কৃশানু ঘোষ, কলকাতাঃ অপারেশন সিঁদুর, ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধবিরতি, ট্রাম্পের মধ্যস্থতার দাবী – এই সমস্ত কিছু কাটিয়ে হয়ে গিয়েছে বেশ কিছুদিন। আর তার এতদিন পরে হঠাৎ করেই “ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে পারমাণবিক যুদ্ধ” এড়ানোর জন্য ট্রাম্পকে কৃতিত্ব দিয়ে নোবেল শান্তি পুরষ্কার দেওয়ার জন্য মনোনীত করার আহ্বান জানিয়েছেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির। আর, এবার সেই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া দিয়েছে আমেরিকা। চলুন জেনে নেওয়া যাক বিস্তারিত।
গত ২২ এপ্রিল, ভারতে ঘটে যাওয়া পহেলগাঁও হামলার বদলা নিতে সিঁদুর অভিযান চালায় ভারতের সশস্ত্র সেনাবাহিনী। যার পর মে মাসে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক সংঘাত শুরু হয়। তবে, সেই সংঘাত মিটে গেলেও, কোনরকম জঙ্গিমূলক কার্যকলাপ যে ভারত মেনে নেবে না, তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। অন্যদিকে, ভারত-পাকি সংঘাতের মধ্যস্থতা করে, যুদ্ধবিরতির সম্পূর্ণ ক্রেডিট নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প।
কী প্রতিক্রিয়া দিল রয়টার্স?
আর এবার মার্কিন রাষ্ট্রপতির মধ্যস্থতার দাবিকেই সত্যি বলে দাবি করে, আরও এক ধাপ এগিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরষ্কার দেওয়ার জন্য মনোনীত করার আহ্বান জানালেন পাক সেনাপ্রধান। আর পাক সেনাপ্রধানের এই কর্মকাণ্ডেই বেজায় খুশি হয়ে, তাঁকে হোয়াইট হাউজে মধ্যাহ্নভোজে করার আহ্বান জানিয়েছেন স্বয়ং রাষ্ট্রপতি ট্রাম্প! এক্ষেত্রে উল্লেখ্য, এই প্রথম কোন মার্কিন রাষ্ট্রপতি পাকিস্তানের কোন সেনাপ্রধানকে হোয়াইট হাউজে আমন্ত্রণ জানালেন।
হোয়াইট হাউজের পাক সেনাপ্রধানের সাথে ট্রাম্পের বৈঠকের কিছু সময় পূর্বে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাথে ফোনে ৩৫ মিনিট কথা বলেন মার্কিন রাষ্ট্রপতি, যেখানে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী দৃঢ়তার সাথে স্পষ্ট করেছেন যে ৭-১০ মে ভারত ও পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর মধ্যে যে সামরিক সংঘাত হয়েছিল, তার যুদ্ধবিরতি সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে – কোনও বহিরাগত মধ্যস্থতার মাধ্যমে নয়।
মুনিরের প্রশংসা করেন ট্রাম্প!
অন্যদিকে, রয়টার্সের এক প্রতিবেদন অনুসারে, আসিম মুনিরের সাথে বৈঠক করার পর ট্রাম্প জানিয়েছেন যে, পাক সেনাপ্রধান মুনিরের সাথে দেখা করতে পেরে তিনি সম্মানিত বোধ করছেন এবং তারা ইরান নিয়েও আলোচনা করেছেন। ট্রাম্প জানিয়েছেন, অন্যান্য সমস্ত দেশের তুলনায় পাকিস্তান ইরান সম্পর্কে অনেক বেশি জানে। এর পাশাপাশি ভারতের সাথে যুদ্ধ শেষ করার জন্য মুনিরকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রপতি।
বৈঠকের মূল কারণ ইরান-ইজরায়েলের যুদ্ধ?
সম্প্রতি ইরান ও ইজরায়েলের মধ্যে চলা যুদ্ধের আবহে এই বৈঠক সম্পর্কে একাধিক কূটনীতিবিদ একাধিক ধারণা পোষণ করেছেন। রয়টার্স-এর ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশেষজ্ঞদের কিছু অংশ মনে করছেন, এই বৈঠকে মুনির, ট্রাম্পকে ইরান ও ইজরায়েলের যুদ্ধে না জড়াতে, এবং যুদ্ধবিরতির জন্য চাপ দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। কারণ, ইরান ও ইজরায়েলের মধ্যে চলা এই যুদ্ধে প্রথম থেকেই ইরানকে সমর্থন জানিয়ে আসছে পাকিস্তান।
আবার একাধিক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, সম্প্রতি ইরানকে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের হুঁশিয়ারি দিয়েছিল আমেরিকা, না মানলে ইরানের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধেও নামতে প্রস্তুত তারা। তাই, ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামার ক্ষেত্রে, পাকিস্তানকে কাছে পেতেই মুনিরকে হোয়াইট হাউজে ডেকেছেন বলে দাবি করছেন তারা। তবে, আদেও কেন এই বৈঠক, কী হবে আদতে? সবের উত্তর পাওয়া যাবে সময় এলেই!