শ্রীজিতা ঘোষ, কলকাতা: ২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলায় ৪০ জন সিআরপিএফ জওয়ান শহিদ হন। এর পর প্রতিশোধ স্বরূপ ভারত বালাকোটে বিমান হানা চালায়। পালটা উত্তরে পাকিস্তান ২৭ ফেব্রুয়ারি ভারতের বিরুদ্ধে বিমান হামলার চেষ্টা করে। সেই সময় ভারতীয় বায়ুসেনার উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমান তার MiG‑21 বাইসন বিমান নিয়ে একটি পাকিস্তানি F‑16 যুদ্ধবিমান গুলি করে নামান, তবে তাঁর বিমানও ভেঙে পড়ে পাকিস্তানের মাটিতে। পাকিস্তানি (Pakistani Army Latest Update) SSG অফিসার মেজর Moiz Abbas Shah তাঁকে গ্রেফতার করেন ।
কূটনৈতিক চাপ ও মুক্তি
আন্তর্জাতিক চাপ এবং ভারতের কূটনৈতিক হস্তক্ষেপে পাকিস্তান ১ মার্চ ২০১৯-এ অভিনন্দনকে (Abhinandan Varthaman) ফিরে দেয়। ২০২১ সালের নভেম্বরে তাকে বীর চক্র-এ সম্মানিত করা হয়।
মইজ আব্বাসের পরিণতি
পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম অনুযায়ী, ২০২৫ সালের ২৪ জুন, দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন টিটিপি (TTP)-র সঙ্গে সংঘর্ষে মেজর মইজ আব্বাস নিহত (Moiz Abbas Shah Died) হন। তিনি সেই সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একটি অভিযানে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন।
২০১৯-এর ঘটনাপ্রবাহ
২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি, জম্মু ও কাশ্মীরের পুলওয়ামায় আত্মঘাতী হামলায় শহিদ হন ৪০ জনেরও বেশি সিআরপিএফ জওয়ান। তার জবাবে ২৬ ফেব্রুয়ারি ভারত ‘বালাকোট এয়ার স্ট্রাইক’-এর মাধ্যমে জঙ্গি ঘাঁটি লক্ষ্য করে পালটা পদক্ষেপ নেয়। পরদিন, ২৭ ফেব্রুয়ারি, পাকিস্তান পাল্টা হামলার চেষ্টা করে। সেই সময় ভারতীয় মিগ-২১ যুদ্ধবিমানে উড়ে পাকিস্তানি আকাশসীমায় প্রবেশ করেন অভিনন্দন বর্তমান এবং একটি পাকিস্তানি এফ-১৬ যুদ্ধবিমানকে তারা মাটিতে নামায়। তবে তাঁর মিগ-২১ বিমানটিও ভেঙে পড়ে পাকিস্তানের মাটিতে। পাক সেনাবাহিনীর হাতে আটক হন অভিনন্দন, যাঁকে সেই সময় পাক স্পেশাল ফোর্সের সদস্য মেজর মইজ আব্বাস গ্রেফতার করেন। এই ঘটনা আন্তর্জাতিক মহলে চরম উত্তেজনা সৃষ্টি করে।
দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক চাপ
আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক চাপ এবং জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী, ১ মার্চ ২০১৯ সালে পাকিস্তান অভিনন্দন বর্তমানকে ভারতের হাতে ফিরিয়ে দেয়। সেই সময় তাঁকে নিয়ে গর্বের সঙ্গে বলেছিল ভারত—’একজন সৈনিক যেমন হওয়া উচিত, তেমনই দৃঢ়চেতা।’
সম্মান ও স্বীকৃতি
২০২১ সালের নভেম্বরে রাষ্ট্রপতি ভবনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে অভিনন্দন বর্তমানকে ‘বীর চক্র’ প্রদান করা হয়। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ তাঁকে এই সম্মানে ভূষিত করেন। যুদ্ধকালীন বীরত্বের জন্য এটি ভারতের তৃতীয় সর্বোচ্চ সামরিক সম্মান।
মৃত্যু নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া
মেজর মইজ আব্বাসের মৃত্যুর খবর পাকিস্তানে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। কেউ তাঁকে ‘জাতীয় বীর’ হিসেবে সম্মান জানাচ্ছেন, কেউবা স্মরণ করছেন তাঁর বিতর্কিত ভূমিকা। ভারতের জন্য তিনি ছিলেন এক কাপুরুষ সেনা। আর তিনি পাকিস্তানের জন্য এক ‘বীর’ সেনা। এখন পাকিস্তানের এমন অবস্থা যেন গোদের ওপর বিষফোঁড়া, একদিকে ভারতের কাছে লাঞ্চিত হচ্ছে যেমন, তেমনই অন্যদিকে বালুচিস্তান তাদেরকে একেবারে কোণঠাসা করে রেখেছে; এসবের মাঝে আবার দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন টিটিপি।