শ্রীজিতা ঘোষ, কলকাতা: ভারতের টেলিকম দুনিয়ায় (India Telecom Latest Update) এক আমূল পরিবর্তন আসতে চলেছে। এতদিন ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য আমাদের নির্ভর করতে হতো দৈনিক বা মাসিক ডেটা প্ল্যানে। এবার সেই চেনা নিয়ম ভেঙে রিলায়েন্স Jio এবং Airtel নিয়ে এসেছে এমন এক রিচার্জ প্যাক, যা পুরো ইন্টারনেট ব্যবহারের সংজ্ঞাকেই বদলে দিতে পারে।
মাত্র ১১ টাকায় ১০ জিবি ডেটা! কিন্তু…
Jio সম্প্রতি বাজারে এনেছে একটি অ্যাড-অন প্যাক, যেখানে মাত্র ১১ টাকায় ১০GB হাই-স্পিড ডেটা পাওয়া যাচ্ছে। তবে এর মেয়াদ মাত্র ১ ঘণ্টা। অর্থাৎ, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যত খুশি ব্যবহার করুন, এক ঘণ্টা পেরোলেই ডেটা হারিয়ে যাবে—even যদি পুরোটা ব্যবহার না-ও হয়। এই প্যাকটি আপাতত একটি অ্যাড-অন (add-on) হিসেবেই চালু হয়েছে এবং মূল প্ল্যানের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে।
বদলে যাচ্ছে ডেটা ব্যবহারের ধরন?
গত কয়েক বছরে, বিশেষ করে কোভিড-পরবর্তী সময়ে, কাজ এবং শিক্ষার ধরন বদলে গেছে। এখন অনেকেই অনলাইন মিটিং করেন, ভার্চুয়াল ক্লাসে যোগ দেন, ভিডিয়ো কন্টেন্ট আপলোড বা স্ট্রিম করেন, বড় ফাইল ট্রান্সফার করেন। এসব কাজের জন্য গোটা দিনের ডেটা নয়, কিছুক্ষণের জন্য বিশেষ হাই-স্পিড ডেটার প্রয়োজন হয়। সেখান থেকেই এই ‘ঘণ্টাভিত্তিক প্যাক’-এর চাহিদা তৈরি হয়েছে।
গ্রাহকদের জন্য সুবিধা:
১. স্বল্প খরচে বিপুল ডেটা:
১১ টাকাতে ১০ জিবি! এত কম খরচে এত বেশি ডেটা বাজারে বিরল ঘটনা।
২. হাই-স্পিডে জরুরি কাজ মেটানো:
ফ্রিল্যান্সার, ইউটিউবার বা স্টুডেন্টদের জন্য এক ঘণ্টার মধ্যে প্রয়োজনীয় কাজ শেষ করা সম্ভব।
৩. ব্রডব্যান্ড বিকল হলে আদর্শ বিকল্প:
বাড়িতে নেট না থাকলে দ্রুত বড় ফাইল ডাউনলোড/আপলোডের উপায়।
৪. ডেটা অন-ডিমান্ড:
যখন দরকার, তখন ইন্টারনেট খরচ করুন—সাশ্রয়ী এবং কাস্টমাইজড।
কিছু সীমাবদ্ধতা:
১. সময় শেষ মানেই ডেটা শেষ:
১০ জিবি ডেটা ১ ঘণ্টার মধ্যে শেষ না করলে অব্যবহৃত অংশ হারিয়ে যাবে।
২. কম ব্যবহারকারীদের জন্য অপ্রয়োজনীয়:
যাঁরা দিনে ২০০-৩০০ এমবি ব্যবহার করেন, তাঁদের জন্য এই প্যাক অসুবিধাজনক।
৩. ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা:
যদি সব রিচার্জ ঘণ্টায় হিসেব শুরু করে, তাহলে মাসিক বা দৈনিক ইউজাররা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন।
লাভ নাকি ক্ষতি?
এই প্রশ্নের উত্তর এককথায় দেওয়া কঠিন। যারা নির্দিষ্ট কাজের জন্য প্রচুর ডেটা ব্যবহার করেন, যেমন ভিডিও এডিটর, কন্টেন্ট ক্রিয়েটর বা স্ট্রিমার, তাঁদের জন্য এটি দারুণ সুযোগ। অন্যদিকে, হালকা ইউজারদের কাছে এটি অর্থহীন এবং বিভ্রান্তিকর মনে হতে পারে।
ঘণ্টাভিত্তিক ডেটা প্যাক ভারতীয় ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে এক বিপ্লবী পরিবর্তন আনতে চলেছে। এটি ডিজিটাল ইকোনমির নতুন দিক উন্মোচন করছে—যেখানে ‘সময়’ হবে খরচের মূল ভিত্তি। এই উদ্যোগ গ্রাহকদের স্বাধীনতা দেবে, আবার কিছু চ্যালেঞ্জও সৃষ্টি করবে। তবে এটা নিশ্চিত, ভবিষ্যতের টেলিকম পরিষেবা আরও নমনীয়, প্রয়োজনভিত্তিক এবং ব্যক্তিকেন্দ্রিক হয়ে উঠবে।
