নিউজশর্ট ডেস্ক: কমেডিয়ান(Comedian) চরিত্রে অভিনয় করে যিনি সবথেকে বেশি পরিচিতি পেয়েছেন তিনি হলেন জনি লিভার(Johnny Lever)। ৯০ দশকে বলিউডে প্রায় সব ছবিতেই কমেডিয়ানের চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকের মন জিতে নিয়েছেন জনপ্রকাশ রাও জানুমালা ওরফে জনি লিভার। বলিউডের(Bollywood) নাম্বার ওয়ান কৌতুক অভিনেতার তকমা জুটেছে তার কপালে। যদিও এখন সেভাবে আর কাজ পান না অভিনেতা।
১৯৫৭ সালের ১৪ ই আগস্ট তেলুগু খ্রিস্টান পরিবারে জন্ম হয় তার। মুম্বাইয়ে(Mumbai) বড় হয়ে উঠেছিলেন অভিনেতা। তার বাবা একটি কারখানায় শ্রমিকের কাজ করতেন। ওই অল্প টাকায় কোন রকমে সংসার চলতো তাদের। ছেলের স্কুলের খরচ মেটাতে পারতেন না তিনি বরং বেশিরভাগ টাকা দিয়েই মদ কিনতেন তার বাবা। তাই বাধ্য হয়ে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে স্কুল ছাড়তে বাধ্য হন অভিনেতা। এই স্কুলে থাকতে থাকতেই ধীরে ধীরে নিজের প্রতিভা গড়ে তুলেছেন তিনি।
স্কুলের বন্ধুবান্ধব এবং শিক্ষকদের কণ্ঠস্বর নকল করতে পারতেন জনি। আর তাই ছোটবেলা থেকেই রোজগার করার মানসিকতা তৈরি হয়ে গেছিল। একদিন যাতায়াতের পথে একজনের সঙ্গে তার আলাপ হয়। তিনি তাকে কাজের প্রস্তাব দেন। একসময় রাস্তায় দাঁড়িয়ে প্যান্ট বিক্রি করেছেন অভিনেতা। যেটা ছিল তার প্রথম উপার্জন এবং দিনের শেষে ২০ থেকে ২৫ টাকা ইনকাম করেছেন তিনি। এরপর একদিন একটি সিনেমা হলে দীনেশ হিন্দু নামক একজন কমেডিয়ানকে কমেডি করতে দেখেন তিনি। আর তাকে দেখে কাজ করার নতুন দিশে পান।
এজন্য প্যান্ট বিক্রি করতে করতে তিনি বলিউডের তারকাদের গলা নকল করতেন। এর ফলে ধীরে ধীরে তার আয় বাড়তে থাকে। দিনে ২৫০ টাকা পর্যন্ত আয় করেছেন অভিনেতা। এরপর বাবার কারখানায় কাজ করেছিলেন ১৮ বছর বয়সী জনি. কিন্তু তার বাবা তার এই মিমিক্রি করার স্বভাব একদম পছন্দ করতেন না। তবুও জনি তার সেই স্বভাব ছাড়েনি। বাবাকে লুকিয়ে কারখানায় লোকজনকে হাসাতে তিনি। এই কারখানারই একজন উচ্চ আধিকারিক তার নাম বদলে রাখেন জনি লিভার।
সেই থেকে জনি লিভার নামে মুম্বাইয়ের বিভিন্ন রাস্তায় মিমিক্রি করে অনুষ্ঠান করতেন তিনি। এই অনুষ্ঠান করা সূত্রে একদিন বলিউডের সুরকার কল্যাণজি- আনন্দজির সঙ্গে আলাপ হয় তার। তাদের হাত ধরেই জনির প্রথম অডিও ক্যাসেট বাজারে মুক্তি পেয়েছেন। এরপর শুধু মুম্বাই নয়, দেশে-বিদেশের বিভিন্ন জায়গায় অনুষ্ঠান করতে শুরু করেন তিনি। ধীরে ধীরে বলিউডের প্রধান প্রধান তারকার সঙ্গে পরিচয় হয় তার।
দক্ষিণের পরিচালক কে বিজয়ান তার ছবিতে কাজের জন্য একজন নতুন কমেডিয়ানকে খুঁজছিলেন। সেই ছবিতে প্রথম চান্স পান অভিনেতা। এরপর রাজ বব্বর, রাজেন্দ্র কুমার। অমিতাভ, গোবিন্দা, শাহরুখ প্রমুখ অভিনেতাদের সঙ্গে কাজ শুরু করেন। তিনি তার ক্যারিয়ারে প্রায় ৩৫০ বেশি ছবিতে কাজ করেছেন। সেইসময় তার উপার্জনের তালিকাতে তিনি বলিউডের নামকরা তারকাদের টক্কর দিয়েছেন।
১৯৮৪ সালে তিনি সুজাতা নামে এক মহিলাকে বিয়ে করেছিলেন। তাদের পুত্র সন্তান জেসি এবং কন্যা সন্তান জেমিকে নিয়ে সুখের সংসার ছিল। তবে ২০০০ সাল থেকে হঠাৎ করে তিনি ফিল্ম জগৎ থেকে সরে যান। তার সুখের সংসারে তখন মারণ রোগ ক্যান্সার ঢুকে পড়ে। অভিনেতা জানতে পারেন তার ছেলের শারীরিক অবস্থা এতটাই সংকরজনক যে অস্ত্রোপ্রচার করা যাবে না। ছেলের অসুস্থতার খবর শুনে সম্পূর্ণরূপে ভেঙ্গে পরেন অভিনেতা।
সে সময় ছেলেকে নিয়ে সব সময় ব্যস্ত থাকতেন তিনি। আর সঙ্গে ব্যস্ত থাকতেন মদ নিয়ে। সে সময় বিভিন্ন গির্জায় ছেলের শারীরিক সুস্থতার জন্য প্রার্থনা করতে যেতেন অভিনেতা। সেখানে এক পাদ্রির নির্দেশে নিউইয়র্কের হাসপাতালে ছেলেকে নিয়ে যান জনি। ২০০২ সালে নিউইয়র্কের হাসপাতালে তার ছেলের অস্ত্রোপ্রচার করা হয়। ছেলে সুস্থ হয়ে উঠলে সে সময় ধর্মের প্রতি আসক্তি বেড়ে যায় তার।
এর কয়েক বছর পর আবার অভিনয়ে ফিরে আসার চেষ্টা করেন তিনি। যদিও এরপর কাজে ফিরলেও আর সেভাবে নিজের জায়গা ফিরে পাননি তিনি। ধীরে ধীরে তার কাজ পাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে মুম্বাইতে থাকেন এবং দেশে বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তে অনুষ্ঠান করে টাকা উপার্জন করেন জনি লিভার।