শ্রী ভট্টাচার্য, কলকাতা: বীরত্ব আত্মায় জড়িয়ে থাকে। নাম, ধর্মে নয়। প্রমাণ করে দিলেন সইদ আদিল হুসেন শাহ, কাশ্মীরের এক ঘোড় সওয়ার তিনি (Pahalgam Incident)। পহেলগাঁওয়ে বেড়াতে আসা পর্যটকদের টাট্টু ঘোড়া চড়ানোই ছিল তাঁর পেশা। এই স্থানীয় মানুষটির আত্মত্যাগ আজ অবিস্মরণীয়। খবর আসছে, মঙ্গলবার জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়র বৈসরানে সন্ত্রাসীরা যখন পর্যটকদের হত্যা শুরু করে, তখন এই সৈয়দ হুসেন শাহ তা সহ্য করতে পারেননি।
কীভাবেই বা সহ্য করবেন। কাশ্মীরি সংস্কৃতির সারাংশ এবং কাশ্মীরের আতিথেয়তার ঐতিহ্য পান করে বড় হয়েছেন যে। তিনি দেশ-বিদেশ থেকে পহেলগাঁওয়ে আগত পর্যটকদের তাঁর ঘোড়ায় চড়ার সুযোগ করে দিতেন এবং এইভাবেই জীবিকা নির্বাহ করতেন। সৈয়দ হুসেন শাহ পহেলগাঁওয়ের কাছে আশমুকামের বাসিন্দা। এদিন তিনিও পর্যটকদের সাথে বৈসরন গিয়েছিলেন। তারপরেই…..
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সন্ত্রাসীরা যখন আক্রমণ করেছিল তখন তিনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি সন্ত্রাসীদের থামিয়ে দিয়েছিলেন এবং তাঁদের নির্দোষ বলে এমনটা করতে বারণও করেন। এরা কাশ্মীরিদের অতিথি, তাঁরা কে তা বিবেচ্য নয়, কিন্তু সন্ত্রাসীরা তাঁকে সেখানে ঠেলে দেয়। শুরু হয় হত্যালীলা। সইদ আদিল হুসেন শাহ আর কিছু ভাবতে পারছিলেন না সেসময়। নিজেই তিনি একজন সন্ত্রাসীর মুখোমুখি হন এবং তাঁর রাইফেল ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু সফল হননি।
সন্ত্রাসীর রাইফেল থেকে ছোঁড়া গুলিও তাঁর শরীরে বিদ্ধ হয় এবং মাটিতে লুটিয়ে পড়ে মানবিকতার দেহ। অন্যান্য আহতদের সঙ্গে যখন তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, ততক্ষণে মারা যান শাহ। সন্ধ্যায় ময়নাতদন্তের পর তাঁর মৃতদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। গভীর রাতে তাঁকে কবর করা হয়। পরিবারের পেট চালাতেন সইদ একাই। বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা-মা, স্ত্রী এবং সন্তান রয়েছে। বলা বাহুল্য, ছেলের মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন বাবা-মা। দাবি করেছেন, ;অন্যায়ের শাস্তি হতেই হবে।’
এ মর্মান্তিক প্রসঙ্গে, সইদ আদিল হুসেন শাহের বন্ধু বিলাল বলেন, সৈয়দ হুসেন চাইলে তার জীবন বাঁচাতে পারতেন, কিন্তু পালিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে তিনি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন। তাঁর সাহসিকতা এবং ত্যাগের কারণে অনেক জীবন রক্ষা পেয়েছে। যদি তিনি সন্ত্রাসীদের সঙ্গে লড়াই না করতেন, তাহলে হয়তো আজ বৈসারণে জড়ো হওয়া সকলেই প্রাণ হারাতেন।