শ্রী ভট্টাচার্য, কলকাতা: আপনি যদি বিদেশ ভ্রমণের কথা ভেবে থাকেন, তাহলে আপনার জন্য একটি দুর্দান্ত খবর। এখন ভারত সরকার চিপ ভিত্তিক ই-পাসপোর্ট শুরু করেছে (Biometric E-Passport)। এই প্রযুক্তির সাহায্যে ভ্রমণ এখন আগের চেয়ে দ্রুত, নিরাপদ এবং স্মার্ট হবে। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে, ভারত এখন উন্নত দেশগুলির তালিকায় যোগ দিয়েছে, যারা ইতিমধ্যেই বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট ব্যবহার করছে।
ই-পাসপোর্ট কী?
ই-পাসপোর্ট হলো একটি সম্মিলিত কাগজ এবং ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট। এটি পাসপোর্টে একটি রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন (RFID) চিপ এবং একটি অ্যান্টেনা ব্যবহার করে যাতে পাসপোর্টধারীর ব্যক্তিগত এবং বায়োমেট্রিক তথ্য থাকে।
ই-পাসপোর্ট থাকার সুবিধা কী কী?
- ডিজিটাল স্বাক্ষর এবং এনক্রিপশনের কারণে ডেটার সাথে হস্তক্ষেপ করা প্রায় অসম্ভব। ঐতিহ্যবাহী পাসপোর্টের চেয়ে বেশি নির্ভরযোগ্য।
- বায়োমেট্রিক তথ্য সুনির্দিষ্ট পরিচয় যাচাই নিশ্চিত করে। এটি ভুল শনাক্তকরণের সম্ভাবনা অনেকাংশে হ্রাস করে।
- অনেক দেশ ভিসা প্রক্রিয়াকরণ বা সীমান্ত পারাপারের ক্ষেত্রে ই-পাসপোর্টধারীদের অগ্রাধিকার দেয়। এটি ভ্রমণকে সহজ করে তোলে।
পুরনো পাসপোর্টধারীদের জন্য কি ই-পাসপোর্ট নেওয়া বাধ্যতামূলক?
না, তা নিয়ে চিন্তা নেই। ভারত সরকার কর্তৃক জারি করা সমস্ত পাসপোর্ট তাদের মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখ পর্যন্ত বৈধ থাকবে। যেসব শহরে ই-পাসপোর্ট সুবিধা রয়েছে, সেখানে আবেদনকারী নাগরিকরা ই-পাসপোর্ট পাবেন। এই সুবিধা শীঘ্রই অন্যান্য শহরেও শুরু হতে চলেছে।
কোন কোন শহরে বর্তমানে ই-পাসপোর্ট সুবিধা উপলব্ধ?
আপাতত নাগপুর, ভুবনেশ্বর, জম্মু, গোয়া, সিমলা, রায়পুর, অমৃতসর, জয়পুর, চেন্নাই, হায়দ্রাবাদ, সুরাট এবং রাঁচিতে অবস্থিত আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসগুলি বর্তমানে নাগরিকদের ই-পাসপোর্ট প্রদান করছে। তামিলনাড়ুতে ই-পাসপোর্ট ইস্যু করার প্রক্রিয়া শুরু হয় ৩ মার্চ, ২০২৫ তারিখে। ২২ মার্চ, ২০২৫ পর্যন্ত, রাজ্যে মোট ২০,৭২৯টি ই-পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়েছিল। জানা গিয়েছে যে সরকার ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে এটি সারা দেশে চালু করার লক্ষ্য নিয়েছে।
কোন কোন দেশে বেড়াতে গেলে সুবিধা বেশি হবে?
ভারত এখন ১২০ টিরও বেশি দেশের তালিকায় যোগ দিয়েছে, যারা ইতিমধ্যেই বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট ব্যবহার করা হচ্ছে। এখন ভারতীয় নাগরিকরা এই দেশগুলিতে প্রবেশের সময় আরও সুযোগ-সুবিধা এবং সম্মান পাবেন। এর মধ্যে রয়েছে:
- আমেরিকা (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র)
- কানাডা
- জাপান
- যুক্তরাজ্য
- ফ্রান্স
- অস্ট্রেলিয়া
- দক্ষিণ কোরিয়া
- জার্মানি
আরও পড়ুন: রেশন বন্ধ ১৫ লক্ষ মানুষের, এই কারণে নাম বাতিল করল সরকার
কীভাবে ই-পাসপোর্ট তৈরি করবেন?
ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদনের প্রক্রিয়া প্রায় আগের মতোই:
ধাপ ১: আপনাকে পাসপোর্ট সেবা পোর্টালে লগইন করে আবেদনপত্র পূরণ করতে হবে।
ধাপ ২: অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিন এবং আপনার বায়োমেট্রিক তথ্য প্রদানের জন্য নিকটতম পাসপোর্ট সেবা কেন্দ্র (PSK) বা পোস্ট অফিস পাসপোর্ট কেন্দ্রে (POPSK) যান।
ধাপ ৩: সেখান থেকে আপনার ই-পাসপোর্ট প্রক্রিয়া করা হবে এবং সরাসরি আপনার বাড়িতে পাঠানো হবে।
জানা গিয়েছে, সরকার ভবিষ্যতে ডিজিটাল ভিসা, মোবাইল পাসপোর্ট ওয়ালেট, আধার এবং ডিজিলকার ইন্টিগ্রেশনের মতো বৈশিষ্ট্যগুলির সাথে ই-পাসপোর্ট সংযুক্ত করার পরিকল্পনা করছে, যাতে ভ্রমণ সম্পূর্ণ কাগজবিহীন এবং ডিজিটাল হয়ে ওঠে।