মানুষের কাছে তিনি নতুন পৃথিবীর চার্লি চ্যাপলিন বলেও পরিচিত। এই খ্যাতনামা মানুষ দুটির মধ্যে একটাই মিল যে, দুজনেই কোনো কথা না বলেই নিছক বিনোদন জোগান মানুষকে। আসল চার্লি চ্যাপলিনের মঞ্চ ভিন্ন হলেও দুজনের পদ্ধতি একই, আর দুজনেই এই কাজে তুখোড়। আজ আমরা বলছি জনপ্রিয় ইউটিউবার ‘খাবি লেম’এর কথা। করোনা পরবর্তীকালে যেখানে সবাই কাজ হারিয়ে বাড়িতে বসে গেছে সেখানে ডিসলেক্সিয়া রোগে আক্রান্ত হয়েও হার মানেননি তিনি। বর্তমানে ২০ কোটির গন্ডি পেরিয়ে দৌড় লাগিয়েছে তার ইউটিউবে ফলোয়ার সংখ্যা।
খাবি মূলত একজন ইউটিউবার। মজার মজার ভিডিও বানিয়ে দর্শকদের বিনোদন দিয়ে থাকেন তিনি। তবে তার ভিডিওর বিশেষ আকর্ষণ হলো পুরো ভিডিওতে কোনো কথা বলেননা তিনি। বর্তমানে বিভিন্ন চ্যানেলে দৈনন্দিন জীবনের সহজ কাজের জন্য জটিল সব পদ্ধতি দেখানো হয়। দৈনন্দিন জীবনের এই কাজ গুলির এইসব জটিল পদ্ধতি যে কোনো মানুষের কাছে কতটা বিরক্তিকর হতে পারে তাই নিজের মুখভঙ্গিমা আর হাতের মধ্যে বুঝিয়ে দেন খাবি লেম। এর সাথে কতটা সহজ ভাবে এই কাজগুলি করা যেতে পারে সেই পদ্ধতিটিও বাতলে দেন নিজের ভিডিওতে। বর্তমানে এ রকম প্রচুর ‘লাইফ হ্যাকস্’-এর ভিডিয়োয় নেটমাধ্যম ভর্তি।
জানিয়ে রাখি বর্তমানে চার্লি দি’অ্যামেলিও, যাঁর টিকটকে অনুরাগীর সংখ্যা সর্বোচ্চ, তাঁকেও সম্প্রতি ছাপিয়ে গিয়েছেন খাবি। এইমুহুর্তে তার খ্যাতি গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়লেও শুরুটা এতোটাও সহজ ছিলো না তার জন্য। বয়স যখন মাত্র এক বছর তখনই সেনেগাল থেকে ইতালিতে স্থানান্তরিত হয় খাবির পরিবার। ডিসলেক্সিয়া রোগে আক্রান্ত হওয়ায় পড়াশোনাও বিশেষ করে উঠতে পারেননি তিনি।
বেঁচে থাকার তাগিদে কখনো হোটেলের কর্মী আবার কখনও কারখানার কর্মী হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। এক মাসে এক হাজারের বেশি মাইনে কখোনোই এসে পৌঁছায়নি খাবির হাতে। দূর্ভাগ্যবশত ২০২০ সালে করোনা অতিমারিতে সেই চাকরিটিও চলে যায় তার। সেই সময়ই ভেবে নেন জীবনে থেমে না থেকে অন্য কিছু হলেও করতে হবে তাকে। খুলে ফেলেন নিজের ইউটিউব চ্যানেল। মাত্র নয়জন ভিউয়ারস এবং দুইজন সাবস্ক্রাইবারকে নিয়ে শুরু হয় তার পথচলা। সেই থেকে নিরলস পরিশ্রম আর ধৈর্য ধরে দাঁড় করিয়েছেন নিজের ইউটিউব চ্যানেলকে।
সেখান থেকে শুরু করে আজ খাবি ইন্টারন্যাশনাল স্টার। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে আমন্ত্রিত হন তিনি। এমনকি ইডি শীরান, লিয়োনেল মেসির মতো খ্যাতনামা তারকারাও খাবির প্রশংসায় পঞ্চমুখ। জানিয়ে রাখি সেনেগাল থেকে আসায় ছিল না ইতালির নাগরিকত্ব। ২০২২ সালের ২৪ জুন তাকে ইতালির নাগরিকত্ব দেয় সরকার।