শ্রীজিতা ঘোষ, কলকাতা: একেবারে হৃদয় ছুঁয়ে যাবে এই গল্প, একইসঙ্গে অনুপ্রেরণাদায়কও বটে। বিদিশা বর-এর গল্প শুধুমাত্র একজন কিশোরীর সংগ্রামের কথা নয়, এটা এক অবিচল স্বপ্নের, অটুট জেদের, এবং অদম্য পরিশ্রমের প্রতিচ্ছবি। সুন্দরবনের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে উঠে এসে NEET-এর মতো কঠিন পরীক্ষায় ৪২ হাজার র্যাঙ্ক—এটা সাধারণ কোনও ঘটনা নয়।
যেখানে অনেক পড়ুয়া প্রফেশনাল কোচিং, আধুনিক সুবিধা, এবং আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্যের ভিতর থেকেও সাফল্য পেতে লড়াই করে, সেখানে বিদিশার এই সাফল্য যেন এক নিঃশব্দ বিদ্রোহ সব প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee), বাংলার ছেলেমেয়েদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ার লক্ষ্যে দয়েছিলেন ট্যাব। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসে আর অভাবের তাড়নায় পরে সেই ট্যাবও বিক্রি করতে হয়েছে তাকে। তবে, ওই যে কথায় আছে সব ভালো যার শেষ ভালো, তাই হয়তো নিজেদের অভাবী সংসারকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে কঠোর পরিশ্রম করে আজ NEET-এ সফল হয়েছেন।
তবে, যে ট্যাবলেট পড়ার জন্য দেওয়া হয়েছিল, সেটা বিক্রি করতে বাধ্য হওয়া—এইগল্প কিন্তু একা বিদিশা বরের নয়। এই গল্প বাংলার অনেক ঘরেরই। কিন্তু যা তাঁরা বিক্রি করেননি, সেটা হল স্বপ্ন। বিদিশার ট্যাব বিক্রি হয়েছে, কিন্তু স্বপ্ন বিক্রি হয়নি। আর সেই স্বপ্নকে নতুন করে জ্বালিয়ে তুলেছিলেন তাঁর এক সহৃদয় শিক্ষক, যিনি একটি স্মার্টফোন দিয়ে শুধু একটি ডিভাইস দেননি—একটি ভবিষ্যৎ তৈরি করে দিয়েছেন।
ইউটিউবের ভিডিয়ো দেখে পড়াশোনা করে NEET-এ সফল হওয়া দেখিয়ে দেয় প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার। একটা ছোট্ট মুঠোফোন কেমন করে হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে বিদিশা আর তাঁর শিক্ষক। বিদিশার মত আরও অনেকের জন্য এই গল্পটা একটা আশার আলো।
স্বপ্নের কোনও দাম হয় না, যত অভাবই থাকুক। একজন শিক্ষকের সহযোগিতায় একজন ছাত্রের জীবন বদলে যেতে পারে। ইচ্ছা, জেদ আর পরিশ্রম থাকলে প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার করে অভাবকেও হারানো সম্ভব তা দেখিয়েছে বিদিশাই। বিদিশাকে অসংখ্য শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। বাংলার এই মেয়ের ডাক্তার হওয়ার যাত্রা যেন আরও অনেক বিদিশার অনুপ্রেরণা হয়ে ওঠে।