শ্রী ভট্টাচার্য, কলকাতা: সম্পদ বণ্টনের দিক থেকে ভারত বিশ্বের শক্তিশালী দেশগুলিকে পিছনে ফেলে দিয়েছে। দেশের শীর্ষ ১% ধনী ব্যক্তিদের কাছে দেশের ৪১% সম্পদ রয়েছে, যা আমেরিকা ও চিনের চেয়েও বেশি। গ্লোবাল ওয়েলথ রিপোর্ট অনুসারে, ভারতের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে কেবল ব্রাজিল। ব্রাজিলের শীর্ষ ১% ধনী ব্যক্তিদের কাছে ৪৮.৪% সম্পদ রয়েছে, যা বিশ্বের সর্বোচ্চ। এই ক্ষেত্রে ভারত দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে, যেখানে ৪১% সম্পদের মালিক ১% মানুষ।
গ্লোবাল ওয়েলথ রিপোর্টের পরিসংখ্যান (Global Wealth Report)
গ্লোবাল ওয়েলথ রিপোর্ট ২০২৩ অনুসারে, জার্মানি (৩০%), দক্ষিণ কোরিয়া (২৩.১%) এবং ফ্রান্স (২১.২%) এর মতো দেশগুলিও ভারতের পিছনে রয়েছে। তবে, উদ্বেগের বিষয় হল, ভারতের মাত্র ১% সম্পদের মালিক ৪১% মানুষ। এই পরিসংখ্যান সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা প্রতিফলিত করে।
ভারতেও ধনীরা আরও ধনী হচ্ছে!
অক্সফাম দাবি করেছে যে শীর্ষ ১০ জন ধনী ব্যক্তির উপার্জন একজন সাধারণ মানুষের ৭,২৬,০০০ বছরের কঠোর পরিশ্রমের সমান। এই পরিসংখ্যান দেখায় যে ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে ব্যবধান আরও বেড়েছে। ভারতের শীর্ষ ১% ধনী ব্যক্তি ৪১% সম্পদের মালিক হওয়ায়, এটা স্পষ্ট যে সম্পদের বণ্টন খুবই অসম। সাধারণ মানুষ যখন তাদের দৈনন্দিন চাহিদা পূরণের জন্য সংগ্রাম করছে, তখন ধনীদের সম্পদ আকাশছোঁয়া। এই পরিস্থিতি দেশের অর্থনৈতিক নীতির উপর প্রশ্নও উত্থাপন করে। এ প্রসঙ্গে, অক্সফ্যামের রেবেকা রিডেল বলেন, ধনীদের সম্পদ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, কিন্তু সাধারণ মানুষ মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য আকুল হয়ে আছে। আমেরিকায় একজন সাধারণ মানুষ বার্ষিক ৫০,০০০ ডলার আয় করেন, যা ধনীদের আয়ের তুলনায় নগণ্য। এই পরিস্থিতি বিশ্বব্যাপীও উদ্বেগের বিষয়। যদিও ভারতের অর্থনীতি নিয়ে একটি ইতিবাচক দিকও রয়েছে।
তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হবে ভারত?
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদন অনুসারে, ২০৩০ সালের মধ্যে জার্মানি এবং জাপানকে ছাড়িয়ে তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, ভারত ২০২৫ সালের জন্য তার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ৬.৫% থেকে কমিয়ে ৬.২% এবং ২০২৬ সালের জন্য ৬.৩% থেকে কমিয়ে ৬.২% করেছে , যেমনটি আইএমএফের ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুকের এপ্রিল ২০২৫ সংস্করণে প্রকাশিত হয়েছে।
বর্তমানে বিশ্বের ১০ বৃহত্তম অর্থনীতির তালিকা
২০২৫ সালের এপ্রিল মাসের বর্তমান জিডিপি (বর্তমান মূল্য) অনুসারে বিশ্বের শীর্ষ দশটি বৃহত্তম অর্থনীতির তালিকা নিচে দেওয়া হল।
মর্যাদাক্রম | দেশ | জিডিপি (মার্কিন ডলার) | ২০২৫ সালের প্রক্ষেপিত বাস্তব জিডিপি (% পরিবর্তন) | মাথাপিছু জিডিপি (বর্তমান মূল্য) (মার্কিন ডলার) |
১ | মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র | ৩০.৩৪ ট্রিলিয়ন ডলার | ২.৭০% | ৩০.৫১ হাজার |
২ | চিন | ১৯.৫৩ ট্রিলিয়ন ডলার | ৪.৬০% | ১৯.২৩ হাজার |
৩ | জার্মানি | ৪.৯২ ট্রিলিয়ন ডলার | ০.৮০% | ৪.৭৪ হাজার |
৪ | ভারত | ৪.৩৯ ট্রিলিয়ন ডলার | ১.১০% | ৪.১৯ হাজার |
৫ | জাপান | ৪.২৭ ট্রিলিয়ন ডলার | ৬.৫০% | ৪.১৯ হাজার |
৬ | যুক্তরাজ্য | ৩.৭৩ ট্রিলিয়ন ডলার | ১.৬০% | ৩.৮৪ হাজার |
৭ | ফ্রান্স | ৩.২৮ ট্রিলিয়ন ডলার | ০.৮০% | ৩.২১ হাজার |
৮ | ইতালি | ২.৪৬ ট্রিলিয়ন ডলার | ০.৭০% | ২.৪২ হাজার |
৯ | কানাডা | ২.৩৩ ট্রিলিয়ন ডলার | ২.০০% | ২.২৩ হাজার |
১০ | ব্রাজিল | ২.৩১ ট্রিলিয়ন ডলার | ২.২০% | ২.১৩ হাজার |
আরও পড়ুন: ঘরে ঘরে ঢুকবে AI, বাড়বে চাকরির সুযোগ! ৭৫০০০ কোটি দিয়ে এই রাজ্যের ভাগ্য বদলাবে আম্বানি
আমেরিকা এবং চিনও পিছনে!
এই পরিসংখ্যান ভারতের ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে গভীর ব্যবধান দেখায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ ১% সম্পদের মালিক ৩৪.৩%, এবং চিনের মালিক ৩১.১%, যা ভারতের চেয়েও কম। গত এক বছরে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি ইলন মাস্কের সম্পদ ১৮৬ বিলিয়ন ডলার বেড়েছে। অক্সফামের প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে আমেরিকার শীর্ষ ১০ জন ধনী ব্যক্তির সম্পদ প্রতিদিন ১ বিলিয়ন ডলার করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই ব্যবধান বিশ্বব্যাপী সম্পদের বৈষম্যকে তুলে ধরে। ওদিকে আবার, আমেরিকায়, রিপাবলিকান পার্টি এমন একটি বিল নিয়ে বিতর্ক করছে যা ধনীদের আরও বেশি সুবিধা দিতে পারে। অক্সফাম বলছে যে বিলটির ফলে দরিদ্রদের জন্য ১ ট্রিলিয়ন ডলারের কর্মসূচি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এটি এমন একটি পদক্ষেপ হতে পারে যা সম্পদের বৈষম্য আরও বাড়িয়ে তুলবে।