হরমুজ প্রণালী বন্ধ করল ইরান! ভারতে বাড়বে তেলের দাম? ঘনাল আশঙ্কার মেঘ

Oil Price Hike

হরমুজ প্রণালী বন্ধ করল ইরান! ভারতে বাড়বে তেলের দাম? ঘনাল আশঙ্কার মেঘ

Srijita Ghosh

Published on:

শ্রীজিতা ঘোষ, কলকাতা: সত্যি হল আশঙ্কা! হরমুজ প্রণালী বন্ধ করল ইরান, বিশ্ববাজারে তেলের দাম (Oil Price Hike) নিয়ে বড় বিপদের আভাস। বিশ্ব রাজনীতির উত্তপ্ত আবহে অবশেষে সত্যি হল সেই আশঙ্কা, যা নিয়ে কূটনৈতিক মহলে গত ক’দিন ধরেই আলোচনা চলছিল। বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ত ও গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক বাণিজ্য পথ হরমুজ প্রণালী বন্ধ করল ইরান। ইরানের পার্লামেন্ট ইতিমধ্যে এ বিষয়ে একটি প্রস্তাব পাশ করেছে এবং তা বাস্তবায়নের দিকেই এগোচ্ছে তেহরান।

বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা

বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এই পদক্ষেপের জেরে বিশ্ব জ্বালানি বাজারে (Global Fuel Crisis) বড়সড় বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। তেলের দাম লাফিয়ে বাড়বে (Energy Crisis in India) এবং ভারতের ওপর পড়বে ভয়াবহ প্রভাব।

যুদ্ধের আবহে জ্বালানি যুদ্ধ

ইরান ও আমেরিকার মধ্যের সংঘর্ষ এক নয়া মোড় নিয়েছে। ভারতীয় সময় অনুযায়ী, রবিবার ভোররাতে মার্কিন B-2 বোমারু বিমান হামলা চালায় ইরানের ফোরদো, নাতানজ ও ইসফাহান পরমাণু ঘাঁটির ওপর। মাটির নিচে অবস্থিত এই ঘাঁটিগুলিকে ধ্বংসের জন্য ব্যবহার করা হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘বাঙ্কার ব্লাস্টার’ বোমা।

এর পরপরই ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লাহ খামেনেই-এর উপদেষ্টা হুঁশিয়ারি দেন, ‘এবার আমাদের পালা… আমেরিকার নৌবহরে পালটা হামলা চালাবে ইরান।’ সঙ্গে দেওয়া হয় হরমুজ প্রণালী বন্ধের সরাসরি হুমকি—যা কিছু ঘণ্টার মধ্যেই বাস্তবে রূপ নেয়।

হরমুজ প্রণালী বন্ধ মানেই বিশ্বজুড়ে তেল সঙ্কট

বিশ্বের মোট জ্বালানি তেলের প্রায় ২০ শতাংশ পরিবাহিত হয় এই পথ ধরে। ভারত, চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া সহ বহু দেশ এই রুটের উপর নির্ভরশীল। প্রণালীটি বন্ধ হওয়া মানে, প্রতিদিনের প্রায় ২ কোটি ব্যারেল তেল সরবরাহ বিপন্ন।

ভারতের জন্য কী মানে এই সিদ্ধান্ত?

ভারত সরাসরি ইরান থেকে এখন খুব বেশি তেল না কিনলেও, মোট চাহিদার ৮৫ শতাংশ তেল আমদানি করে বিদেশ থেকে। এই আমদানির অন্তত ৫০ শতাংশ আসে হরমুজ প্রণালী দিয়ে—মূলত সৌদি আরব, ইরাক, কুয়েত, ইউএই-এর মতো দেশ থেকে। এখন এই রুট বন্ধ হওয়ায় ভারতীয় বাজারে জ্বালানি তেল সরবরাহে ঘাটতি, দামবৃদ্ধি ও আমদানির ব্যয়বৃদ্ধির আশঙ্কা প্রবল।

সম্ভাব্য অর্থনৈতিক প্রভাব

*পেট্রল-ডিজেল মূল্যবৃদ্ধি – খুচরো বাজারে ৫–৮ টাকা পর্যন্ত দাম বৃদ্ধির আশঙ্কা।
* আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি – ব্যালান্স অব পেমেন্টে চাপ, রিজার্ভ হ্রাস।
* মুদ্রাস্ফীতি – কৃষি, পরিবহন ও শিল্প খাতে ব্যয়বৃদ্ধির ফলে সাধারণ পণ্যের দাম বাড়বে।
* GDP প্রবৃদ্ধি – উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি ও ভোক্তা ব্যয় হ্রাসের সম্ভাবনা।

বিকল্পের সন্ধানে ভারত

ইতিমধ্যেই ভারত সরকার দক্ষিণ আফ্রিকা, রাশিয়া, ব্রাজিল, মেক্সিকো ও নাইজেরিয়া থেকে তেল আমদানির বিকল্প পথ নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে। কিন্তু লজিস্টিক খরচ, দূরত্ব ও পরিকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা থাকায়, এই বিকল্পে প্রতিস্থাপন সম্ভব হলেও তাৎক্ষণিক সমাধান নয়।

সামনে ঝুঁকিপূর্ণ সময়

বিশ্ব বাজারে তেলের দাম এখনই ঊর্ধ্বমুখী। ব্রেন্ট ক্রুড পৌঁছে গেছে ৮৩ ডলার/ব্যারেল–এ, যা আগামী সপ্তাহে ৯০–১০০ ডলারে পৌঁছানোর সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। ভারতের মতো এক জ্বালানিনির্ভর দেশের জন্য অর্থনীতিতে এই সংকট একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সঙ্গে থাকুন ➥