শ্রীজিতা ঘোষ, কলকাতা: এমন দৃশ্য সত্যিই বিরল! রেললাইনে (Bangladesh Railway) বড়সড় ফাটল, আর সেই ফাটল ভরাট করতে ব্যবহার করা হল পাটের বস্তা। তারপর সেই অস্থায়ী সংস্কারের ওপর দিয়েই ধীরগতিতে চালানো হল যাত্রীবোঝাই ‘ধূমকেতু এক্সপ্রেস’ (Dhumketu Express)। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি ঘটেছে বাংলাদেশের (Bangladesh) পাবনা জেলার (Pabna) ভাঙ্গুড়া উপজেলার, ঈশ্বরদী-জয়দেবপুর রেললাইনে।

মঙ্গলবার, ২৪ জুন সকাল ১০টা নাগাদ রাজশাহীগামী ‘ধূমকেতু এক্সপ্রেস’ ট্রেনটি যখন বড়াল ব্রিজ স্টেশন অতিক্রম করে, তখন রেল শ্রমিকরা লাল পতাকা দেখিয়ে ট্রেনটিকে থামিয়ে দেন। কারণ—সামনে থাকা রেললাইনের একটি অংশে ফাটল দেখা দিয়েছে, যা দিয়ে ট্রেন চালানো অত্যন্ত বিপজ্জনক।

পাটের বস্তার কামাল

রেলকর্মীরা প্রায় ঘণ্টাখানেক চেষ্টার পর লাইনের ক্ষতিগ্রস্ত অংশে পাটের বস্তা ফেলে অস্থায়ীভাবে ভরাট করেন। পরে লোকো পাইলট অত্যন্ত সতর্কভাবে, ধীরগতিতে ট্রেনটি সেই ভাঙা রেললাইন পারাপার করান। প্রায় এক ঘণ্টা ট্রেন দাঁড়িয়ে থাকায় যাত্রীদের মধ্যে ক্ষোভ ও উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হয়।

কী কারণে এমন ঘটনা ঘটে?

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ভাঙ্গুড়া রেল স্টেশনের পশ্চিম পাশে দীর্ঘদিন ধরে রেললাইন সম্প্রসারণ ও সংস্কারের কাজ চলছে। সেই কাজ চলাকালীন লাইনের একাংশ দুর্বল হয়ে পড়ে। কিন্তু সময়মতো যথাযথ মেরামত না হওয়ায় রেললাইনে এই বিপজ্জনক অবস্থা সৃষ্টি হয়।

রেল কর্তৃপক্ষ কী বলছে?

ভাঙ্গুড়া রেল স্টেশনের ইনচার্জ শফিউল আলম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ট্রেনটি কিছুক্ষণ থেমেছিল। পরে অস্থায়ীভাবে লাইনের মেরামত করে ট্রেনটি পার করানো হয়। এরপরই স্থায়ী সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে।’

বিশেষজ্ঞদের প্রতিক্রিয়া-

রেলপথ নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, এভাবে বস্তা ফেলে ট্রেন চালানো চরম ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত। ভারী ট্রেন এবং বিপুল যাত্রী নিয়ে চলাচলের সময় রেললাইন যদি যথাযথভাবে না থাকে, তাহলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

যাত্রীদের প্রতিক্রিয়া

ঘটনাটি জানাজানি হতেই যাত্রী এবং সাধারণ মানুষ সামাজিক মাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, ‘রেললাইন সংস্কারের কাজে এত অনিয়ম কেন? আর মানুষের জীবন কি এতটাই সস্তা হয়ে গেছে?’ অনেকে বলছেন, ‘লাইনের অবস্থা আগে পরীক্ষা করা যেত না?’

এই ঘটনাটি শুধু রেলওয়ের অকার্যকারিতা নয়, বরং দেশের অবকাঠামোগত দুর্বলতারও প্রতিচ্ছবি। এখনই প্রয়োজন রেলপথে সুনির্দিষ্ট তদারকি করা, আধুনিক সংস্কার প্রযুক্তির ব্যবহার এবং জরুরি পরিস্থিতির জন্য প্রশিক্ষিত টিম গঠন। না হলে বড় দুর্ঘটনা শুধুই সময়ের অপেক্ষা।