Papiya Paul

এবার টাকেও গজাবে চুল, মেয়ের চুল পড়ার সমাধান করতে গিয়ে অভিনব তেল বানিয়ে ফেললেন ৮৫ বছরের দম্পতি

মেয়ের চুল পড়ার সমস্যা দূর করতে গিয়ে টাকে চুল গজানোর তেল তৈরি করে ফেললেন ৮৫ বছরের দম্পতি। শুনতে অবাক লাগলেও এই ঘটনাটি সত্যি এবং এটি সুরাটের ঘটনা। সারা জীবন কর্মক্ষেত্রে ব্যস্ত থাকার পর দুজনেই অবসর গ্রহণ করেন। কিন্তু এই অবসর নেওয়ার সময় ব্যবসায়ে বিনিয়োগের ঝুঁকি নিয়ে নেন এই দম্পতি। আর্থিক মুনাফা অর্জন করা তাদের লক্ষ্য ছিল না, তাদের প্রধান লক্ষ্য ছিল মেয়ের চুল পড়ার সমস্যা দূর করা। আর তাই গবেষণা শুরু করে দেন এই দম্পতি।

   

টাকে চুল গজানোর জন্য ইতিমধ্যেই বহু গবেষণা হয়ে গিয়েছে। বহু কোম্পানি তাদের প্রোডাক্ট বাজারে বিক্রি করেছে। এবার যেন এক নতুন ভাবে টাকে চুল গজানোর সমাধান খুঁজে বার করেছেন ৮৫ বছরের রাধা কৃষ্ণ চৌধুরী এবং তার স্ত্রী সশকুন্তলা চৌধুরী। অবসরের পর নিজেদের বিশ্রাম নেওয়া থেকে বিরত রেখে ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত গবেষণায় ঢুকেছিলেন রাধাকৃষ্ণবাবু। সারাদিনরাত তাকে এভাবে গবেষণা করতে দেখে তার সঙ্গে যুক্ত হন তাঁর স্ত্রীও। ২০১০ সালেই পারিবারিক ব্যবসা থেকে অবসর নিয়েছেন রাধাকৃষ্ণবাবু। দীর্ঘ ৫০ বছর কর্মজীবন শেষের পর অবসরের আনন্দ দারুণভাবে উপভোগ করছিলেন তিনি।

এরপরে গত বছরে হঠাৎ করেই তার মেয়ের চুল পড়ার সমস্যা নিয়ে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েন বৃদ্ধ দম্পতি। তাদের নতুন ভাবে পথ চলা শুরু হয়। তারা কিন্তু মেয়েকে সঠিক খাবার খাওয়া, বাজার চলতি তেল মাখার পরামর্শ দেননি বরং নিজেরাই সমাধান করতে চেয়েছিলেন। রাধাকৃষ্ণ বাবু বলেন যে চুল পড়া বন্ধ করার জন্য নানা কথা শোনা যায়। কেউ বলেন হেয়ার মাস্ক লাগান, ভেষজ তেল ব্যবহার করুন, ঘরোয়া টোটকা সমাধান করুন, তবে তিনি এই সব কিছুতে সন্তুষ্ট হতে পারছিলেন না। নতুন কিছু করার চেষ্টা করছিলেন। এরপর একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে এই টাক পড়া সমস্যা নিয়ে ইন্টারনেটে পড়াশোনা শুরু করে দেন।

এরপর বেশ কিছু বইপত্র জোগাড় করে ফেলেন আর তারপর শুরু হয় রাতদিন গবেষণা। কয়েক মাস ধরে তাদের এই গবেষণায় চলেছিল। তিন মাস নানা বইপত্র ঘেঁটে পঞ্চাশটা ভেষজ দিয়ে একটি তেল তৈরি করেন ওই দম্পতি। তেল তৈরী করলেই তো হল না কাজে লাগছে কিনা সেটাও তো দেখতে হবে? একদিন নিজের টাকে তেল মেখে নিলেন রাধাকৃষ্ণবাবু। তারপরেই ঘটল এক আশ্চর্য ঘটনা! কয়েকদিন পরেই তার মাথায় কয়টি চুল গজিয়েছে বলে তিনি দেখতে পান। এরপরে বিনামূল্যে নিজের আত্মীয় স্বজন, বন্ধুবান্ধবদের কাছে তেল বিলি করেন। প্রত্যেকের কাছে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পাওয়ার পর এই তেলের ব্যবসা শুরু করার কথা মাথায় আসে দম্পতির।

যদিও ব্যবসা শুরুর আগে টানা তিন মাস তারা নিজেদের মাথায় এই তেল মেখে নিশ্চিত হয়েছিলেন। তাদের দাবি এই তেল মাখার পর চুল পড়া ও চুল গজানো দুটোই হয়েছে। দুজনে নেমে পড়েন ব্যবসার ময়দান। নারকেল, কালো তিল, জলপাই, কালো জিরে-সহ ৫০টিরও বেশি ভেষজ এবং এসেনশিয়াল অয়েল দিয়ে কোল্ড প্রেসড পদ্ধতিতে বাড়িতেই তৈরী করে ফেলেন তেল। তারা এটাও জানিয়েছেন, এই তেলে কোনও রাসায়নিক, সুগন্ধি বা কৃত্রিম দ্রব্য মেশান না। নিজেদের সামান্য পুঁজি নিয়েই নিজের বাড়িতে তেল তৈরি করা শুরু করেছিলেন তাঁরা। গত মাসেই তাঁদের এই প্রচেষ্টার কথা সংবাদমাধ্যমেও প্রকাশিত হয়।এমনকি নিজেরাও ইনস্টাগ্রামের মাধ্যমে প্রচার করা শুরু করে দেন।

এরপরে এই তেলের চাহিদা বিপুল পরিমানে বাড়তে থাকে। তবে তারা জানিয়েছেন, চাহিদা অনুযায়ী তারা তেল সরবরাহ করতে পারছেন না। কারখানা নেই, লোক নেই নিজের বাড়ির মধ্যেই তৈরী হচ্ছে তেল। হাজারে এক জনকে তেল পৌঁছে দিতে পারছেন তারা। কিন্তু ক্রেতাদের ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া তাদের এই ব্যবসা আরও বাড়ানোর দিকে উৎসাহী করে তুলছে। ভবিষ্যতে চাহিদা অনুযায়ী তেল বিক্রি করার চেষ্টায় আছেন এই দম্পতি।