দেশেই প্রায় ২ কোটি টাকার চাকরি, তাক লাগালেন যাদবপুরের পড়ুয়া

Jadavpur University

দেশেই প্রায় ২ কোটি টাকার চাকরি, তাক লাগালেন যাদবপুরের পড়ুয়া

Srijita Ghosh

Published on:

শ্রীজিতা ঘোষ, কলকাতা: যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের (Jadavpur University) কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (Computer Science and Engineering) বিভাগের ছাত্র উপায়ন দে বেঙ্গালুরুর একটি বহুজাতিক ডেটা সিকিউরিটি কোম্পানিতে চাকরি পেয়েছেন, যার বার্ষিক প্যাকেজ প্রায় ১ কোটি ৪৫ লক্ষ টাকা। এই বেতন বাংলার প্রেক্ষাপটে অত্যন্তই বিরল এবং যাদবপুরের ইতিহাসে এক নজিরবিহীন সাফল্য। সাধারণত এত বড় বেতনের চাকরি বিদেশের কোম্পানি থেকে পাওয়া যায়, কিন্তু উপায়ন দেশেই থেকে এই সুযোগ পেয়ে তা আরও অনুপ্রেরণামূলক হয়ে উঠেছে।

দেশপ্রেম ও আদর্শ

উপায়নের (Upayan De success) অন্যতম বিশেষত্ব হল তার বিদেশ না যাওয়ার মনোভাব। সে বলেছে, ‘দেশ ছেড়ে যেতে চাই না’। তার এই সিদ্ধান্তের পেছনে রয়েছে তার পরিবারের শিক্ষা এবং অবশ্যই তার দেশপ্রেম। মা তাকে ছোট থেকে দেশর জন্য কিছু করতে এমনই বলেছেন, যা উপায়নও চায়। এই মানসিকতা বিশেষ করে বর্তমান সময়কে এক বিশেষ বার্তা দেয়, যেখানে অনেক প্রতিভাবান তরুণ চাকরিসূত্রে বিদেশে পাড়ি জমান, সেখানে উপায়ন তার মায়ের কথায় এবং দেশপ্রেমের জন্য দেশে থেকেই কাজ করতে চান।

শিক্ষাগত ও ব্যক্তিত্বগত গুণাবলী

উপায়ন (Upayan De) ২০১৯ সালে আইসিএসই পরীক্ষায় দেশের তৃতীয় স্থান অর্জন করেছেন, যা তার অ্যাকাডেমিক দক্ষতার পরিচয় দেয়। পাশাপাশি, তিনি যাদবপুরে শুধুমাত্র পড়াশোনা নয়, বরং ফেস্ট অর্গানাইজেশন, কোডিং ক্লাব পরিচালনা এবং আন্তর্জাতিক প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে বহুমুখী প্রতিভার প্রমাণও দিয়েছেন বারংবার। তার এসব কর্মকাণ্ড তাকে শুধু সাফল্যের শিখরে পৌঁছে দেয়নি, বরং সহপাঠীদের মধ্যেও জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছে দিয়েছে।

পরিবারের ভূমিকা

এ কথা বলাই বাহুল্য, পরিবারের শিক্ষাদান ও মূল্যবোধের জাগরণ তার সাফল্যের অন্যতম ভিত্তি। বাবা মণীশ দে, যিনি বিজ্ঞানী (Scientist) এবং মা রূপা দে, গৃহিণী (Housewife)। তাকে তার বাবা-মাই বারংবার দেশপ্রেম ও দায়িত্ববোধের শিক্ষা দিয়েছেন। মা বলেছেন, ‘দেশে থেকে দেশের মাটিতে পড়াশোনা করে, দেশকে ভুলে গেলে হবে না’—এই কথাই উপায়নের মনে ভিটামিনের ক্যপসুলের মতো কাজ করেছে। সে নিজেও চায় দেশে থেকে কাজ করতে।

বিশ্ববিদ্যালয় ও সমাজের ভূমিকা

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম বিভিন্ন নেতিবাচক খবরের সঙ্গে যুক্ত হলেও উপায়নের সাফল্য এই নেগেটিভ ইমেজকে পাল্টে দেয়। প্লেসমেন্ট অফিসার শমিতা ভট্টাচার্য এই সাফল্যকে ‘ব্র্যান্ড যাদবপুর’ এর জয় হিসেবে দেখছেন, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তিকে আরও উন্নত করতে সাহায্য করবে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি

উপায়নের ব্যক্তিত্ব ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিও যথেষ্ট প্রশংসনীয়। সে বলেছে, প্রথম বেতন থেকে মা-বাবার জন্য উপহার কিনবে এবং বন্ধুদের সঙ্গে পুজোর সময় জমিয়ে পার্টি করবে।

উপায়ন দে একজন মেধাবী তরুণ যিনি নিজের দেশের মাটিতে থেকে আন্তর্জাতিক মানের সাফল্য অর্জন করেছেন। তার সাফল্য শুধু তার একার নয়, এটা দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ও দেশপ্রেমেরও জয়। উপায়নের গল্প তরুণ প্রজন্মকে দেশে থেকে সফল হওয়ার অনুপ্রেরণা দেবে এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদাও উজ্জ্বল করবে।

সঙ্গে থাকুন ➥