সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশিকা জারি করেছে, যেখানে বলা হয়েছে যে রাস্তা, জলাশয় বা রেললাইনের কাছে বেআইনি নির্মাণকে সরিয়ে দিতে হবে। এই নির্দেশ বিশেষভাবে ধর্মীয় কাঠামো, যেমন মন্দির, দরগা, গুরুদ্বার ইত্যাদির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে। দেশের ধর্মনিরপেক্ষতার গুরুত্ব তুলে ধরে আদালত জানিয়েছে, কোনও ধর্ম বা সম্প্রদায়ের প্রতি বিশেষ সুবিধা বা বৈষম্যের সুযোগ নেই। এই সিদ্ধান্ত সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা ও যাতায়াতের সুবিধার জন্য অত্যন্ত জরুরি।
ধর্মনিরপেক্ষতার উপর জোর
বিচারপতি বিআর গভাই ও বিচারপতি কেভি বিশ্বনাথনের নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্ট এই শুনানি পরিচালনা করেন। আদালত পরিস্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছে, ভারত একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র, এবং সমস্ত নাগরিকের জন্য আইন সমানভাবে প্রযোজ্য হবে। বেআইনি দখলদারি ও নির্মাণের ক্ষেত্রে এই বুলডোজার নীতি শুধুমাত্র এক সম্প্রদায়ের জন্য নয়, বরং সমস্ত সম্প্রদায়ের জন্যই সমানভাবে প্রয়োগ করা হবে।
বিচারপতি গভাই আরও জানিয়েছেন যে, বেআইনি বিল্ডিং বা কাঠামোর ক্ষেত্রে একটি সুস্পষ্ট আইন থাকা অত্যন্ত জরুরি। আদালতের মতে, কোনও অপরাধে অভিযুক্ত হওয়া মানেই তার সম্পত্তি ভাঙা যাবে, এমনটা নয়। কেবলমাত্র যদি নাগরিক বিধি ভাঙা হয়, তখনই আইনের প্রয়োগ হতে পারে।
বুলডোজার নীতি: অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা
বুলডোজার নীতি নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন রাজ্যে বিতর্ক হয়েছে। গুজরাট, উত্তরপ্রদেশ ও মধ্যপ্রদেশের মতো রাজ্যগুলোতে এই নীতির প্রয়োগ বেশি দেখা গিয়েছে। এই বিষয়ে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহেতা আদালতের সামনে জানান, কোনও ধর্মীয় কাঠামো বা সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বিশেষভাবে এই নীতির প্রয়োগ করা হচ্ছে না। অপরাধের জন্য বুলডোজার অ্যাকশন নেওয়ার আগে সব ধরনের আইনগত প্রক্রিয়া মেনে চলা হয়।
ধর্মীয় কাঠামো সরানোর নির্দেশ
সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, যদি কোনও দরগা, মন্দির বা অন্য কোনও ধর্মীয় কাঠামো রাস্তার মাঝখানে, পাবলিক রোড বা জলাশয়ের উপর নির্মিত হয়, তবে তা সরিয়ে ফেলতে হবে। সাধারণ মানুষের যাতায়াতে সমস্যা তৈরি হলে বা নিরাপত্তার বিষয়টি ক্ষতিগ্রস্ত হলে, ধর্মীয় কাঠামোকে সরানো বাধ্যতামূলক হবে। এটা গুরুদ্বারা, দরগা বা মন্দির, যাই হোক না কেন, সব ক্ষেত্রেই এই নির্দেশ প্রযোজ্য হবে।
সুপ্রিম কোর্টের আদেশের প্রতিক্রিয়া
সুপ্রিম কোর্টের এই সিদ্ধান্তের পর, বিভিন্ন রাজ্যে প্রশাসন এই নির্দেশ মেনে চলার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিশেষত যেখানে রাস্তা বা পাবলিক জায়গায় ধর্মীয় কাঠামো আছে, সেগুলিকে সরানোর জন্য পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। এই রায় দেশের ধর্মনিরপেক্ষতা রক্ষার পাশাপাশি, সাধারণ মানুষের যাতায়াতের সুবিধা ও নিরাপত্তার বিষয়টিকেও গুরুত্ব দিয়েছে। মন্দির বা দরগা সরানোর বিষয়টি ধর্মের উপর নির্ভর না করে, জনস্বার্থের উপর ভিত্তি করেই নির্ধারিত হবে।