শ্রী ভট্টাচার্য, কলকাতা: আপনি হয়ত জানেন যে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মরুভূমিটা বালিতে ভরা, কিন্তু সত্যটা খুবই ভয়াবহ (Worlds Largest Desert)। ১ কোটি ৪২ লক্ষ বর্গকিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত অ্যান্টার্কটিক মরুভূমি পৃথিবীর বৃহত্তম মরুভূমি। এটি একটি তুষারাবৃত মেরু মরুভূমি, যেখানে সারা বছর ধরে তুষারের ঘন চাদর ঢাকা থাকে। এখানকার ঠান্ডা এবং কম আর্দ্রতা এটিকে মরুভূমিতে পরিণত করে।
মরুভূমি বলতে কেবল উত্তপ্ত, বালুকাময় এলাকা বোঝায় না। বৈজ্ঞানিকভাবে, মরুভূমি হল এমন একটি স্থান যেখানে বৃষ্টিপাত খুব কম (বার্ষিক ২৫০ মিমি এর কম)। অ্যান্টার্কটিকায় আর্দ্রতা এবং বৃষ্টিপাত উভয়ই ন্যূনতম, যে কারণে এটিকে মেরু মরুভূমি বলা হয়। এখানকার তাপমাত্রা -৮৯.২° সেলসিয়াসে নেমে যেতে পারে। অ্যান্টার্কটিক মরুভূমিতে পেঙ্গুইন, সীল এবং অ্যালবাট্রসের মতো প্রাণী বাস করে, যারা ঠান্ডা পরিবেশ ছাড়া বেঁচে থাকতে পারে না। ক্রিল, একটি ছোট সামুদ্রিক প্রাণী, এখানকার খাদ্য শৃঙ্খলের ভিত্তি। মেরু ভালুক এবং আর্কটিক শিয়ালের মতো প্রাণী আর্কটিক অঞ্চলে পাওয়া যায়।
উল্লেখ্য, বৃহত্তম মরুভূমির তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে আর্কটিক মরুভূমি, যা ১.৩৯ কোটি বর্গকিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত। এটিও একটি মেরু মরুভূমি, তবে অ্যান্টার্কটিকার তুলনায় কিছুটা উষ্ণ। এটি উত্তর মেরু, গ্রিনল্যান্ড, কানাডা এবং রাশিয়ার কিছু অংশ জুড়ে বিস্তৃত। এখানেও তুষারপাত এবং কম আর্দ্রতা এটিকে মরুভূমিতে পরিণত করে।
আরও পড়ুন: কম খরচে ঘুরে আসুন শিলং-তাওয়াং-কাজিরাঙ্গা, গরমের ছুটিতে বেড়ানোর সেরা প্যাকেজ IRCTC-র
তাহলে সাহারা মরুভূমি কী?
আর এরপরে আসে সাহারা মরুভূমি, যা ৯২ লক্ষ বর্গকিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত। এটি বিশ্বের বৃহত্তম উষ্ণ মরুভূমি, যা আফ্রিকার ১১টি দেশে বিস্তৃত। এখানকার তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছাতে পারে এবং বালির টিলাগুলির সাথে ক্যাকটাস এবং উটের মতো প্রাণীদেরও অবাধ আচরণ। মনে রাখবেন, দুই ধরণের মরুভূমি রয়েছে: মেরু এবং অ-মেরু। অ্যান্টার্কটিক এবং আর্কটিকের মতো মেরু মরুভূমিগুলি বরফে ঢাকা এবং অত্যন্ত ঠান্ডা। সাহারা বা থরের মতো অ-মেরু মরুভূমিগুলি গরম বা ঠান্ডা হতে পারে এবং বালি বা পাথর দিয়ে ঢাকা থাকে। উভয় স্থানেই বৃষ্টিপাতের অভাব একই রকম।
প্রসঙ্গত, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অ্যান্টার্কটিক মরুভূমি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বরফ গলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পেতে পারে। সাহারায় মরুভূমি বৃদ্ধি পাচ্ছে, যার কারণে চাষযোগ্য জমি হ্রাস পাচ্ছে। উভয় মরুভূমির সংরক্ষণ বিশ্ব পরিবেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বলা বাহুল্য, অ্যান্টার্কটিক এবং আর্কটিক হল বৈজ্ঞানিক গবেষণার কেন্দ্র, যেখানে জলবায়ু পরিবর্তন, হিমবাহ এবং জীববৈচিত্র্যের উপর গবেষণা করা হয়। সাহারায় প্রাচীন মানব দেহাবশেষের মতো প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার ইতিহাসবিদদের মুগ্ধ করে। এই মরুভূমিগুলি পর্যটন এবং বিজ্ঞান উভয়ের জন্যই অমূল্য।