শ্রীজিতা ঘোষ, কলকাতা: ছোট থেকেই গগনচুম্বী স্বপ্ন দেখেছেন শুভাংশু শুক্লা (Shubhanshu Shukla)। সেই স্বপ্নের সিঁড়ি পেরিয়েছে বহু বছর। আজ তাঁর হাত ধরেই আকাশ ছোঁবে ‘ড্রাগন’ মহাকাশযান! হ্যাঁ ঠিকই ধরেছে তিনি একজন মহাকাশচারী। বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫, দুপুর ১২:০১ মিনিটে আমেরিকার ফ্লোরিডার নাসার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে মহাকাশে পাড়ি দিবেন ৩৯ বছর বয়সী এই যুবক।
‘ফ্যালকন ৯’ রকেটের সাহায্যে ‘ড্রাগন’ মহাকাশযানকে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস) পৌঁছে দেবার জন্যই তাঁকে পাঠানো হবে। বৃহস্পতিবার সকালে আইএসএস-এ পৌঁছানোর কথা রয়েছে শুভাংশুদের। রাকেশ শর্মার চার দশক পর শুভাংশুর এই মহাকাশ যাত্রা ভারতের জন্য এক নতুন ঐতিহাসিক অধ্যায়ের সূচনা করবে।
মহাকাশচারী হয়ে ওঠার গল্প
লখনউয়ের একটি নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান শুভাংশুর জন্ম ১৯৮৫ সালের ১০ অক্টোবর। তাঁর বাবা শম্ভুদয়াল শুক্লা, সরকারি চাকুরে এবং তাঁর মা আশা। আর চার-পাঁচজন গৃহবধূর মতো সংসার সামলে ছেলে-মেয়ে নিয়ে থাকতেন। শুভাংশুর একটা ছোটবোনও আছে। বাবা কাজে বেরিয়ে গেলে তাঁদের মা তাঁদের দেখাশোনা করতেন। একতলা ঘরে বসেই শুভাংশু দেখতেন আকাশ আর ভাবতেন, তিনিও একদিন এই আকাশটা ছোঁবেন। ছোটবেলা থেকে স্কুলের পড়াশোনার পাশাপাশি হাতে কলমে দক্ষতায়ও পারদর্শী ছিলেন শুভাংশু। স্কুল থেকে বের হয়েই ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যাকাডেমিতে প্রথমবারের চেষ্টাতেই সফল হন প্রবেশিকা পরীক্ষা। ২০০৫ সালে NDA থেকে স্নাতক হওয়ার পর বিটেক ডিগ্রিও অর্জন করেন তিনি।
বিমান চালনার দক্ষতা ও সামরিক জীবন
২০০৬ সালে ইন্ডিয়ান এয়ারফোর্সে যোগদান করে, Su-30 MKI, MiG-21, MiG-29, Jaguar ও Dornier 228 বিমানসহ প্রায় ২০০০ ঘণ্টার ফ্লাইটের অভিজ্ঞতা অর্জন করেন তিনি। ফাইটার পাইলট ও টেস্ট পাইলট হিসেবে দক্ষতাও অর্জন করেছেন তিনি।
পরিবার ও ব্যক্তিগত জীবন
দন্ত চিকিৎসক কামনা শুভা শুক্লার সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর। ২০২০ সালে একমাত্র পুত্র কিয়াসের জন্ম হয়। আজ কিয়াসও বাবার মতো স্বপ্ন দেখে।
মহাকাশ অভিযান ও প্রশিক্ষণ
২০১৯ সালে ইসরো গগনযান মিশনের জন্য নির্বাচিত হন শুভাংশু। রাশিয়ার ইউরি গ্যাগারিন কসমোনট প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ নিয়ে ২০২৪ সালে ‘অ্যাক্সিয়াম মিশন ৪’-এর পাইলট নির্বাচিত হন। মাসিক আয় ৪ লক্ষ টাকা হলেও তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন হল এই মহাকাশ অভিযান। নাসার ‘অ্যাক্সিয়াম-৪’ মিশনে পাইলট হিসেবে মহাকাশযান পরিচালনা করবেন শুভাংশু নিজেই।
পরিবারের গর্ব ও দেশবাসীর প্রত্যাশা
শুভাংশুর বাবা শম্ভুদয়াল শুক্লা বলেন, ‘আজ ওর জন্য দেশ-বিদেশের মানুষ প্রার্থনা করছে। ওর মিশন সফল হোক। আমার ছেলের জন্য এটা জীবনের সবথেকে বড় গৌরব।’ মায়ের মনেও রয়েছে কিছু উদ্বেগ, ‘মায়ের থেকে সন্তান দূরে গেলে চিন্তা তো স্বাভাবিক। তবে শুভাংশু নিজের লক্ষ্যকে কখনও আপস করেনি। আজ ওর স্বপ্নপূরণের দিন।’ আজ শুভাংশুর হাত ধরে গোটা দেশের স্বপ্নপূরণ হতে চলেছে।