বিশ্বসেরা ১০ শিক্ষকের তালিকায় বাংলার ‘রাস্তার মাস্টার’ দীপনারায়ণ, গ্লোবাল অ্যাওয়ার্ড দেবে UNESCO

নিউজশর্ট ডেস্কঃ কথায় বলে, শিক্ষক হলেন সমাজ তৈরির কারিগর। একজন শিক্ষকই পারে সমাজ বদলাতে। একজন শিক্ষকই পারে এক অন্ধকার স্থানকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করতে। তাই তো শিক্ষক শুধু বিদ্যালয়ের চার দেওয়ালের মধ্যেই বন্দী থাকেন না তিনি বিরাজ করেন সর্বত্র। এমনই এক শিক্ষককে বিশেষ সম্মান দিল UNESCO। এই শিক্ষকের বিদ্যালয় চলে পায়ের তলার মাটি ও খোলা আকাশের নীচেই। খুদে শিক্ষার্থীদের পড়া মুখস্থ করার আওয়াজে মুখরিত হয়ে ওঠে চারপাশ। শুধু প্রথাগত শিক্ষা নয় আদিবাসী সমাজের শিশুদের জীবন গঠনের পাঠ দিচ্ছেন এই মাস্টার।

এই গল্প ‘দীপনারায়ণ নায়েকের'(Deepnarayan Nayek) যিনি সকলের কাছে পরিচিত ‘রাস্তার মাস্টার’ নামে। রাস্তাতেই চলে তাঁর স্কুল, তাই তিনি রাস্তার মাস্টারমশাই। জামুড়িয়ার আদিবাসী অধ্যুষিত তিলকামাঝি গ্রামের আদিবাসী ছেলেমেয়েদের নিয়েই তার এই কীর্তি। প্রত্যহ রাস্তায় বসে তাঁর স্কুল। ‘সাধ অনেক কিন্তু সামর্থ্য সীমিত’ তাইতো বাড়ির নিকোনো দেওয়ালে রঙ করিয়ে সেখানেই তৈরি হয়েছে ব্ল্যাকবোর্ড। আর রাস্তায় আসন পেতে বসেই পড়ুয়ারা অক্ষর পড়ছে। দেওয়ালে দেওয়ালে লেখা বর্ণমালা। এক কথায় গোটা গ্রামই যেন হয়ে উঠেছে পাঠশালা। বই-খাতা, পেন-পেন্সিল পর্যাপ্ত না থাকলেও দিব্য চলছে পড়াশোনা।

আসলে দীপনারায়ণের নিজের শৈশবও কেটেছে চরম অর্থকষ্টে। বাবা ওষুধের দোকানের কম বেতনের কর্মী ছিলেন। বইপত্র কিনে দেওয়ার সামর্থ্য ছিল না পরিবারের। কষ্ট করে পড়াশোনা করেই হয়েছে তিলকমাঝি গ্রামের শিক্ষক। তবে নিজের অতীতকে ভুলে যাননি তিনি। যেই সকল শিশুর বড় স্কুলের পড়ার সামর্থ্য নেই সেই গ্রামের হতদরিদ্র বাচ্চাগুলোর পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চান তিনি। তাই তাদের সকলের জন্য স্কুলকেই পথে নিয়ে এসেছেন মাস্টারমশাই। এই প্রসঙ্গে মাস্টার দীপনারায়ণ বলেছেন, গোড়ায় একজন, দু’জন ছেলেমেয়ে নিয়ে শুরু হয়েছিল পথচলা। এরপর ধীরে ধীরে ৭ জন, ১১ জন করে বাড়তে বাড়তে এখন স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা শতাধিক। নতুন ছাত্রছাত্রীরা আসছে। তাদের পড়াশোনা করতে খুবই উৎসাহী।

এছাড়াও এই আদিবাসী ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা শেখাতে গিয়ে তিনি আরও বলেছেন “এখানে অনেক শিশুই তাদের পরিবারের প্রথম প্রজন্মের চাত্ত। তাই শিশুদের পাশাপাশি তাদের বাবা-মা, পরিবারের অন্যদেরও লেখাপড়া শেখানোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। তাই তো একদিকে বাবা-মা-ঠাকুমা-দাদুরা পড়ছেন, অন্যদিকে তাদের ছেলেমেয়ে, নাতি-নাতনিরা পড়া মুখস্থ করছে। কে আগে লিখতে-পড়তে শিখবে সে নিয়ে প্রতিযোগিতাও চলে।’ তিনি সারা গ্রামে চালু করেছেন এক ভ্রাম্যমান লাইব্রেরী। যেখানে যে কেও চাইলেই বই পড়তে পারেন।

আর এবারে অবশেষে নিজের এই কাজের স্বীকৃতি পেতে চলেছেন রাস্তার মাষ্টারমশাই দীপনারায়ণ। আগামী ৮ নভেম্বর প্যারিসে ইউনেস্কোর জেনারেল অ্যাসেম্বলিতে ঘোষিত হবে বিশ্বের সেরা শিক্ষকের নাম। সেখানে দশজনের তালিকায় মনোনীত হয়েছেন শিক্ষক দীপনারায়ণ নায়েকের নাম।

Avatar

Papiya Paul

X