শ্রেয়া ঘোষাল, সঙ্গীতজগতের প্রথম সারির গায়িকা তিনি। আজ বিশ্বের তাবড় তাবড় সঙ্গীতশিল্পীদের তালিকায় নাম রয়েছে তার। এই মুহূর্তে সফলতার চূড়ায় রয়েছেন তিনি। তবে এই সাফল্য কিন্তু হঠাৎ করেই তার কাছে এসে ধরা দেয়নি। কঠোর পরিশ্রম, সঙ্গীতের ওপর চর্চা, অধ্যাবসায় আজ বিশ্ব সেরা গায়িকা হতে পেরেছেন। সেই শুরু থেকেই আজ পর্যন্ত তিনি একভাবেই জনপ্রিয়। কিসের গুনে শ্রেয়া আজও এতটা জনপ্রিয় মানুষের কাছে? সেই ১৬ বছর বয়স থেকে ক্যারিয়ার শুরু হয়েছে তার। এখন ৩৮ বছর বয়স হয়ে গিয়েও সঙ্গীতপ্রেমীদের কাছে পছন্দের শিল্পী তিনি।
আসলে তার এই জনপ্রিয়তার মূল কারণ হলো তাঁর শিকড়ের প্রতি টান। সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছেও তিনি মাটির কাছাকাছি থাকতে বেশি পছন্দ করেন। আর তাই এখনও তার সেভাবে কোনো নিন্দুক নেই বললেই চলে। মাত্র ৪ বছর বয়স থেকে গান শেখা শুরু করেন তিনি। প্রথম গানের গুরু ছিলেন তার মা। বহরমপুরের মেয়ে হলেন শ্রেয়া। তিনি প্রথম অনস্টেজ পারফরম্যান্স করেছিলেন পাড়ার মঞ্চে। ৬ বছর বয়স থেকে ক্লাসিকাল মিউজিক তালিম নেয়া শুরু করেন। এরপর সারেগামাপার লিটিল চ্যাম্প-এ অংশগ্রহণ করেছিলেন। সেখানে বিজেতা হন।
এরপরই পদ্মশ্রী কল্যাণ জি ভাই ও মুক্তা ভিড়েজির থেকে মার্গীয় সঙ্গীতে বহুদিন শিক্ষা নেন তিনি। আর এই রিয়েলিটি শোতে অংশগ্রহণ করে তার ভাগ্য ফিরে যায়। বলিউড পরিচালক সঞ্জয় লীলা বানসালির মা একদিন বাড়িতে বসে টিভি দেখছিলেন। হঠাৎ করেই টিভি চ্যানেল ঘোরাতে ঘোরাতে তিনি দেখেন একটি বাচ্চা মেয়ে আর তার সঙ্গীতের গলা অসাধারণ সুন্দর। এরপরে তিনি ছেলেকে ফোন করে সমস্ত কিছু জানালে সঞ্জয়ও পছন্দ করেন শ্রেয়াকে। ওই ছোট বয়সেই দেবদাস ছবিতে গানের সুযোগ মেলে। এই গান তাকে এনে দেয় অনেক পুরস্কার, সাফল্য।
এরপর তাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। তিনি যে গান করেন সেই গান সুপারহিট হয়ে যায়। তিনি মাত্র ১৮ বছর বয়সে জাতীয় পুরস্কার পান। চারটি জাতীয় পুরস্কার রয়েছে তার ঝুলিতে। জানলে অবাক হবেন, বিদেশে ২৬ শে জুন শ্রেয়া ঘোষাল ডে হিসেবে পালিত হয়। শ্রেয়া বরাবরই সোজাসুজি কথা বলতে পছন্দ করেন। তাই কোন গানে যদি নারীশরীরকে কেন্দ্র করে অশালীন মন্তব্য করা হয় এমন গান তিনি গাইতে চান না। তবে শুধু সঙ্গীত নয়, ব্যক্তিগত জীবনে তিনি খুব সংসারী।
তার স্বামী শিলাদিত্য মুখোপাধ্যায় এর সঙ্গে ১০ বছরের প্রেম গোপন রেখে হঠাৎ করেই একদিন বিয়ে করে সকলকে চমকে দেন। দুজনে কলেজে একসঙ্গে পড়ার সময় তাদের আলাপ হয়। এত সাফল্য পাওয়ার পরেও তিনি কলেজ বেলার প্রেমিককে কখনো আলাদা হতে দেননি। গত বছর তিনি মা হয়েছেন। ফুটফুটে এক পুত্র সন্তান এসেছে তার পরিবারে। আর এইসব নিয়েই এখন ব্যস্ত রয়েছেন তিনি। আর তার সঙ্গে রয়েছে তার সঙ্গীত। এতকিছুর পরেও বাংলার এই মেয়েটি কখনোই তার শিকড় ভোলেননি। এজন্যই সকলের চেয়ে আলাদা রয়ে গেলেন শ্রেয়া ঘোষাল।