শ্রী ভট্টাচার্য, কলকাতা: মুকেশ আম্বানি (Mukesh Ambani Property) এবং নীতা আম্বানির বিলাসবহুল বাসস্থান ‘অ্যান্টিলিয়া’ কেবল ভারতেই নয়, সমগ্র বিশ্বে একটি প্রতীক হয়ে উঠেছে। ১৫,০০০ কোটি টাকার এই প্রাসাদটি মুম্বাইয়ের একটি অভিজাত এলাকায় অবস্থিত। কিন্তু এখন এই বাড়িটি নিয়ে নতুন বিতর্ক দেখা দিয়েছে। এই দাবিটি নতুন মোড় নিয়েছে এবং যদি ওয়াকফ সংশোধনী বিল পাস হয়, তাহলে কি আম্বানিকে তার বাড়ি খালি করতে হবে?
সম্প্রতি, ওয়াকফ (সংশোধনী) বিলটি লোকসভা এবং রাজ্যসভায় পাস হয়েছে এবং এখন এটি রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। ওয়াকফ সম্পত্তির ব্যবস্থাপনা ও প্রশাসন উন্নত করার জন্য ১৯৯৫ সালের ওয়াকফ আইন সংশোধনের জন্য এই বিলটি আনা হয়েছে। ওয়াকফ সম্পত্তির প্রশাসনে স্বচ্ছতা বৃদ্ধি এবং এর উন্নত ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য এই পদক্ষেপ করা হয়েছে।
কী দাবি ওয়াকফ বোর্ডের?
ওয়াকফ বোর্ডের দাবি, এই অ্যান্টিলিয়া ওয়াকফ বোর্ডের জমিতে তৈরি। সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্রমশ ভাইরাল হচ্ছে যে এই জমিটি আগে একটি এতিমখানার ছিল এবং ২০০২ সালে বিক্রি হয়ে গিয়েছিল। কিছু পুরনো ভিডিও ক্লিপে, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল এবং AIMIM প্রধান আসাদুদ্দিন ওয়াইসিও এই বিষয়ে মন্তব্য করেছেন। এই বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন রাজনীতিবিদ এবং সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের মধ্যে বিতর্ক চলছে।
অ্যান্টিলিয়া জমির আসল মালিক কে?
AIMIM নেতা আসাদুদ্দিন ওয়াইসি একটি বিবৃতি দিয়েছেন যে মুকেশ আম্বানির বাড়ি ‘অ্যান্টিলিয়া’ যে জমিতে অবস্থিত, সেটি মূলত কেবল চ্যারিটির জন্য ছিল। প্রতিবেদন অনুসারে, জমিটি করিম ভাই ইব্রাহিম নামে একজন ধনী জাহাজ মালিক একটি ট্রাস্টকে দান করেছিলেন। এই জমিটিতে মূলত ‘করিমভয় ইব্রাহিম খোজা ইয়াতীমখানা’ নামে একটি এতিমখানা ছিল। ১৮৯৫ সালে এই এতিমখানার মালিক ছিলেন করিম ভাই। তবে, এতিমখানা সহ জমিটি ১৯৮৬ সালে ওয়াকফ বোর্ড পরিচালিত একটি চ্যারিটি প্রতিষ্ঠানে দান করা হয় কেবল ধর্মীয় শিক্ষা এবং এতিমদের থাকার জন্যই। কিন্তু এখন সেখানে গড়ে উঠেছে আম্বানির ২৭ তলার প্রাসাদ। এই অত্যাশ্চর্য বাড়িটির মূল্য এখন প্রায় ৪.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং এটি সবচেয়ে ব্যয়বহুল আবাসিক সম্পত্তিগুলির মধ্যে একটি।
অ্যান্টিলিয়া কীভাবে পেলেন আম্বানি?
কথা উঠছে যে ২০০২ সালে ওয়াকফ বোর্ড পরিচালিত ট্রাস্টটি চ্যারিটি কমিশনারের সাথে যোগাযোগ করে এবং জমি বিক্রির অনুমতি চায়। তিন মাস পর বোর্ড অনুমতি পায়। চ্যারিটি সংস্থাটি মুকেশ আম্বানির পরিচালিত একটি বাণিজ্যিক বেসরকারি কোম্পানির কাছে জমিটি মোট ২.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে বিক্রি করে। খবর অনুসারে, জমিটি কেবলমাত্র সুবিধাবঞ্চিত উদ্ধার করা শিশুদের জন্য একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণের উদ্দেশ্যে বরাদ্দ করা হয়েছিল। মুকেশের সংস্থা, যেটি এই জমিটির নাম দেয় ‘অ্যান্টিলিয়া কমার্শিয়াল প্রাইভেট লিমিটেড’। এটি বাজার মূল্যের চেয়ে কম দামে বিক্রি করা হয়। এই ধরণের বিক্রয় ওয়াকফ আইনের ৫১ ধারার সরাসরি লঙ্ঘন ছিল, যার ফলে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলিকে মহারাষ্ট্র রাজ্য ওয়াকফ বোর্ডের অনুমোদন নিতে হয়েছিল।
ওয়াকফ মন্ত্রী নবাব মালিক, মহারাষ্ট্র সরকারের সাথে মিলে এই বিক্রির বিরোধিতা করেন, যার ফলে জমির উপর স্থগিতাদেশ জারি করা হয়। প্রাথমিকভাবে, ওয়াকফ বোর্ডও এই চুক্তিকে চ্যালেঞ্জ করে এবং ট্রাস্টের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে একটি আবেদন দায়ের করে। তবে, আদালত আবেদনটি খারিজ করে দেয়। অবশেষে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হয় এবং বোর্ড তাদের আপত্তি প্রত্যাহার করে নেয়।
আরও পড়ুন: ১৫ দিন ঘরে ঘুরুন গোটা উত্তর-পূর্ব ভারত, দুর্দান্ত ট্যুর প্যাকেজ আনল IRCTC, খরচ কত?
এই পুরো বিতর্কের মধ্যে, একটিই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ওঠে যে যদি ওয়াকফ বোর্ডের দাবি সঠিক হয়, তাহলে কি মুকেশ আম্বানি এবং নীতা আম্বানিকে অ্যান্টিলিয়া ছেড়ে যেতে হবে? যদিও রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পরই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, তবে এই বিষয়টি এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।