শ্রী ভট্টাচার্য, কলকাতা: কল্পনা করুন, পাহাড়ের মধ্যে একটি সুন্দর হ্রদ দেখতে গিয়েছেন। হঠাৎ আপনি সেখানে অনেক মানুষের কঙ্কাল দেখতে পেলেন, এমন সময় আপনি কী করবেন? হিমালয়ের রূপকুণ্ড হ্রদের (Terrifying Lake) গল্পও একই রকম। ১৯৪২ সালে, ব্রিটিশ বনরক্ষীরা এখানে শত শত মানুষের কঙ্কাল খুঁজে পেয়েছিলেন বলে জানা যায়। এই সময়কালে হ্রদটি সম্পূর্ণরূপে মানুষের কঙ্কাল এবং হাড়ে ভরে উঠেছিল। এতটুকু পড়েই আশ্চর্য লাগছে তাই না! তাহলে বাকিটা জানি চলুন।
এই হ্রদে মানুষের এত কঙ্কাল এল কোথা থেকে?
৫,০২০ মিটার উচ্চতায় ত্রিশূল পর্বতের কাছে অবস্থিত এই ছোট হ্রদটি শীতকালে বরফে ঢাকা থাকে। কিন্তু গ্রীষ্মকালে, যখন বরফ গলে যায়, তখন ৬০০-৮০০ মানুষের কঙ্কাল জলে ভাসতে দেখা যায়। প্রাথমিকভাবে, অনেকেই অনুমান করেছিলেন যে এই কঙ্কালগুলি জাপানি সৈন্যদের হতে পারে যারা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিমালয় পর্বতমালার মধ্য দিয়ে ব্রিটেন আক্রমণ করার জন্য ভারতে প্রবেশের চেষ্টা করার সময় মারা গিয়েছিলেন। সেই সময়, জাপানি আক্রমণের আশঙ্কায়, ব্রিটিশ সরকার তাৎক্ষণিকভাবে এই মানব কঙ্কালগুলি পরীক্ষা করার জন্য বিজ্ঞানীদের একটি দলকে ডেকে পাঠায়। তদন্তের পর দেখা যায় যে, এই কঙ্কালগুলি জাপানি সৈন্যদের নয়, বরং এই পুরুষ কঙ্কালগুলি আরও পুরনো।
এরপর, সময়ে সময়ে এই কঙ্কালগুলি পরীক্ষা করা হয়েছিল। এই পরীক্ষার ভিত্তিতে, বিজ্ঞানীদের বিভিন্ন মতামত উঠে এসেছে। অনেক বিজ্ঞানী বলছেন যে বহু বছর আগে এখানে তুষারধসের কারণে অনেক মানুষ মারা গিয়েছিল, আবার অন্য বিজ্ঞানীরা বলছেন যে এই মানুষগুলো কোনও মহামারীর কারণে মারা গিয়েছিল। এককথায় বলতে গেলে, রূপকুণ্ড হ্রদে কেন মানুষের কঙ্কাল আছে? এ বিষয়ে বিজ্ঞানীদের কোন ঐক্যমত্য নেই।
তবে, ২০০৪ সালের একটি গবেষণায় রূপকুণ্ড হ্রদ সম্পর্কিত অনেক চমকপ্রদ তথ্য উঠে আসে। এই গবেষণার মাধ্যমে জানা যায় যে, এই কঙ্কালগুলি দ্বাদশ থেকে পঞ্চদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ের। ডিএনএ পরীক্ষার পর অনেক নতুন জিনিস প্রকাশ পেয়েছে। আরও জানা গিয়েছেযে এই কঙ্কালগুলি বিভিন্ন ভৌগোলিক স্থানের। অবশেষে, বিজ্ঞানীরা বললেন যে এই মানুষগুলো অনেক আগেকার দিনের। মাথায় কিছু ভারী বল আকৃতির জিনিস পড়েই নাকি মৃত্যু হয় তাঁদের।
আরও পড়ুন: ভারতেই রয়েছে ‘মিনি-ইজরায়েল’, স্বর্গের চেয়েও নাকি সুন্দর তার পরিবেশ! যাবেন কীভাবে?
এমন সময়, আপনি জেনে অবাক হবেন যে এরই সঙ্গে জড়িয়ে আরও এক রাজার কাহিনী। কনৌজের রাজা যশধবল, তাঁর গর্ভবতী স্ত্রী রানী বলম্পা এবং ভৃত্যদের সঙ্গে, নন্দা দেবী মন্দিরে তীর্থযাত্রায় গিয়েছিলেন। এই হ্রদটি এই পথেই অবস্থিত। লোকেরা বিশ্বাস করে যে রাজার বিলাসিতা এবং অনুপযুক্ত আচরণ নন্দা দেবীকে ক্ষুব্ধ করেছিল। আর হিমালয় পর্বতমালায় বসবাসকারী মহিলাদের একটি বিখ্যাত লোকগানে এই দেবীকে সম্ভবত বর্ণনা করা হয়েছে। লোকসঙ্গীত অনুসারে, এই দেবী বাইরে থেকে আসা রাজার ওই দলের উপর ক্রুদ্ধ হয়ে যান। এই ক্রোধে তিনি প্রচণ্ড শিলাবৃষ্টি ঘটান, যার ফলে অনেক মানুষ প্রাণ হারান। এটি উল্লেখযোগ্য যে ২০০৪ সালে করা গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে হঠাৎ তীব্র শিলাবৃষ্টির কারণে এই মানুষগুলি প্রাণ হারিয়ে থাকতে পারে। আজও, এই রূপকুণ্ড হ্রদের অনেক রহস্য এই হ্রদের মধ্যেই চাপা পড়ে আছে। হ্রদে প্রবেশ কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। মানুষ বলে যে এখানে প্রায়ই অনেক রহস্যময় ঘটনা ঘটে।