শ্রী ভট্টাচার্য, কলকাতা: ১০০ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো, পশ্চিমবঙ্গ সরকার রাজ্যজুড়ে নতুন মৌজা মানচিত্র তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করছে। এই প্রধান জরিপের লক্ষ্য হল ভূমি রেকর্ড আপডেট করা, যা ১৯২৫ সাল থেকে বঙ্গভঙ্গের আগে আপডেট করা হয়নি। জরিপটি কলকাতা ছাড়া রাজ্যের সমস্ত অঞ্চলকে অন্তর্ভুক্ত করবে, যেখানে ইতিমধ্যেই বিস্তারিত ভূমি তথ্য পাওয়া যায়। উল্লেখ্য, পশ্চিমবঙ্গে বর্তমানে ৪২,৩০২টি মৌজা রয়েছে এবং মোট ৬৮,৪৫৩টি মৌজার মানচিত্র প্রস্তুত করা হবে। এর মধ্যে জল-ভিত্তিক দ্বীপপুঞ্জ সহ মৌজার জন্য পৃথক মানচিত্র অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
কেন নতুন মৌজা মানচিত্র প্রয়োজন?
নতুন মৌজা মানচিত্রের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় কারণ গত শতাব্দীতে পশ্চিমবঙ্গের জমি উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। ১৯৪৭ সালে বঙ্গভঙ্গের পর, রাজ্যের ভূগোল পরিবর্তিত হয় এবং অনেক মানুষ পশ্চিমবঙ্গে চলে আসে। কৃষি ও নিম্নভূমির বিশাল এলাকা আবাসিক এলাকায় রূপান্তরিত হয়েছে। অনেক পঞ্চায়েত এলাকা পৌরসভা বা কর্পোরেশনেও উন্নীত করা হয়েছে। নতুন জরিপ রাজ্যজুড়ে জমির বর্তমান ধরণ এবং মালিকানা সনাক্ত করতে সহায়তা করবে। একটি মৌজা মানচিত্র ভূমি বিভাজন, সীমানা এবং মালিকানা দেখায় এবং এটি প্রশাসনিক ও আইনি উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়। এই মানচিত্র ভূমি রেকর্ড এবং বসতি পরিচালনায় সহায়তা করে।
নতুন জরিপ কীভাবে করা হবে?
নতুন মৌজার মানচিত্র প্রস্তুত করতে রাজ্য সরকার আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করবে। সঠিক তথ্য সংগ্রহের জন্য স্যাটেলাইট ছবি, জিও-ট্যাগিং ক্যামেরা এবং ড্রোন ব্যবহার করা হবে। ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর প্রতিটি মৌজার জন্য তথ্য পর্যালোচনা করবে এবং মানচিত্র চূড়ান্ত করবে।
জরিপটি তিনটি পর্যায়ে পরিচালিত হবে:
প্রথম পর্যায়: হাওড়া, হুগলি, ঝাড়গ্রাম, পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিম মেদিনীপুর এবং পূর্ব মেদিনীপুরের মতো জেলা অন্তর্ভুক্ত।
দ্বিতীয় পর্যায়: উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পশ্চিম বর্ধমান, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, নদীয়া, বীরভূম অন্তর্ভুক্ত।
তৃতীয় পর্যায়: মালদা, মুর্শিদাবাদ, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর, দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার এবং আলিপুরদুয়ার অন্তর্ভুক্ত।
নতুন মানচিত্রের সুবিধা
নতুন মৌজা মানচিত্রগুলি আপডেট এবং নির্ভুল ভূমি রেকর্ড সরবরাহ করবে। এটি সরকারকে ভূমি বন্টন পরিচালনা, মালিকানা ট্র্যাক করতে এবং ভূমি-সম্পর্কিত বিরোধগুলি আরও কার্যকরভাবে সমাধান করতে সহায়তা করবে। রাজ্যের ক্রমবর্ধমান অগ্রগতির সাথে সাথে এটি নগর পরিকল্পনা এবং উন্নয়নেও সহায়তা করবে।