শ্রীজিতা ঘোষ, কলকাতা: দেশজুড়ে শিক্ষার মানোন্নয়ন ও ফলাফলের বৈষম্য দূর করতে এবার বড় পদক্ষেপ নিতে চলেছে কেন্দ্র। জটিলতা কমাতে মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক স্তরে একক বোর্ড গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে সাতটি রাজ্যকে। তালিকায় রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ, অন্ধ্রপ্রদেশ, অসম, কেরল, মণিপুর, ওড়িশা এবং তেলেঙ্গানা।
উদ্বেগের জায়গা: বাড়ছে ফেলের হার
শিক্ষা মন্ত্রকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই সাত রাজ্যে গত কয়েক বছরে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় ফেল করার হার আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। ২০২৪ সালে সারা দেশে দশম শ্রেণিতে ফেল করেছে প্রায় ২২.১৭ লক্ষ ছাত্রছাত্রী। দ্বাদশ শ্রেণিতে ফেল করেছে ২০.১৬ লক্ষ। কেন্দ্রের মতে, ভিন্ন বোর্ডে ভিন্ন পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেওয়া ও মূল্যায়নই এর একটি বড় কারণ।
দেশের বোর্ড পরিকাঠামো
বর্তমানে দেশে রয়েছে ৬৬টি শিক্ষাবোর্ড, যার মধ্যে ৩টি জাতীয় স্তরের বোর্ড (যেমন: CBSE, CISCE, NIOS)। ৬৩টি রাজ্য স্তরের বোর্ড। এই রাজ্য স্তরের বোর্ডগুলোর মধ্যে মাত্র ৩৩টি বোর্ডে ৯৭% পড়ুয়া রয়েছে। বাকি ৩৩টি বোর্ডে রয়েছে মাত্র ৩%। ফলে দেশে এক ধরনের অসম ও অসামঞ্জস্যপূর্ণ শিক্ষাপরিকাঠামো তৈরি হয়েছে, যা ছাত্রছাত্রীদের মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় জটিলতা সৃষ্টি করছে।
কী বলছেন কেন্দ্রীয় আধিকারিকরা?
স্কুল শিক্ষা বিভাগের সচিব সঞ্জয় কুমার জানিয়েছেন, ‘দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির জন্য অভিন্ন বোর্ড থাকলে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন সহজতর হয়। না হলে, ফল খারাপ হচ্ছে। তাই এই সাত রাজ্যকে একক বোর্ড গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে।’
অভিন্ন বোর্ডে কী হতে পারে লাভ?
সব রাজ্যে এক ধরনের প্রশ্নপত্র ও মূল্যায়ন ব্যবস্থা। বোর্ডভেদে গুণমানের ফারাক থাকবে না। এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে শিক্ষান্তর সহজ হবে। উচ্চশিক্ষায় ভর্তির ক্ষেত্রে আরও স্বচ্ছতা ও সমতা আসবে।
তবে উঠছে প্রশ্নও
রাজ্যের শিক্ষানীতিতে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ কতটা যুক্তিযুক্ত? ভাষা, সংস্কৃতি, ও পাঠ্যক্রমের বৈচিত্র্য কীভাবে মানানসই হবে? বর্তমান বোর্ডের পরিকাঠামো কীভাবে যুক্ত হবে নতুন ব্যবস্থায়?
একক বোর্ড গঠনের প্রস্তাব নিঃসন্দেহে শিক্ষার মান উন্নয়নের লক্ষ্যেই। তবে এর বাস্তবায়ন কতটা সম্ভব এবং তা কীভাবে রাজ্যের নিজস্ব শিক্ষানীতির সঙ্গে সমন্বয় সাধন করবে, সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।