শ্রীজিতা ঘোষ, কলকাতা: ভারতের প্রথম রিজিওনাল র্যাপিড ট্রানজিট সিস্টেম (RRTS / Rapid Rail Metro) প্রকল্পের অধীনে NCRTC সম্প্রতি একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক অর্জন করলো। নমো ভারত ট্রেন (Namo Bharat Train) সফলভাবে সরাই কালেখান (দিল্লি) থেকে মোদিপুরম (মিরাট) পর্যন্ত সম্পূর্ণ ৮২ কিলোমিটার করিডোরে ট্রায়াল রান সম্পন্ন করেছে। সময়নিষ্ঠ এই যাত্রা এক ঘন্টারও কম সময়ে সম্পন্ন হয়েছে, যা দেশের রেল পরিবহনের (India Transport) ইতিহাসে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
ট্রায়াল রানের বিশদ বিবরণ
মোট দূরত্ব: ৮২ কিমি
সময়: ১ ঘন্টারও কম
সর্বোচ্চ গতি: ১৬০ কিমি/ঘণ্টা
স্টেশন: নির্ধারিত সময়সূচী অনুযায়ী প্রতিটি স্টেশনে থেমেছে
এই ট্রায়ালের সময় ট্রেনের গতি, স্টপেজ, নিরাপত্তা ব্যবস্থা, এবং প্রযুক্তিগত ইন্টিগ্রেশন—সবই পর্যবেক্ষণ করা হয়। উল্লেখযোগ্য বিষয়, এই ট্রায়াল শুধুমাত্র নমো ভারত ট্রেনেরই নয়, বরং মিরাট মেট্রো ট্রেনগুলিও (Metro Trial Run) একই রুটে পরিচালিত হয়েছে।
প্রযুক্তির অভাবনীয় ব্যবহার
* ETCS Level-3 হাইব্রিড সিগন্যালিং সিস্টেম
এনসিআরটিসি কর্তৃক বাস্তবায়িত ETCS লেভেল-৩ হাইব্রিড সিগন্যালিং প্রযুক্তি বিশ্বে প্রথমবারের মতো এই স্তরে ব্যবহৃত হলো। এটি ট্রেন ট্র্যাকিং, গতিনিয়ন্ত্রণ এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার দিক থেকে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
* প্ল্যাটফর্ম স্ক্রিন ডোর (PSD)
যাত্রী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে করিডোরের সব স্টেশনে Platform Screen Door সফলভাবে সক্রিয় করা হয়েছে, যা বিশ্বমানের আধুনিক মেট্রো ও হাইস্পিড সিস্টেমে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
একই ট্র্যাকে দুটি পরিষেবা – ভারতের প্রথম
এই প্রকল্পে সবচেয়ে অভিনব দিক হল—একই রেলপথে দ্রুতগামী RRTS ট্রেন এবং শহরভিত্তিক মিরাট মেট্রোর পরিষেবা। এমন প্রযুক্তি-সমন্বিত পরিকল্পনা ভারতের রেল ইতিহাসে প্রথম।
* মিরাট মেট্রো দৈর্ঘ্য: ২৩ কিমি
১৮ কিমি এলিভেটেড
৫ কিমি ভূগর্ভস্থ
* স্টেশন সংখ্যা: ১৩টি
* বর্তমান ট্রায়াল পর্ব: মিরাট সাউথ থেকে মোদিপুরম ডিপো
RRTS করিডোরের অগ্রগতি
চলমান পরিষেবা: দিল্লি-দুন্ডাহেরা-মিরাট শহর – ৫৫ কিমি (১১টি স্টেশন)
চূড়ান্ত ধাপের কাজ চলছে:
৪.৫ কিমি (সরাই কালে খান -> নিউ অশোক নগর)
২৩ কিমি (মিরাট সাউথ -> মোদিপুরম)
পুরো করিডোরই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পূর্ণাঙ্গভাবে যাত্রীদের জন্য চালু করার লক্ষ্যে দ্রুতগতিতে কাজ চলছে।
ভারতের রেল ভবিষ্যতের পথে
নমো ভারত RRTS প্রকল্প ভারতের গণপরিবহনের পরিকাঠামো ও প্রযুক্তিতে এক নতুন মানদণ্ড স্থাপন করছে। গতিশীলতা, নির্ভরযোগ্যতা, এবং পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির সমন্বয়ে এই প্রকল্প ভারতের পরবর্তী মেগাসিটি কানেক্টিভিটির ভিত্তিপ্রস্তর হতে চলেছে। এই করিডোরের উদ্বোধনের ফলে দিল্লি-মিরাট রুটে যাত্রীদের যেমন সময় বাঁচবে তেমনই নিরাপত্তাও থাকবে আর যাত্রীদের কোনওরকম সমস্যার মধ্যে পড়তে হবে না। যাত্রীরা নিশ্চিন্তে ভ্রমণ করতে পারবে।
