শ্রী ভট্টাচার্য, কলকাতা: রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের ৫০.৩৩% পার্টনারশিপ থেকে আম্বানি পরিবার ২০২৩-২৪ সালে ৩,৩২২.৭ কোটি টাকার লভ্যাংশ পেয়েছে। মুকেশ গত চার বছর ধরে বেতন নেননি, যেখানে নীতা, আকাশ, ইশা এবং অনন্ত তাদের ভূমিকা এবং শেয়ার থেকে আয় করেন। এই পরিবারটি কেবল ব্যবসায়িক দিক দিয়েই শীর্ষস্থানীয় নয়, তাঁদের সম্পদ দেশের জিডিপির একটি বড় অংশ (Ambani Family Income)।
আম্বানি পরিবার এশিয়ার সবচেয়ে ধনী পরিবার, মোট সম্পদের পরিমাণ ৮.৪৫ লক্ষ কোটি টাকা। রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজে এই পরিবারের ৫০.৩৩% অংশীদারিত্ব প্রতি বছর বিশাল লভ্যাংশ দেয়, যার পরিমাণ ২০২৩-২৪ সালে ৩,৩২২.৭ কোটি টাকা। কোভিডের পর মুকেশ বেতন নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন, কিন্তু নীতা, আকাশ, ইশা এবং অনন্ত নিজ নিজ পদ থেকে আয় করে চলেছেন। নীতা রিলায়েন্স ফাউন্ডেশন পরিচালনা করেন, আর সন্তানরা জিও, খুচরা বিক্রেতা এবং জ্বালানি খাতে সক্রিয়। লভ্যাংশ এবং ব্যবসায়িক মুনাফা থেকে তাঁদের দৈনিক আয় লক্ষ লক্ষ টাকা।
নীতা আম্বানি: ব্যবসা ও চ্যারিটি প্রতিষ্ঠানের কুইন
নীতা আম্বানি রিলায়েন্স ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন এবং পূর্বে রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের একজন নন-এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ছিলেন। ২০২৩-২৪ সালে, তিনি সিটিং ফি হিসেবে ২ লক্ষ টাকা এবং কমিশন হিসেবে ৯৭ লক্ষ টাকা আয় করেছিলেন। তার মোট সম্পদের পরিমাণ ২,৩৪০ থেকে ২,৫১০ কোটি টাকার মধ্যে। লভ্যাংশ ভাগ থেকে তাঁর দৈনিক আয় প্রায় ২০-২৫ লক্ষ টাকা হতে পারে। নীতা মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স আইপিএল দল এবং নীতা মুকেশ আম্বানি সাংস্কৃতিক কেন্দ্রও চালু করেছিলেন। তাঁর চ্যারিটি উদ্যোগ, যেমন স্বাস্থ্য ও শিক্ষা কর্মসূচি, লক্ষ লক্ষ মানুষের কাছে পৌঁছায়। এছাড়াও, তিনি আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির প্রথম ভারতীয় মহিলা সদস্য, যা তার বিশ্বব্যাপী উপস্থিতির প্রমাণ।
আকাশ এবং ইশা: জিও এবং খুচরা বিক্রেতার নতুন নেতারা
রিলায়েন্স জিওর চেয়ারম্যান আকাশ এবং রিলায়েন্স রিটেইলের প্রধান ইশা, উভয়েরই বার্ষিক বেতন ৫.৪ কোটি টাকা এবং ৪.২ কোটি টাকা। লভ্যাংশ সহ, তাঁদের দৈনিক আয় প্রায় ১৫-২০ লক্ষ টাকা হতে পারে। আকাশের মোট সম্পদের পরিমাণ ৩,৩০০ কোটি টাকা এবং ইশার ৮০০ কোটি টাকা। দুজনেই স্ট্যানফোর্ড এবং ইয়েলের মতো শীর্ষ প্রতিষ্ঠান থেকে পড়াশোনা করেছেন এবং এখন রিলায়েন্সের টেলিকম এবং খুচরা ব্যবসাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছেন। আকাশ জিওকে ভারতের এক নম্বর মোবাইল নেটওয়ার্কে পরিণত করেছেন, অন্যদিকে ইশা গ্যাপ এবং অ্যাড-এ-মামার মতো ব্র্যান্ডের সাথে খুচরা বিক্রয়ের ক্ষেত্রে চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন।
আরও পড়ুন: পাকিস্তানের আসল নাম কী? সঠিক উত্তর জানে মাত্র ১% মানুষ
অনন্ত আম্বানি: জ্বালানি খাতের নতুন তারকা
রিলায়েন্সের জ্বালানি ব্যবসার পরিচালক অনন্ত আম্বানির বার্ষিক বেতন ৪.২ কোটি টাকা। তাঁর মোট সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৩,৩৫,৭৭০ কোটি টাকা, যা রিলায়েন্সে তাঁর ০.১২% শেয়ার থেকে আসে। লভ্যাংশ থেকে তাঁর দৈনিক আয় ১০-১৫ লক্ষ টাকা হতে পারে। অনন্ত ব্রাউন ইউনিভার্সিটি থেকে পড়াশোনা করেছেন এবং এখন সৌর এবং সবুজ শক্তির মতো নবায়নযোগ্য এনার্জি প্রকল্পের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ২০২৪ সালে তিনি রাধিকা মার্চেন্টের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন, যাকে ভারতের সবচেয়ে বড় বিবাহ অনুষ্ঠান বলা হত। অনন্তের স্বাস্থ্য যাত্রা এবং রিলায়েন্স ফাউন্ডেশনের প্রকল্পের মতো চ্যারিটি প্রতিষ্ঠানে অবদান তাঁর প্রোফাইলকে আরও শক্তিশালী করে।
লভ্যাংশের গেম চেঞ্জার
আম্বানি পরিবারের আসল আয়ের উৎস হল রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজে তাদের ৫০.৩৩% শেয়ার। ২০২৩-২৪ সালে, এই অংশীদারিত্ব ৩,৩২২.৭ কোটি টাকা লভ্যাংশ দিয়েছে, যা দৈনিক ভিত্তিতে প্রায় ৯ কোটি টাকা। মুকেশ, নীতা, আকাশ, ইশা এবং অনন্ত প্রত্যেকেরই ০.১২% শেয়ার রয়েছে, যেখানে মুকেশের মা কোকিলাবেনের ০.২৪% শেয়ার রয়েছে। এই লভ্যাংশ পরিবারের সম্পদ বৃদ্ধি করে। তাছাড়া, রিলায়েন্সের নানান ব্যবসা, যেমন পেট্রোকেমিক্যাল, টেলিকম এবং খুচরা, প্রতি বছর মুনাফা বৃদ্ধি করে। ২০২৪ সালে রিলায়েন্সের মুনাফা ছিল ৯.৫ বিলিয়ন ডলার, যা পরিবারের দৈনিক আয় আরও বৃদ্ধি করে।
