রেল তার বিশ্বমানের ট্রেন অভিজ্ঞতার জন্য আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেছে। এই বিলাসবহুল ট্রেনে মাত্র ৭২ জন ভ্রমণ করতে পারবেন ষ। এর স্থাপত্য, এন্টিক ফার্নিচার থেকে শুরু করে সাজসজ্জা সবকিছুই চমৎকার। এই ট্রেনে ভ্রমণ নিজের মধ্যেই এক অনন্য অভিজ্ঞতা আনবে।
৫) এল ট্রান্সকান্টাব্রিকো ট্রেন (স্পেন) : রেলপথে এমন একটি বিলাসবহুল হোটেলের কল্পনা করুন যেঠানে আপনি ২০ শতকের ট্রেনের নস্টালজিয়া এবং ২১ শতকের প্রযুক্তির মেলবন্ধন উপভোগ করতে পারবেন। উত্তর স্পেনের মধ্য দিয়ে যাওয়া এই ট্রেনটি আধুনিক সুযোগ-সুবিধা থেকে শুরু করে সমস্ত ধরনের ব্যবস্থা আপনার জন্য প্রস্তত থাকবে। এটিতে, একবারে মাত্র ৫২ জন মানুষই এই সুন্দর ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিতে পারে।
৬) প্যালেস অন হুইলস (ভারত) : মহারাজাদের জীবনযাত্রা কেমন ছিলো তা বুঝতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই এই ট্রেনে আসতে হবে। বিলাসবহুল কেবিন, অতুলনীয় ওয়ালপেপার, চমৎকার সব আসবাবপত্রের সাথে আপনাকে মুগ্ধ করবে এখানকার আতিথেয়তা। পৃথিবীর চতুর্থ বিলাসবহুল ট্রেন আখ্যা পাওয়া ‘প্যালেস অন হুইল’ ট্রেনটি রাজকীয়ভাবে রাজস্থান ঘোরানোর জন্য একেবারে চমৎকার।
- ৭) বেলমন্ড হিরাম বিংহাম (দক্ষিণ আমেরিকা) : দক্ষিণ আমেরিকার এই ট্রেনটি পুরো যাত্রা জুড়ে সুন্দর দৃশ্য দেখায়। ৩.৫ ঘন্টার ট্রিপে, আপনাকে সুস্বাদু খাবারের সাথে ওয়াইন পরিবেশন করা হবে। হিরাম বিংহাম ট্রেনটির নাম ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিরাম বিংহাম থেকে এসেছে।
৮) দ্য গোল্ডেন চ্যারিয়ট (ভারত) : এই তালিকায় ভারতের গোল্ডেন চ্যারিয়ট ট্রেনের নাম থাকবেনা, তা কি হতে পারে? যারা বিশ্বকে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে চান তাদের জন্য এটি একটি নিখুঁত ট্রেন। এই ট্রেনটি ভেতর থেকে দেখতে প্রাচীন মন্দিরের মতো। আপনি পুরো যাত্রা জুড়ে উপভোগ করতে পারেন আয়ুর্বেদিক মাসাজ, পাশাপাশি শরীরচর্চার জন্য রয়েছে জিমও। ২০১২ সালে এটি এশিয়ার লিডিং লাক্সারি ট্রেইন খেতাব পায়।
আপনি যদি রাজা-মহারাজাদের অনুভূতি পেতে চান, তাহলে অবশ্যই একবার এই ট্রেনে যাত্রা করুন।