শ্রী ভট্টাচার্য, কলকাতা: বহুবিবাহ সম্পর্কিত বাংলাদেশ সরকারের নতুন নীতি। জানলেই অবাক হবেন। মোহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের বিবাহ আইনে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এনেছে। সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন যে বহুবিবাহের উপর পূর্বে আরোপিত কর সম্পূর্ণরূপে বাতিল করা হয়েছে। এর অর্থ হল পুরুষরা এখন কোনও কর ছাড়াই যত খুশি বিয়ে করতে পারবেন।
নিয়মের এমন পরিবর্তনের কারণ
বিবাহের উপর কর দীর্ঘদিন ধরেই চালু ছিল। পুরাতন ব্যবস্থা অনুসারে, একজন পুরুষকে তাঁর প্রথম বিবাহের জন্য ১০০ টাকা কর দিতে হত অথবা তাঁর প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পর যদি তিনি পুনরায় বিবাহ করেন তবে তাঁকে ১০০ টাকাই কর দিতে হত। তবে, যদি তিনি তাঁর প্রথম স্ত্রী জীবিত থাকাকালীন দ্বিতীয়বার বিবাহ করেন, তবে তাঁকে ৫,০০০ টাকা দিতে হত। প্রতিটি অতিরিক্ত বিবাহের সঙ্গে কর বৃদ্ধি পেত। তৃতীয় বিবাহের জন্য ২০,০০০ টাকা এবং চতুর্থ বিবাহের জন্য ৫০,০০০ টাকা কর দিতে হাত সরকারকে। এখন, নতুন সিদ্ধান্তের সঙ্গে, এই করগুলি তুলে দেওয়া হয়েছে, এবং পুরুষরা কোনও আর্থিক জরিমানা ছাড়াই একাধিক মহিলাকে বিয়ে করতে পারবেন।
আইনি উপদেষ্টার বক্তব্য
আইনি উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ব্যাখ্যা করেছেন যে বহুবিবাহের উপর কর অযৌক্তিক এবং এটি থেকে মুক্তি পাওয়ার সময় এসেছে। তিনি বিবাহের ফর্ম পূরণের পদ্ধতিতে পরিবর্তনগুলিও তুলে ধরেছেন। আগে, ফর্মটিতে মহিলাদের “মেয়ে” হিসাবে উল্লেখ করা হত এবং তাঁরা “বিবাহিত” নাকি “কুমারী” তা নির্দেশ করা হত। এখন, সরকার “বিবাহিত” বা “অবিবাহিত” এর মতো আরও নিরপেক্ষ শব্দ ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তসলিমা নাসরিনের প্রতিক্রিয়া
এই পরিবর্তনটি অনেকের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে, যার মধ্যে বিখ্যাত বাংলাদেশী লেখিকা তসলিমা নাসরিনও রয়েছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্টে, তিনি নতুন আইনের পিছনের উদ্দেশ্যগুলি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। নাসরিন পরামর্শ দিয়েছেন যে এই সংস্কারগুলি আইনি উপদেষ্টার জন্য উপকারি হতে পারে, যিনি সম্প্রতি একাধিক বিবাহ সম্পন্ন করেছেন। তিনি হাস্যকরভাবে অনুমান করেছেন যে আইনি উপদেষ্টা পুরুষদের কোনও সমস্যা ছাড়াই একাধিক মহিলাকে বিয়ে করার অনুমতি দেওয়ার জন্য এই পরিবর্তনগুলি করেছেন, যার ফলে তাঁর নিজস্ব স্বার্থ লাভ হবে বলে মনে করছেন তসলিমা।
কী বলছেন তসলিমা নাসরিন?
এ প্রসঙ্গে তসলিমা তাঁর ফেসবুক হ্যান্ডেলে স্পষ্ট লিখেছেন, ”বাংলাদেশকে ইসলামী রাষ্ট্র বানাবার সংস্কার চলছে। আইন উপদেষ্টা হাজী মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম ওরফে আসিফ নজরুল পারিবারিক আইনের যে সংস্কার করেছেন, অনেকে ভাবতে পারে সে সংস্কার তিনি তাঁর নিজের স্বার্থে করেছেন। যেহেতু তিনি ইতোমধ্যে প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় বিবাহ সেরেছেন, তিনি তাঁর চতুর্থ বিবাহ, পঞ্চম বিবাহ, এমনকী রসুলের পদাংক অনুসরণ করে ত্রয়োদশ বিবাহ যেন নির্বিঘ্নে সারতে পারেন, তার ব্যবস্থা নিয়েছেন। কিন্তু আমি মনে করি তিনি নিজের স্বার্থে শুধু নয়, সমস্ত লোলুপ পুরুষের স্বার্থে এই সংস্কারের কাজটি করেছেন। ইসলামে অর্থাৎ বহুবিবাহে পুরুষকে উৎসাহিত করাই ছিল তাঁর মূল উদ্দেশ্য। তিনি বহুবিবাহ থেকে সমস্ত কর উঠিয়ে নিয়েছেন।”
বহুবিবাহকে উৎসাহিত করা হচ্ছে?
নাসরিনের প্রশ্ন, কী ছিল আগের আইন? উত্তর দিয়েছেন নিজেই। লিখেছেন, ‘ছিল প্রথম বিবাহ বা প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পরে বিবাহের জন্য একজন পুরুষকে ১০০ টাকা ফি দিতে হবে, তবে প্রথম স্ত্রীর জীবদ্দশায় দ্বিতীয় বিয়ে করতে হলে ৫ হাজার টাকা, প্রথম দুই স্ত্রীর জীবদ্দশায় তৃতীয় বিয়ের জন্য ২০ হাজার টাকা কর দিতে হবে, এবং চতুর্থ বিয়ের জন্য ৫০ হাজার টাকা কর দিতে হবে। বহুবিবাহ থেকে কর উঠিয়ে দিয়ে আসিফ নজরুল বাংলাদেশের মুসলমান পুরুষদের যে উপকার করেছেন, তারা আজীবন তা মনে রাখবে এবং তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে। আমীন।’