নিউজশর্ট ডেস্কঃ খেতে কে না ভালোবাসে? আর তা যদি হয় বিরিয়ানি(Biriyani) তাহলে তো আর কোনো কথাই নয়। দেশে বিরিয়ানি লাভার নেহাত কম নয়। সাদা হলুদ ভাতের সংমিশ্রণ তার মাঝখান থেকে উঁকি দিচ্ছে একটুকরো মাংস, স্থানভেদে আলু এবং ডিমও থাকে এতে। এই অতুলনীয় স্বাদের কাছে হার মানাবে দুনিয়ার সবকিছু।
যাইহোক, বিরিয়ানির এই গগনচুম্বী জনপ্রিয়তা কিন্তু আজকের নয়। এ শুরু হয়েছিলো সেই কোন মোঘল সম্রাটদের আমলে। সেখান থেকেই চলে আসে ভাত আর মাংসের সংমিশ্রণে তৈরি এই অতিব সুস্বাদু খাবার। তবে যুগে যুগে এতে এর স্বাদ এবং রন্ধনপ্রণালীতে(Cooking Process) বদলও এনেছে মানুষ। বিরিয়ানি জগতের এমনই চারটি জনপ্রিয় বিরিয়ানি সম্পর্কে জানবো আজকের এই প্রতিবেদনে।
১) কাচ্চি বিরিয়ানি : এমনিতে মাছের দেশ হলেও ঢাকার কাচ্চি বিরিয়ানি কিন্তু জগতবিখ্যাত। দেশে বিদেশে এই বিরিয়ানিতে হারিয়ে যায়নি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। এই বিরিয়ানির গল্প শুরু হয় খ্যাতনামা বাবুর্চি ফখরুদ্দীনের হাত ধরে। ফখরুদ্দিনের জন্ম চট্টগ্রামে হলেও তিনি থাকতেন ভারতের পাটনা শহরে। সেখানেই নবাবের বাবুর্চিদের কাছে শেখেন বিরিয়ানি তৈরির পদ্ধতি।
এরপর কাজের সূত্রে গিয়ে পড়েন বর্তমান বাংলাদেশের ঢাকা শহরে। সেখানেই ভিকারুন্নেসা স্কুলে নৈশপ্রহরীর কাজ নেন তিনি। সেখানেই স্কুলের সামনে বিরিয়ানির হাঁড়ি সাজিয়ে বিক্রি করতে শুরু করেন তিনি। সেই বিরিয়ানিই আজ ঢাকার সুপ্রসিদ্ধ কাচ্চি বিরিয়ানি।
দেখে নিন রেসিপি : এক কাপ পেঁয়াজ কুচিয়ে বেরেস্তা করে নিন। এরপর এক কেজি খাসির মাংস নিয়ে তাতে হাফ কাপ তেল, বেরেস্তা, এক কাপ টক দই, দু চামচ রসুন বাটা, দেড় টেবিল চামচ আদা বাটা, দুই চা চামচ লঙ্কাগুঁড়ো, এক চা চামচ হলুদ গুঁড়ো, জয়ফল বাটা এক চা চামচ, গরম মসলার গুঁড়ো এক টেবিল চামচ, জয়ত্রী খুব সামান্য, স্বাদ অনুযায়ী নুন দিয়ে দুই ঘণ্টা ম্যারিনেট করে রাখুন।
এবার হাফ কেজি পোলাওয়ের চাল ভালো করে ধুয়ে কিছুটা আটা নিয়ে মেখে আলাদা করে রেখে দিন। এরপর আলু ধুয়ে তাতে অল্প জাফরানি রং মাখিয়ে নিতে হবে। হাঁড়িতে জল ফুটিয়ে তাতে চালগুলি ফেলে দিয়ে এক চা চামচ শাহী জিরা দিয়ে দিতে হবে।
চাল পুরোপুরি সেদ্ধ হওয়ার আগেই তা নামিয়ে নিন। এবার আলুগুলি ভেজে তুলুন। এরপর আলাদা একটি পাত্রে ম্যারিনেট করা মাংস নায়ে তার উপরে আলু সাজিয়ে উপরে আধসেদ্ধ ভাত ভালো করে ছড়িয়ে নিয়ে এক টেবিল চামচ কেওড়ার জল, এক টেবিল চামচ গোলাপ জল, নুন স্বাদমতো, দুই টেবিল চামচ ঘি ও সবশেষে এক কাপ দুধ দিয়ে দিতে হবে। এবার মেখে রাখা আটা দিয়ে পাত্রের মুখে লাগিয়ে ঢাকনা লাগিয়ে দিতে হবে। গরম তাওয়ার উপরে বিরিয়ানির পাত্রটি বসিয়ে ভারি কিছু দিয়ে চাপা দিয়ে গনিনে আঁচে ১০ মিনিট এবং আঁচ কমিয়ে চল্লিশ মিনিট রান্না করলেই হয়ে যাবে স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয় ঢাকার ঐতিহ্যবাহী কাচ্চি বিরিয়ানি!
২) হায়দ্রাবাদি দম বিরিয়ানি : লোকমুখে জানা যায়, নিজাম বংশের নবাবদের রান্নাঘর থেকে তৈরি হয়েছে হায়দ্রাবাদি দম বিরিয়ানি। ভারতীয় রন্ধনপ্রণালীর সাথে মধ্যপ্রাচ্যের ছোঁয়া মিলিয়ে তৈরি করা হয় এই বিরিয়ানি। এখন মোটামুটি গোটা ভারতেই পাওয়া যায় এই বিরিয়ানি। তবে কাচ্চি বিরিয়ানি এবং হায়দ্রাবাদি বিরিয়ানির রন্ধনপ্রণালীতে অনেকটা মিল থাকলেও পার্থক্য রয়েছে এর মসলার উপকরণে।
হায়দ্রাবাদি বিরিয়ানির মাংস প্রস্তুত প্রণালি এরূপ : ৬০০ গ্রাম খাসির মাংসের জন্য তাতে এক টেবিল চামচ কাঁচা পেঁপে বাটা, দেড় টেবিল চামচ রসুন বাটা, তিন চা চামচ লঙ্কা গুঁড়ো, এক চা চামচ হলুদের গুঁড়ো, দুই টেবিল চামচ বিরিয়ানি মসলা, লবণ স্বাদ অনুযায়ী, চার/পাঁচটা লবঙ্গ, পাঁচ/ছয়টা এলাচ, এক কাপ টক দই, এক চা চামচ শাহী জিরা, তিন টেবিল চামচ কুচি করে কাটা ধনেপাতা, চারটি কাঁচা লঙ্কা, আট/দশটি পুদিনাপাতা, পেঁয়াজ বেরেস্তা এক কাপ, তিন টেবিল চামচ তেল, এক টেবিল চামচ লেবুর রস ও আদা কুচি এক চা চামচ দিয়ে ভালো করে মাখিয়ে নিতে হবে। এভাবেই ২-৩ ঘন্টা ঘেঁটে রেখে দিন।
এরপর ৫০০ গ্রাম বিরিয়ানি চাল নিয়ে সেটাকে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রেখে দিতে হবে। এরপর একটি পাত্র বসিয়ে তাতে জল ফুটিয়ে নিয়ে ৪-৫ টা ছোটো এলাচ দারচিনি, ৩-৪ টা লবঙ্গ, একটা তেজপাতা ও প্রবাদ অনুযায়ী নুন দিয়ে ভিজিয়ে রাখা চালগুলি দিয়ে দিতে হবে। মিনিট পাঁচেক হয়ে গেলেই জল ঝরিয়ে ভাতটাকে আলদা তুলে রাখতে হবে।
অপরদিকে আরেকটি পাত্রে ম্যারিনেট করা মাংস নিয়ে তার উপর পরতে পরতে ভাতটাকে দিয়ে দিতে হবে। এরপর তাতে কেওড়া জল, গোলাপ জল এবং দুধে ভিজিয়ে রাখা জাফরান দিয়ে ঢাকা দিয়ে দিতে হবে। ঢাকা দেওয়ার সময় আটা দিয়ে মুখ বন্ধ করে দিতে হবে। এরপর একটা ভারি কিছু দিয়ে মুখ বন্ধ করে মিনিট ৪০ রান্না করলেই রেডি হায়দ্রাবাদি বিরিয়ানি।
৩) অ্যারাবিয়ান কাবসা : মূলত আরবের দিকে এই বিরিয়ানির চল রয়েছে। বাদাম এবং শরবত সহযোগে মাংস এবং ভাতের সংমিশ্রণে তৈরি এই সুস্বাদু খাবারটি এসেছে ইয়েমেন থেকে।
রন্ধনপ্রণালী : দু কেজি মুরগির মাংস নিয়ে তাতে এক চা চামচ নুন, এক চা চামচ খাবার রং, এক চা চামচ রসুন বাটা, এক চা চামচ কাঁচালঙ্কা বাটা, চার টেবিল চামচ টক দই দিয়ে ভালো করে মাখিয়ে রেখে দিতে হবে। এছাড়া চারটা ছোটো এলাচ, ৪-৫ টা লবঙ্গ, দারচিনি ভালো করে গুঁড়ো করে পিষে নিতে হবে।
এরপর একটা পাত্রে হাফ কাপ তেল দিয়ে তাতে দুই টেবিল চামচ পেঁয়াজ কুচি, এক চা চামচ রসুন বাটা, এক চা চামচ আদা বাটা, চার টেবিল চামচ টমেটো বাটা, এক চা চামচ গরম মসলা, এক চা চামচ ধনে গুঁড়ো, এক চা চামচ জিরা গুঁড়ো, এক চা চামচ মিট মসলা ও দুই টেবিল চামচ সাদা গোল মরিচের গুঁড়ো দিয়ে তাতে অল্প একটু জল দিয়ে মসলা কষিয়ে নিতে হবে। এবার আগে থেকে তৈরি করা মসলা গুঁড়ো দিয়ে তাতে মাখিয়ে রাখা মুরগির মাংস দিয়ে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। মাংস ভালোভাবে কষিয়ে গেলে তাতে তিন কাপ জল দিয়ে, এক চা চামচ লেবুর খোসা কুঁচি ছড়িয়ে দিয়ে আবার ঢাকনা দিয়ে মিনিট দশেকের জন্য ঢেকে রাখতে হবে।
এদাকে ৫০০ গ্রামের মতো বাসমতি চাল ধুয়ে জলে ভিজিয়ে রেখে দিতে হবে। অপরদিকে মিনিট দশেক পর শুধু কষানো মাংসগুলিকে তুলে আলাদা করে রেখে দিয়ে বাকি মসলার মধ্যে ভিজিয়ে রাখা চালটা দিয়ে দিতে হবে। আবার ১০ মিনিটের মতো রান্না করে তার মধ্যে মাংসগুলিকে পরতে পরতে সাজিয়ে নিয়ে দমে বসাতে হবে। তৈরি হয়ে গেলেই কাজু কিশমিশ ভাজা উপরে ছড়িয়ে দিয়ে পরিবেশন করুন।
৪) সিন্ধি বিরিয়ানি : যতদূর জানা যায়, পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশ থেকে এসেছে এই খাবারটি। জানিয়ে রাখি পাকিস্তানের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী খাবার এটি। সেখানকার প্রায় সমস্ত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এই খাবার পরিবেশন করা হয়ে থাকে।
সিন্ধি বিরিয়ানি রন্ধনপ্রণালী : এর জন্য প্রয়োজন ১ কেজি মুরগির মাংস, মাঝারি আকারের দুটো আধসেদ্ধ আলু। এরপর একটা পাত্রে এক কাপ ঘি দিয়ে তাতে চার টেবিল চামচ পেঁয়াজ কুচি দিয়ে ভালো করে ভেজে নিয়ে, এক টেবিল চামচ রসুন বাঁটা, এক টেবিল চামচ আদা বাটা, গোটা গরম মসলা (চারটা এলাচ, এক চা চামচ শাহী জিরা, এক চা চামচ গোল মরিচ, পাঁচ/ছয়টা লবঙ্গ, দু’টি তারা মসলা, দুটি সাদা এলাচ) এক চা চামচ হলুদ গুঁড়া, স্বাদ অনুযায়ী নুন, দুই চা চামচ লঙ্কাগুঁড়ো সহযোগে মাংস দিয়ে ভালো করে কষিয়ে নিয়ে তাতে আগে থেকে আধসেদ্ধ করে রাখা আলু, টকদই ও জল দিয়ে পনেরো মিনিটের জন্য ঢেকে দিতে হবে।
অন্যদিকে, ৫০০ গ্রাম বাসমতি চাল ধুয়ে ভিজিয়ে রাখতে হবে এক ঘণ্টার জন্য। আলাদা একটি পাত্রে জল গরম করতে দিয়ে তাতে এক চা চামচ নুন দিয়ে চাল দিয়ে দিতে হবে। আধসেদ্ধ হয়ে গেলে নামিয়ে জল ঝরিয়ে নিতে হবে। পনের মিনিট পর চার টেবিল চামচ কুচি করে কাটা টমেটো, চার টুকরো গোল করে কাটা লেবু, দুই টেবিল চামচ পুদিনা পাতা কুঁচি ও দশ/বারোটা কাঁচা লঙ্কা দিয়ে তার ওপর আধসেদ্ধ চালগুলো দিয়ে এক চা চামচ খাবারের রঙ উপরে ছড়িয়ে দিয়ে পাঁচ মিনিট হাই ফ্লেমে ও ত্রিশ মিনিট আঁচ কমিয়ে রান্না করলেই রেডি সিন্ধি বিরিয়ানি।