পশ্চিম এশিয়ার যুদ্ধসঙ্কটে কাঁপছে ভারতের রান্নাঘর! টিকবে আর মাত্র ১৬ দিন

LPG Cylinder Price Hike

পশ্চিম এশিয়ার যুদ্ধসঙ্কটে কাঁপছে ভারতের রান্নাঘর! টিকবে আর মাত্র ১৬ দিন

Srijita Ghosh

Published on:

শ্রীজিতা ঘোষ, কলকাতা: গত এক দশকে ভারতের ঘরে ঘরে পৌঁছে গিয়েছে রান্নার গ্যাস (LPG Cylinder Price Hike) — তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাস (Liquefied Petroleum Gas), বা এলপিজি (LPG)। আজ দেশের প্রায় ৩৩ কোটিরও বেশি পরিবার রান্নার জন্য এই জ্বালানির উপর নির্ভরশীল। গ্রামীণ এলাকা থেকে শুরু করে শহরের বহুতল, সর্বত্র রান্নাঘরের মূল জ্বালানি এখন এই এলপিজি (LPG import India)। কিন্তু এত বিপুল জনপ্রিয়তার আড়ালে রয়েছে একটি বিপজ্জনক সত্য, ভারতের এলপিজি সরবরাহের ৬৬ শতাংশই আসে বিদেশ থেকে, যার প্রায় ৯৫ শতাংশই পশ্চিম এশিয়া নির্ভর। এবং সেই পশ্চিম এশিয়া এই মুহূর্তে চরম অস্থিরতায় টলমল করছে।

উত্তপ্ত পশ্চিম এশিয়া: হরমুজ প্রণালী বন্ধ হওয়ার হুমকি

ইজ়রায়েল ও ইরানের মধ্যে যুদ্ধের (Iran Israel US tension) আশঙ্কা নতুন নয়, কিন্তু এবার তা কার্যত বাস্তবের দিকে এগোচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (United States) সম্প্রতি ইরানের তিনটি পরমাণু কেন্দ্রে বোমাবর্ষণ করেছে। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ইরান হুমকি দিয়েছে বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি রুট — হরমুজ প্রণালী (Strait Of Hormuz) — বন্ধ করে দেওয়ার। এই প্রণালী দিয়েই প্রতিদিন ২০ লক্ষ ব্যারেল তেল (Iran Israel Conflict Petrol Price Impact) এবং বিপুল পরিমাণ প্রাকৃতিক গ্যাস (Natural Gas) সরবরাহ হয় বিশ্ববাজারে। প্রণালী বন্ধ হলে শুধু তেল নয়, এলপিজির জোগানও প্রচণ্ড ধাক্কা খাবে।

ভারতের ঝুঁকি: ১৬ দিনের মজুতের বেশি কিছু নেই

ভারতের পেট্রোলিয়াম মন্ত্রকের (Ministry of Petroleum & Natural Gas) তথ্য অনুযায়ী, দেশে যেসব ইমপোর্ট টার্মিনাল, বটলিং প্ল্যান্ট ও রিফাইনারি রয়েছে, সেখানে এলপিজির কিছুটা মজুত রাখা হয়। কিন্তু সেই মজুত দিয়ে সর্বাধিক ১৬ দিন পর্যন্ত চাহিদা মেটানো সম্ভব। অর্থাৎ, হরমুজ প্রণালীতে সাময়িক ছন্দপতন ঘটলেও ভারতের রান্নাঘরগুলোতে সঙ্কট দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে।

বিকল্প কী?

ভারত সরকার ইতিমধ্যেই বিকল্প সরবরাহ রুট ও বিকল্প উৎস খোঁজার চেষ্টা করছে। কিন্তু বাস্তব হল — এত বড় পরিমাণ এলপিজি সরবরাহ তাৎক্ষণিকভাবে অন্য অঞ্চল থেকে আনা প্রায় অসম্ভব। যেমন- আফ্রিকা (Africa) ও লাতিন (Latin) আমেরিকা (America) থেকে কিছুটা জোগান সম্ভব, কিন্তু সেই পরিকাঠামো এখনও সীমিত।

এলএনজি (Liquefied Natural Gas) থেকে গৃহস্থালি ব্যবহারে রূপান্তর সময়সাপেক্ষ। জ্বালানি তেল (পেট্রল-ডিজেল)-এর ক্ষেত্রে রাশিয়া ও আফ্রিকার উপর নির্ভরতা কিছুটা বাড়লেও, এলপিজিতে এখনও পশ্চিম এশিয়া প্রায় একচ্ছত্র।

সরাসরি প্রভাব: দাম, সাপ্লাই ও দুর্ভোগ

যদি হরমুজ প্রণালী সত্যিই কিছুদিনের জন্য বন্ধ থাকে বা সরবরাহে বড় ছেদ পড়ে, তাহলে এর প্রভাব হবে বহুমুখী-
* সিলিন্ডারের দাম বাড়বে (LPG Cylinder Price Hike)
* বুকিং করেও সময়মতো গ্যাস না পাওয়ার ঘটনা ঘটতে পারে
* গ্রামীণ ও নিম্নবিত্ত পরিবারগুলির রান্না কার্যত থেমে যেতে পারে
* প্রতিরক্ষা ও শিল্পক্ষেত্রেও প্রভাব পড়বে (অনেক জায়গায় এলপিজি ব্যবহৃত হয়)

অর্থনীতির পাশাপাশি রাজনৈতিক ও মানবিক চ্যালেঞ্জ

এটি শুধু জ্বালানির সংকট নয় — এটি মানবিক ও রাজনৈতিক সংকটেও রূপ নিতে পারে। যদি জনগণের মধ্যে হঠাৎ করে গ্যাস না পাওয়ার অভিযোগ বাড়ে, তাহলে তার সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে।

রান্নাঘর হয়ে উঠছে ভূরাজনীতির প্রতিচ্ছবি

পশ্চিম এশিয়ার উত্তেজনা, আন্তর্জাতিক কূটনীতি এবং জ্বালানি নিরাপত্তা — এই তিনটি ফ্যাক্টরের ছায়া পড়ছে ভারতের সাধারণ গৃহস্থের হেঁসেলে। এই সংকট এখন আর ভবিষ্যতের সম্ভাবনা নয় — এটি বাস্তব, এবং তা ক্রমেই ঘনিয়ে আসছে। সরকারের নীতি, কূটনৈতিক তৎপরতা এবং বিকল্প ব্যবস্থাপনার দক্ষতার উপর নির্ভর করছে, ভারত এই সংকট কতটা সফলভাবে অতিক্রম করতে পারবে।

সঙ্গে থাকুন ➥